শরীরে জিংকের কাজ কী? ঘাটতি পূরণে যা করণীয়

খাদ্যের একটি খনিজ উপাদান হলো জিংক। এটি শরীরের জন্য খুব প্রয়োজনীয় এক উপাদান, যা প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা বা ইমিউনিটিকে জোরদার করে। এ কারণে দেখা গেছে, যাদের জিংকের ঘাটতি রয়েছে তারা সহজেই নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়।

জিংকের কাজ কী?

এটি ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে। শৈশবকালীন শারীরিক বৃদ্ধিতে জিংকের ভূমিকা রয়েছে। এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে শরীরের জন্য ক্ষতিকর মুক্ত মৌলের বিরুদ্ধে লড়াই করে। শরীরের প্রায় ৩০০ ধরনের উৎসচক বা এনজাইমের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান জিংক। এসব উৎসচক শরীরের বিপাক, হজম, স্নায়বিক কার্যক্রমসহ অসংখ্য কাজ সম্পাদন করে।

আমাদের স্বাদ ও ঘ্রাণের অনুভূতি দেয় জিংক। এটি হাড় গঠনে অংশ নেয়। এর অভাবে হাড়ক্ষয়ও হয়ে থাকে। জিংকের অভাবে স্নায়ুবৈকল্য হতে পারে।

জিংক উপাদানটি শরীরে উৎপন্ন হয় না, শরীরে সঞ্চিতও থাকে না। প্রতিদিনের খাদ্যে এটির সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি।
জিংকের ঘাটতি থাকার লক্ষণ

জিংকের অভাবে শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। এগুলো হলো—

* স্বাদ ও ঘ্রাণের অনুভব হ্রাস

* ক্ষুধামন্দা বা অরুচি

* হতাশা ভাব

* ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া

* ডায়রিয়া

* চুল ঝরে পড়া ইত্যাদি।

অতিরিক্ত গ্রহণের বিপদ

তবে অতিরিক্ত জিংক গ্রহণ করলে শরীরে বিপদ নেমে আসতে পারে।

জিংকের আধিক্য কপার শোষণে বাধা দেয়। এর ফলে অ্যানিমিয়া হতে পারে। এর পাশাপাশি দেখা দিতে পারে— 

* বমি ভাব, বমি

* অরুচি

* পেটে ব্যথা

* মাথা ব্যথা

* পাতলা পায়খানা

কাদের শরীরে ঘটতি বেশি?

খাদ্যে পর্যাপ্ত উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও জিংকের ঘাটতি দেখা দিতে পারে কিছু মানুষের। জিংকের ঘটতি দেখা দেওয়ার ঝুঁকিতে আছেন যাঁরা—

* যাদের অন্ত্রনালির রোগ যেমন- ক্রোনস নামক রোগ রয়েছে

* নিরামিষভোজী

* গর্ভবতী এবং দুগ্ধদায়ী মা

* শুধু বুকের দুধের ওপর নির্ভরশীল ছয় মাসের অধিক বয়সী শিশু

* ক্রনিক কিডনি কিংবা লিভারের রোগী

* সিকল সেল অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত রোগী

* অ্যালকোহলসেবী

* অপুষ্টি আক্রান্ত ব্যক্তি

জিংকের উৎস

জিংকের অন্যতম প্রধান উৎস হলো সামুদ্রিক মাছ ও অন্যান্য খাবার। যেমন কাঁকড়া, ঝিনুক, চিংড়ি, মাংস, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত খাবার, ডিম, বাদাম, শিম, মাশরুম ইত্যাদি। শাক-সবজিতে বিদ্যমান জিংক শরীর সহজে হজম করতে পারে না, সে জন্য নিরামিষভোজীদের অতিরিক্ত জিংক গ্রহণ করা দরকার। একজন পুরুষ ও নারীর দৈনিক যথাক্রমে ১১ ও ৮ মিলিগ্রাম জিংক প্রয়োজন। গর্ভবতী এবং দুগ্ধদায়ী মায়েদের চাহিদা আরো বেশি।

খাদ্যে প্রাপ্ত জিংকের পাশাপাশি কখনো প্রয়োজন পড়ে অতিরিক্ত সরবরাহের। সে ক্ষেত্রে দেহের চাহিদা পূরণের জন্য জিংক ট্যাবলেট, সিরাপ অথবা লজেন্স দেওয়া যেতে পারে।

পরামর্শ দিয়েছেন

লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট

সিএমএইচ, বরিশাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *