আজকের প্রতিবেদনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে কিভাবে রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়াবেন তা নিয়ে আলোচনা করা হলো। চলুন তাহলে জেনে নিই ডেঙ্গু জ্বরে রক্তে প্লাটিলেট বৃদ্ধিকারী খাবারগুলো কী কী।
রক্তে প্লাটিলেট দ্রুত কমে গেলে জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে এই প্লাটিলেটের মাত্রা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়। নিম্নে এমন কিছু খাবারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলো আমাদের রক্তে কমে যাওয়া প্লাটিলেটের পরিমাণ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে।
পেঁপে ও পেঁপের পাতা
মালয়েশিয়ার গবেষণাপ্রতিষ্ঠান এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলোজিতে করা একটি রিসার্চ-এ দেখা গেছে, পেঁপেপাতার রসে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর রক্তে কমে যাওয়া প্লাটিলেটের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এ ছাড়া পাকা পেঁপে্র জুসও রক্তের প্লাটিলেটের পরিমাণ খুব দ্রুত বাড়াতে পারে।
মিষ্টি কুমড়া ও কুমড়ার বীজ
মিষ্টি কুমড়ায় রয়েছে প্লাটিলেট তৈরির উপাদান ভিটামিন এ। রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ বাড়াতে তাই নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া খেতে পারেন। এ ছাড়া মিষ্টি কুমড়ার বীজেও রয়েছে প্লাটিলেট বৃদ্ধিকারী উপাদান। তাই ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার কারণে রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে গেলে রোগীকে নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া ও মিষ্টি কুমড়ার বীজ খেতে দিন।
লেবুর রসে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা রক্তের প্লাটিলেটের পরিমাণ বাড়াতে খুবই সহায়ক। এ ছাড়া এতে থাকা ভিটামিন সি রক্তে প্লাটিলেট ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধেও ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তাই ডেঙ্গু রোগীকে প্রচুর লেবুর শরবত খাওয়ানো উচিত।
আমলকী
আমলকীতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তাই যদি ডেঙ্গু রোগীরা নিয়মিত আমলকী খান তাহলে তাদের রক্তের প্লাটিলেট ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষাসহ দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
অ্যালোভেরার রস
অ্যালোভেরায় রয়েছে রক্তকে বিশুদ্ধ করার ক্ষমতা। এছাড়া রক্তে যেকোনো জীবাণুর সংক্রমণ রোধ করতেও অ্যালোভেরা কার্যকরী। তাই ডেঙ্গু রোগীর রক্তের প্লাটিলেটের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে তাকে নিয়মিত অ্যালোভেরার জুস পান করাতে পারেন।
ডালিম
অনেকের কাছে ডালিম ফলটি খুবই প্রিয়। ডালিমের রস রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। এছাড়া ডালিমের রসে থাকা ভিটামিন শরীরের দুর্বলতা দূরীকরণেও কাজ করে। তাই রোগীর রক্তে প্লাটিলেট বাড়াতে তাকে প্রত্যেকদিন ১৫০ মিলিলিটার পরিমাণ ডালিমের জুস খেতে দিন এবং এভাবে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত চালু রাখুন।
বেশি পরিমাণে পানি ও তরল খাবার
ডেঙ্গু জ্বর হলে রোগীকে প্রতিদিন কমপক্ষে আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করানো উচিত। জ্বরের কারণে রোগীর শুধুমাত্র পানি পান করতে ইচ্ছে করেনা। তাই দেহে পানির চাহিদা পূরণে রোগীকে বাড়ীতে বানানো ফলের জুস ও ডাবের পানি পান করতে দিন। বিভিন্ন ফলের রসে ভিটামিন সি রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই রোগীকে মাল্টা, কমলা, লেবু, পেয়ারা, কিউই, স্ট্রবেরি, পেঁপে, আনার বা ডালিমের জুস খেতে দিন। এসব ফলের জুস রোগীর মুখে রুচি বাড়াতেও সাহায্য করবে। ডাবের পানিতে খনিজ বা ইলেট্রোলাইটস থাকে বলে ডেঙ্গু জ্বরে এটি খুবই উপকারী।
শাক-সবজি
গাজর, শসা, টমেটোর মতো সবুজ শাক-সবজি মিশিয়ে সবজি করে রোগীকে খাওয়ানো যেতে পারে। এ সবজীতে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় দেহে পানির অভাব দূর করতে সাহায্য করে। অন্যান্য সবজির মধ্যে ব্রোকলি অন্যতম, কারণ এতে ভিটামিন কে প্রচুর পরিমাণে থাকে। তাই প্রচুর পরিমাণে ব্রোকলি খেলে তা ডেঙ্গুজনিত রক্তপাতের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
সবজির স্যুপ
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীকে প্রতিদিন বিভিন্ন প্রকারের স্যুপ, যেমন সবজির স্যুপ, টমেটোর স্যুপ, চিকেন স্যুপ বা কর্ন স্যুপ দেওয়া যেতে পারে। এতে একদিকে যেমন রোগীর দেহে পানির ঘাটটি দূর হবে অন্যদিকে তার দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টিও নিশ্চিত হবে। রোগীকে সবজির পাশাপাশি নরম ভাত বা জাউ জাতীয় খাবার দেওয়া যেতে পারে।
মসলাজাতীয় খাবার পরিত্যাগ
ডেঙ্গু রোগীর হজম শক্তি অনেকাংশে কমে যায় বলে তাদের বমি ও পেট ব্যথা হতে পারে। রোগীর যকৃতে অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি হয়ে তার রক্তে এসজিপিটির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। তাই রোগীকে বাড়তি মসলা ও চর্বি তেলযুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো। তবে তার খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে আমিষ উপাদান থাকা জরুরী। এজন্য তাকে মাছ, মুরগি, দুধ, ডিমসহ এগুলো দিয়ে তৈরি বিভিন্ন প্রকার খাবার খেতে দিতে হবে।
ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর রক্তে বেশির ভাগ সময় প্লাটিলেটের সংখ্যা দ্রুত কমে যায়। তাই রোগীর রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ বাড়ায় এমন খাবার দাবারের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। নানা ধরনের ভাইরাস জ্বরের কারণেও প্লাটিলেট কমে যেতে পারে। তাই ডেঙ্গুর লক্ষণসমূহ দেখা দেওয়া মাত্রই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হোন। প্রয়োজনে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করুন। তার খাবার দাবারে বিশেষ সচেতন হতে হবে এবং তাকে পর্যাপ্ত বিশ্রামে রাখতে হবে। এছাড়া নিয়মিত মশারী টানানো, মশার প্রজনন স্থলগুলো ধ্বংস করা ইত্যাদির মাধ্যমে এ রোগটির বিস্তার রোধ করা সম্ভব।
সূত্র : ডাক্তার ভাই