শীতে রোগমুক্ত থাকতে কী খাবেন?

0
280
Spread the love

শীতের রোগের প্রকোপ অনেক বেশি থাকে। ঠান্ডা, শর্দি, কাশি, চুলকানো, জ্বরসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। অনেকের পেটের সমস্যাও দেখা দেয়।

শীতে মৌসুমি শাকসবজি বা ফল গ্রহণের মাধ্যমে সহজেই শরীরের চাহিদা মোতাবেক পুষ্টি উপাদান, বিশেষ করে ভিটামিন ও মিনারেলসের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। অন্য সময়ের চেয়ে শীতকালের শাকসবজি এবং ফলের স্বাদ এবং পুষ্টি গুণাগুণও বেশি থাকে।

শীতে রোগমুক্ত থাকার খাবার নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন কিংসটন হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মকর্তা নাজিয়া আফরিন।

শীতে বাজারে দেখা যায় ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, লালশাক, পালংশাক, মুলা, শালগম, শিম, টমেটো, পেঁয়াজ পাতা, লাউ, ব্রোকলি, মটরশুঁটি, গাজর, ধনিয়াপাতা, লাউ ইত্যাদি। এসবে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, এন্টিঅক্সিডেন্ট, আঁশ ও ভিটামিন বিদ্যমান। অস্থিক্ষয় রোধে ও শরীরে রক্তকণিকা বা প্ল্যাটিলেট গঠনেও শীতকালীন শাকসবজির ভূমিকা অপরিসীম। ভিটামিন-সি, এ এবং ই-এর ঘাটতি পূরণ করে এসব ফল ও শাকসবজি। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন-ই; যা স্থুলতার সমস্যা থেকে রক্ষা করে ও চুলপড়া কমায়।

* ফুলকপি ও বাঁধাকপি : ফুলকপিতে রয়েছে ভিটামিন-এ, বি, সি, ক্যালসিয়াম, ফলিক এসিড ও পানি। এ ছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও সালফার রয়েছে। ফুলকপিতে এমন কিছু উপাদান আছে, যা কিডনির পাথর ও ক্যানসার নিরাময়ে ভূমিকা রাখতে পারে। এতে কোনো চর্বির মাত্রা নেই। তাই এটি কোলেস্টেরলমুক্ত, যা শরীরের বৃদ্ধি ও বর্ধনে বিশেষ উপযোগী। পাশাপাশি বাঁধাকপিতে রয়েছে ভিটামিন-সি ও ফাইবার। শরীরের হাড় শক্ত ও মজবুত রাখতে এবং ওজন কমাতে এর জুড়ি নেই। এটি আলসার প্রতিরোধে ভালো কাজ করে।

* ব্রোকলি : ব্রোকলিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ক্যালসিয়াম বিদ্যমান। এটি অত্যন্ত উপাদেয়, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি সবজি। এটি চোখের নানাবিধ রোগ, রাতকানা, অস্থি বিকৃতি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে।

* গাজর : গাজর অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও আঁশসমৃদ্ধ শীতকালীন সবজি, যা প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। তরকারি বা সালাদ হিসাবে এই সবজি খাওয়া হয়। এতে আছে বিটা ক্যারোটিন যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। অন্যান্য উপাদানগুলো অন্ত্রের ক্যানসার প্রতিরোধ করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। গাজরে উপস্থিত ক্যারোটিনয়েড ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। ত্বকের খসখসে ও রোদে পোড়া ভাব দূর করে।

* জলপাই : শীতের একটি উপকারী ফল জলপাই। এতে আছে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’, ‘ই’, লৌহ ও অসম্পৃক্ত চর্বি। ফলে এটি স্থূলতা কমায়, শরীরে উপকারী চর্বি বাড়ায়। বাতের ব্যথা, হাঁপানি উপশমে জলপাই কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এছাড়া টক জাতীয় এ ফলে রয়েছে ভিটামিন এ, সি এবং ই। এ ভিটামিনগুলো দেহের রোগজীবাণু ধ্বংস করে, উচ্চরক্তচাপ কমায়, রক্তে চর্বি জমে যাওয়ার প্রবণতা হ্রাস করে হৃৎপিণ্ডের রক্তপ্রবাহ ভালো রাখে। এতে হৃৎপিণ্ড থেকে বেশি পরিশোধিত রক্ত মস্তিষ্কে পৌঁছায়, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ে। জলপাইয়ের খোসায় রয়েছে আঁশ জাতীয় উপাদান। এ আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়, পাকস্থলির ক্যানসার দূর করতে ভূমিকা রাখে।

* ধনিয়াপাতা : ধনিয়াপাতা এখন সারা বছর পাওয়া গেলেও মূলত এটি শীতকালীন সবজি। এটি সরাসরি সালাদ হিসাবে এবং রান্না করে দু’ভাবেই খাওয়া যায়। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-সি, এ, কে ও ফলিক এসিড রয়েছে, যা আমাদের ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয়। ধনিয়াপাতার ভিটামিনগুলো আমাদের ত্বকে প্রতিদিনের পুষ্টি জোগায়, চুলের ক্ষয়রোধ করে, হাড়ের ভঙ্গুরতা দূর করে এবং মুখের ভেতরের নরম অংশগুলোকে রক্ষা করে।

* টমেটো : ক্যালরিতে ভরপুর টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, যা মানবদেহের হাড় ও দাঁত গঠনে ভূমিকা রাখে। তাছাড়া ভিটামিন-সি’র অভাবজনিত স্কার্ভি ও চর্মরোগ প্রতিরোধে টমেটো বেশ কার্যকরী। এতে বিদ্যমান অন্য এক উপাদান হলো লাইকোপেন, যা ক্যানসার প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে। টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট, যা প্রকৃতির আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির বিরুদ্ধে কাজ করে।

* মটরশুঁটি : শীতকালীন সবজি মটরশুঁটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি; প্রতি ১০০ গ্রামে পাওয়া যায় ১২৫ কিলোক্যালরি। এটি উদ্ভিজ আমিষের একটি বড় উৎস।

* শিম : শিমে আমিষ ছাড়াও স্নেহ ও ফাইবার থাকে। এর আঁশ খাবার পরিপাকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য অনেকাংশে দূর করে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করে পাকস্থলী ও প্লিহার শক্তি বাড়ায়। লিউকেরিয়াসহ মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে, শিশুদের অপুষ্টি দূর করে।

* পালংশাক : পালংশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, আয়রন ও ফলিক এসিড, যা আমাদের দেহের জন্য জরুরি। এটি আমাদের শরীরে আর্থাইটিস, অস্টিওপোরোসিস ছাড়াও হৃদরোগ ও কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে।

* মূলা : বিভিন্ন ক্যানসার, কিডনি ও পিত্তথলিতে পাথর তৈরি প্রতিরোধে সাহায্য করে মুলা। এর মধ্যে থাকা বিটা-ক্যারোটিন হৃদরোগের ঝুঁকি দূর করে। শরীরের ওজন হ্রাস করে আলসার ও বদহজম দূর করতে সাহায্য করে।

* লাউ : লাউয়ে প্রচুর পানি থাকে, যা দেহের পানির পরিমাণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এটি ডায়রিয়াজনিত পানিশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। লাউ খেলে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে। প্রস্রাবের সংক্রমণজনিত সমস্যা দূর হয়। কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য এটি আদর্শ সবজি। নিদ্রাহীনতা দূর করে এবং ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস, যা দেহের ঘামজনিত লবণের ঘাটতি দূর করে। দাঁত ও হাড়কে মজবুত করে। চুলের গোড়া শক্ত করে এবং চুল পেকে যাওয়ার হার কমায়। লাউ কোষ্ঠকাঠিন্য, অর্শ, পেট ফাঁপা প্রতিরোধ করে।

* শীতকালীন মৌসুমি ফল : শীত মৌসুমে বাজারে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন জাতের কুল বা বরই, কমলালেবু, আমলকী, আপেল, সফেদা, ডালিম, পেয়ারা ইত্যাদি পাওয়া যায়। এসব ফলে আছে ভিটামিন-এ, সি ও ই, মিনারেল, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার। এসব মৌসুমি ফল কেবল মুখরোচকই নয়, এতে থাকা নানা ভিটামিন এবং মিনারেলস দাঁত, মাড়ি মজবুত করতে যেমন সাহায্য করে তেমনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এসব ফল সুস্থতার পাশাপাশি সজীবতা, সৌন্দর্য ও তারুণ্য ধরে রাখে। শরীরে আঁশের ঘাটতি মেটাতে ও ভিটামিন ‘সি’র জোগান দিতে শীতের সময় বেশি করে টক জাতীয় ফল খাওয়া ভালো। তবে খাবার আগে অবশ্যই ফল ধুয়ে বা পরিষ্কার করে নিতে হবে।

* পানি ও তরল জাতীয় খাবার : শীতকালে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি, তরল জাতীয় খাবার, স্যুপ, গরম ডাল, মিক্সড ফলের জুস এ খাবারগুলো গ্রহণ করলে শরীরের ভেতরে আরাম অনুভূত হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে