শিশুর পেটের গ্যাস

0
163
Spread the love

শিশুর পেটে গ্যাস হলে মায়েদের উদ্বিগ্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। তারা তখন খুব চিন্তায় পড়ে যান তার বাচ্চার কি করলে ভাল লাগবে। কান্নাকাটি একটু থেমে যাবে কিংবা কোন্ ডাক্তারের কাছে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার অনেক মায়েদের বেলায় বলতে শোনা যায় যে বাচ্চার পেটে বাতাস লেগেছে তাই পেট ফুলে গেছে বা কোন খাবার খেতে পারছে না দুধে বাতাস লেগেছে যার কারণে দুধ মুখে দিলে খেতে পারছে না বমি করে  ফেলে দিচ্ছে। তারা মসজিদের হুজুরের পানি পড়ার জন্য ছোটাছুটি করে।
আসল কথা হলো পেটে গ্যাস বাচ্চাদেরও হয় আবার বড়দেরও হয়। বাচ্চারা বলতে পারে না যে তাদের  কেমন লাগছে আর তাই আমরা বুঝতেও পারি না যেমন ছোট শিশুর জ্বর হলে ঠা-া লাগলে আমরা সহজেই বুঝতে পারি কিন্তু গ্যাস হয়েছে বা পেটের ব্যথায়  বাচ্চা কান্নাকাটি করছে সেটা আমরা সহজেই বুঝতে পারি না।
বাচ্চার পেটে গ্যাস হওয়ার প্রথম কারণটা হচ্ছে- খাওয়ার ভুল পদ্ধতি, বদহজম হয়ে পেটে গ্যাস তৈরি হওয়া যার দরুন ছোট্ট শিশুদের  পেট ব্যথা করে। নবজাতক শিশুর বেলায় গ্যাস সৃষ্টি হয় মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার সময়। কারণ বাচ্চা যখন দুধ পান করেন তখন হয়ত দুধের নিপিলটা মুখে পুরোটা না একটু ফাঁকা থাকে আর এতেই বাতাস ঢুকে পেটে গ্যাস হয়। আবার মায়েদের দুধ ভেঙ্গে যাওয়া  অর্থাৎ মায়ের দুধের ভেতর লেকটোস জাতীয় একটি পদার্থ থাকে সেটা ভেঙ্গেও গ্যাস তৈরি হয়। এতে পায়খানাটাও নরম হয়। আবার ফিডারে দুধ পান করার সময় কিছু বাতাস শিশুর পেটে প্রবেশ করে এতেও গ্যাস হয়। ঢোক গেলার সময়ে পেটে বাতাস প্রবেশ করে এই রকম বিভিন্ন প্রকারের নবজাতক শিশুর পেটে গ্যাস হতে পারে।
৫-৬ মাস বয়সের শিশুদের বেলায় বুকের দুধের পাশাপাশি একটু বাড়তি খাবার দেয়া হয়। এতে খাবারের পরিবর্তনের কারণেও অনেক সময় পেটে গ্যাস হতে পারে।  ৫-৬ মাসের শিশুদের বাড়তি খাবারে বিভিন্ন প্রকার ফল/ শাক-সবজি দিয়ে খিচুড়ি এবং মাছ/ মাংস ও ডিম দেয়া হয়ে থাকে। অনেক সময় খিচুড়িতে শাকের পরিমাণ বেশি হলে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার ডালেও  গ্যাস হতে পারে এমনকি সিদ্ধ ডিমেও গ্যাস হতে পারে। তাই মায়েদের উচিত বাড়তি খাবার দেয়ার সময় খাবারের দিকে নজর রাখা যেমন- খিচুড়িতে শাক ও ডালের পরিমাণ কম দিয়ে কাঁচা কলা বা কাঁচা পেঁপের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া।
আর তাছাড়া নবজাতক শিশুর জন্য কিছু হাল্কা ব্যায়াম আছে যেমন এক হাত/ এক পা ধরে পা’টা মাথার সঙ্গে আর হাতটা পায়ের কাছে আনতে হবে এভাবে দুই থেকে চারবার করলেই হবে এতে পেটে চাপ পড়ে কিছুটা গ্যাস কমে যাবে।
নবজাতক শিশুর পেটের গ্যাস বা বাতাস কমানোর জন্য খাওয়ার পর পরই বাতাস বের করে দিতে হবে। দুধ বুকের হোক বা ফিডারের হোক নিপলের দিকে খেলাল রাখতে হবে যেন শিশুর মুখের চারপাশে ফাঁকা না তাকে অর্থাৎ বাতাস না ঢুকতে পারে আর খাওয়ানোর পর মায়ের ঘাড়ের বাঁ পাশে ডান পাশে নিয়ে শিশুর পিঠের ওপর হাত নিচের দিকে হাত দিয়ে নামিয়ে দিতে হবে যাতে বাতাস বের হয়ে যায়। অনেক সময় আমরা দেখি ড্রপের  সাহায্যে বাতাস বের করা যেতে পারে।

খাওয়ার ভুল পদ্ধতির কারণে জোর করে খেলে বা বেশি খেলে বদহজম এর কারণে পেটে গ্যাস জমে আর এতে করে অনেক সময় বাচ্চাকে বমি ও করতে দেখা যায় এবং পেটের ব্যথায় বাচ্চাকে কান্না করতে ও নবজাতক শিশুকে ঢেকুর  তুলতে দেখা যায়। বাচ্চার পেটে গ্যাস জমে গেলে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যেন ঘন ঘন বমি না করে বমির পরিমাণ বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মায়েরা বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় সতর্ক থাকুন যেন বাতাস শিশুর পেটে না  ঢোকে। আর ৫-৬ মাস বয়সের শিশুদের বাড়তি খাবার দেয়ার সময় যে খাবারের গ্যাস হতে পারে তার পরিমাণ কমিয়ে দিন আর ভাত বা খিচুড়ি যেন শক্ত না হয় একটু নরম করে দিন ফলমূলটাকে মা চিবিয়ে অথবা একটু জুস করে খাওয়ান এতে করে হজমে সুবিধা হবে এবং শিশুর পেটে গ্যাসের  প্রবণতা অনেকটাই কমে যাবে।

লেখক :

ডা. এম. এ. কে আজাদ চৌধুরী

প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান নবজাতক বিভাগ
ঢাকা শিশু হাসপাতাল

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে