সিজারিয়ান কমাতে কাজ করছে আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতাল

বাংলাদেশে মায়েদের স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের তুলনায় সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের হার অনেক বেশী। অত্যন্ত আশংকাজনকভাবে এই হার বাড়ছে এবং সাধারন মানুষ অনেক আর্থিক সঙ্কটের মধ্যেও তার খরচ বহন করছেন। ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেট এর তথ্যে জানা যায় বাংলাদেশে ফ্যাসিরিটি বেইজড সিজারিয়ান সেকশনের হার অন্যান্য দেশের তুলনায় সর্বোচ্চ ৬৭ শতাংশ। ক্রমাগত এই হার বেরেই চলেছে। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও ধরে নেয়া যায় এই হার বর্তমানে ৮০ শতাংশের বেশি।

ঢাকার অদূরে আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতাল একটি সম্পূর্ণ অলাভজনক হাসপাতাল। এই হাসপাতালটি দীর্ঘদিন যাবত দরিদ্র নারী ও শিশুদের অত্যান্ত কম খরচে বিভিন্ন প্রকার চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। প্রখ্যাত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও ন্যাশনাল প্রফেসর ডা. এম কিউ কে তালুকদার প্রতিষ্ঠানটির ট্রাষ্টিবোর্ডের চেয়ারম্যান।

হাসপাতালটি সিজারিয়ান অপারেশন কমিয়ে আনার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন যাবত কাজ করে যাচ্ছে। বছরে গড়ে প্রায় ২ হাজার ডেলিভারির মধ্যে বিগত ২০১৭ সাল পর্যন্ত সিজারিয়ান ডেলিভারির হার ছিল ৫৮ শতাংশ-৭৩ শতাংশ পর্যন্ত। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে হাসপাতালের নিজস্ব স্টাডি প্রটোকলে ১১ টি ইটারভেনশান, প্রসূতি চিকিৎসক ও নার্সদের বিশেষ প্রশিক্ষণ ও মায়েদের কাউন্সিলিং-এর মাধ্যমে ২০১৬ সালের ৬৮ শতাংশ থেকে ২০১৮ সালে ৪২ শতাংশে নেমে আসে। এই পরিসংখ্যান ‘বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’ কে অনুপ্রানিত করে।

তাই সিজারিয়ান অপারেশন হারকে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ‘বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’ এই হাসপাতালটিকে প্রধান পার্টনার করে ২ বছর মেয়াদী একটি রিসার্চ প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছেন যা ২০২১ সালের আগষ্ট মাসে শুরু হয়েছিল। আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালের সাথে আরও ৭ টি হাসপাতালকে সহ-পার্টনার হিসাবে সংযুক্ত করে মোট ৮ টি হাসপাতাল গত বছর আগষ্ট মাস থেকে প্রজেক্টটির কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে ‘বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’-এর প্রকল্পটি ১৩ টি ইনটারভেনশান নিয়ে কাজ করছে ।

মাতৃস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জন সচেতনতার স্বার্থে এই প্রজেক্টের বিগত ১ বছর কার্যক্রম পালন করছে। প্রথম বছরে প্রসূতি ডাক্তার ও নার্সদের জন্য বিশেষ ট্রেইনিং ম্যানুয়্যাল তৈরি করা হয়েছে। তাদেরকে পাশাপাশি ১৩ টি ইনটারভেনশন সহ রোগীর পাশে থেকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রতিাট পার্টনার হাসপাতালে সিটিজি ম্যাশিন, ডপলার ম্যাশিন, ভেন্টোজ ম্যাশিন, ম্যানিকুইন, লেবার বেড ও ওয়র্মারসহ স্বাভাবিক প্রসবের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে।

এক বছরের কার্যক্রমে স্বাভাবিক সন্তান প্রসবকে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং প্রায় সবগুলি পার্টনার হাসপাতালেই সিজারিয়ান অপারেশনের প্রবনতা নিন্মুমখী দেখা যাচ্ছে। ২০২২ সালের সেপ্টম্বর মাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সিজারিয়ান অপারেশনের হার বর্তমানে ৩৭ শতাংশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *