যেসব লক্ষণে বুঝবেন পানি খাওয়া বাড়াতে হবে

আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ, কোষ এবং টিস্যু পানির ওপর নির্ভরশীল। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি প্রবেশ না করলে দ্রুত পানিশূন্যতা দেখা দেয়। প্রচণ্ড গরম, অতিরিক্ত ঘাম কিংবা ডায়রিয়া থেকেও পানিশূন্যতা হয়ে থাকে। আমেরিকার ন্যাশনাল একাডেমি অব মেডিসিন প্রতিদিন একজন পুরুষকে ৩.৭ লিটার এবং একজন নারীকে ২.৭ লিটার পানি পান করতে পরামর্শ দিয়েছে।

আপনি পানিশূন্যতায় ভুগছেন কি না তা দুভাবে বুঝতে পারবেন। আমেরিকার ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের তথ্য মতে, আপনি যদি তৃষ্ণার্ত হন তাহলে বুঝতে হবে আপনার শরীরে পানির ঘাটতি রয়েছে। এ ছাড়া পানিশূন্যতায় আপনার প্রস্রাব হলুদ হয়ে যেতে পারে। যদি আপনি তৃষ্ণার্ত না হন এবং প্রস্রাব পরিষ্কার থাকে তাহলে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।

চলুন দেখা যাক পর্যাপ্ত পানি পানের সুবিধা এবং পানিশূন্যতায় কী কী সমস্যা হতে পারে। এতে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার পানি খাওয়ার প্রয়োজন পড়েছে।

১. পানি ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আপনি কী পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ করবেন, তা অনেক ক্ষেত্রে পানির ওপর নির্ভর করে। পর্যাপ্ত পানি পান না করলে পানিশূন্যতার কারণে আমাদের ক্ষুধার অনুভূতি হয়। অনেকেই বুঝতে পারেন না যে এমনটা পানির অভাবে ঘটেছে, খাবারের অভাবে নয়।  ফলে আমাদের মধ্যে খাওয়ার প্রচুর প্রবণতা দেখা দেয়। ফলে খাওয়ার পরিমাণ বাড়ে।  আর শরীরে প্রচুর ক্যালরি প্রবেশ করে ওজন বৃদ্ধি করে।

২. পর্যাপ্ত পানি পান করলে আমাদের শরীরের জয়েন্টগুলোতে লুব্রিকেন্টের অভাব হয় না। ফলে আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যায়াম করতে পারি। অন্যদিকে ব্যায়াম করতে গিয়ে যদি অবসাদ চলে আসে, অনিচ্ছা দেখা দেয়, তবে তা ঘটতে পারে পানির অভাবে।  শরীরে পানিশূন্যতা থাকলে অল্প ব্যায়ামেই ক্লান্তি চলে আসে।

৩. পর্যাপ্ত পানি পানে আমাদের মনোযোগ এবং স্বল্পমেয়াদি স্মৃতির উন্নতি ঘটে। সঙ্গে মেজাজও ভালো থাকে। কিন্তু দেহ পানিশূন্য হলে আপনি কাজে মনোযোগ দিতে পারবেন না। স্মৃতি স্বল্পমেয়াদি হয়ে যায়।  নানা কারণে বিরক্তিও লাগে। এ ছাড়া আপনার উদ্বেগ বাড়বে। কাজেই এমন ঘটনা ঘটলে পানি খাওয়ায় মন দিন।

৪. দেহে পর্যাপ্ত পানি থাকলে হৃৎপিণ্ডে সহজেই রক্তনালির মাধ্যমে পেশিগুলোতে রক্ত পৌঁছে দিতে পারে। অন্যথায় রক্তপ্রবাহ অব্যাহত রাখতে হৃদযন্ত্রকে ব্যাপক পেরেশানি নিতে হয়। তাই আপনি অল্পতেই হাঁপিয়ে উঠছেন বলে মনে হলে পানি পান করুন।

৫. পর্যাপ্ত পানি আপনার মূত্রনালিকে সুস্থ রাখবে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমাবে। পানিশূন্যতার কারণে প্রস্রাবে থাকা লবণ এবং খনিজগুলো কঠিন হয়ে কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে। প্রস্রাবের পরিমাণ একেবারে কমে গলে বা রং বদলালে পানি খাওয়া বাড়িয়ে দিন।

৬. হজমপ্রক্রিয়া সহজ রাখতে পানির ভূমিকা অপরিসীম। পানির অভাবে শরীর মল থেকে পানি শুষে নেয়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। অর্থাৎ কোষ্ঠকাঠিন্য ঠিক হবে পানি খাওয়া বাড়ালে।

৭. মাথা ব্যথার সমস্যায় পর্যাপ্ত পানি পান করলে ব্যথার সময় এবং তীব্রতা হ্রাস পায়। যারা মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের পানিশূন্যতা হলে সমস্যা আরো বেড়ে যায়।

পানি পানের পাশাপাশি আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে বিভিন্ন পানিযুক্ত খাবার খেতে হবে। শসা, আপেল, কাঁচা ব্রকলি, গাজর এবং তরমুজ খেলে শরীরে প্রচুর পানি প্রবেশ করে। এ ছাড়া বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় সঙ্গে পানির বোতল রাখতে পারেন। প্রতিটি খাবারের সঙ্গে পানি পান করার চেষ্টা করুন। সঙ্গে প্রচুর ফল এবং সবজি খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।

তবে এটিও খেয়াল রাখতে হবে, যাতে আপনি অতিরিক্ত পানি পান না করে ফেলেন। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। অতিরিক্ত পানিতে শরীর ঘাম বা প্রস্রাবের সঙ্গে সেটি বের করতে পারে না। ফলে শরীরে লবণের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং কিডনির ওপর চাপ পড়তে পারে।

সূত্র : সিএনএন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *