নবজাতকের খিঁচুনি ও করণীয়

শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় হবু মায়েরা শিশু প্রসব ও পরবর্তী পরিচর্যা নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছেন। এ সময় নবজাতকের প্রতি একটু বাড়তি নজর দিতে হবে। প্রসব রুমের তাপমাত্রা উষ্ণ রাখতে হবে, নূ্যনতম ২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এমনিতেই জন্মের পরপরই শিশুর দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের (৩৬.৫-৩৭.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) চেয়ে কমে যায়, চার থেকে আট ঘণ্টা পর আগের তাপমাত্রায় ফিরে আসে, প্রসব রুমের তাপমাত্রা শীতল হলে কোল্ড ইনজুরি থেকে কাঁপুনি (জিটারিনেস) হতে পারে।

নবজাতকের বেশ কয়েকটি রোগ, যেমন- গর্ভস্থ ও প্রসবকালীন শিশুর অপিজেন স্বল্পতায় ভোগা, মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ, মস্তিস্কের ইনফেকশন ইত্যাদির অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলো খিঁচুনি। শিশু এতে আক্রান্ত হলে মাসহ পরিবারের সবাই খুব উৎকণ্ঠায় থাকেন। এগুলো পর্যবেক্ষণের সময় অনেকটা খিঁচুনির মতো মনে হলেও সব কয়টি আসলে খিঁচুনি নয়। যেমন- অপরিপকস্ফ নবজাতকের স্বাভাবিক আচরণ, খিদে না থাকা সত্ত্বেও ঠোঁট নাড়িয়ে চোষার শব্দ করা এবং শিশুর কিছু কিছু সমস্যা, যেমন- শীতল আবহাওয়ার সংস্পর্শে আসা, অতিরিক্ত খিদে বা রক্তের ক্যালসিয়াম কমে গিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ থেকে হাত বা পায়ে কাঁপুনি (জিটারিনেস) হতে পারে। আক্রান্ত অঙ্গটি একটু ভাঁজ করে ধরে রাখলেই কাঁপুনি বন্ধ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ইইজি পরীক্ষায় স্বাভাবিকের কোনো তারতম্য হয় না।

সচরাচর যে টনিক-ক্লনিক খিঁচুনি দেখা যায়, নবজাতকের খিঁচুনি তার চেয়ে একটু ভিন্ন। কারণ নবজাতক বিশেষত প্রি-ম্যাচিউরড শিশুদের স্নায়ুতন্ত্র কিছুটা অপরিপকস্ফ থাকায় লক্ষণ পুরোপুরি প্রকাশিত হতে পারে না। সাধারণভাবে নবজাতকের খিঁচুনি চার ধরনের। শাটল সিজার বা সূক্ষ্ণ খিঁচুনি, ক্লনিক সিজার, টনিক সিজার ও মায়োক্লোনিক সিজার।

খিঁচুনি নবজাতকের আরও কয়েকটি গুরুতর লক্ষণের মধ্যে একটি। যার প্রায় ৫০ শতাংশই হলো সূক্ষ্ণ খিঁচুনি; যা সাধারণভাবে মা-বাবাসহ অন্যান্য সেবাদানকারীর পক্ষে নিরূপণ করা কঠিন। তাই প্রসব ও প্রসবের পূর্বাপর বিস্তারিত ইতিহাস ও শারীরিক লক্ষণ দেখে রোগ নির্ণয় ও ল্যাব টেস্ট করে খিঁচুনির অন্তর্নিহিত কারণ জানতে তথা যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হলে আক্রান্ত শিশুদের তাৎক্ষণিক খিঁচুনির চিকিৎসা দিয়ে দ্রুত হাসপাতালে রেফার করতে হবে। জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি শিশুটির অন্য কোনো গুরুতর লক্ষণ থেকে থাকলে প্রি-রেফারেল চিকিৎসা দিয়ে দ্রুত হাসপাতালে রেফার করতে হবে।

খিঁচুনি ব্যতীত নবজাতকের অন্য বিপজ্জনক লক্ষণগুলো হলো- শিশুর ঝিমিয়ে পড়া, বুকের দুধ খেতে অনীহা, ত্বক ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, জ্বর, শ্বাসের গতি যদি প্রতি মিনিটে ৬০ বা তার বেশি থাকে, বুকের খাঁচার নিচের অংশ দ্রুত ওঠানামা করলে, গলায় ঘড়ঘড় শব্দ বা শ্বাস ক্ষণিকের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। উপরে উল্লেখিত যে কোনো একটি লক্ষণ থাকলেই বুঝতে হবে শিশুটি গুরুতর অসুখে ভুগছে এবং একই নিয়মে প্রি-রেফারেল চিকিৎসা দেওয়ার পর জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে রেফার করতে হবে।

রেফারেলের আগে চিকিৎসা :শিশুকে কাত করে শুইয়ে দিতে হবে। মাংসপেশীতে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রথম ডোজ দিতে হবে। খিঁচুনি থাকলে মাংসপেশীতে তৎক্ষণাৎ ফেনোবারবিটোন দিতে হবে। খিঁচুনির অন্তর্বর্তীকালীন বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। ফ্যাসিলিটিজে প্রসব শ্রেয়, না হয়ে থাকলে হাসপাতালে নেওয়ায় সময় শিশুকে গরম রাখতে হবে, ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার খুবই উপযোগী। বিকল্প হিসেবে কয়েক লেয়ারের সুতির গরম কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে রাখতে হবে।

 

ডা. সুদেশ রক্ষিত

সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, শিশু বিভাগ, যশোর মেডিকেল কলেজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *