শিশুদের ত্বকের সমস্যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের বড়দের মতো শিশুদেরও ত্বকে নানা ধরনের সমস্যা দেখা যায়। যেমন- ত্বকে চুলকানি হওয়া, র্যাশ ওঠা, ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস, সেবোরিক ডার্মাটাইটিস ইত্যাদি হতে পারে। এই চর্মজনিত রোগগুলো শিশুর হলে চিন্তার বিশেষ কোনো কারণ নেই। যদি সচেতন হন তাহলে বাসায় থেকেও অনেক সময় কিছু কিছু সমস্যা সমাধান করতে পারেন। আবার বেশি সমস্যা হলে নিকটস্ত হাসপাতাল বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
অ্যাটপিক ডার্মাটাইটিস বা অতিশুষ্কতা
শুষ্ক বা রুক্ষ আবহাওয়ার জন্য শিশুদের ত্বক অনেক সময় বেশ শুষ্ক হয়ে যায়। এরসঙ্গে একজিমার মতো সমস্যাও হতে পারে। শিশু বারবার হাঁচি দিতে পারে, যাকে বলা হয় অ্যালার্জিক রাইনাইটিস। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় পরিবারে কারও যদি অ্যাজমা থাকে, তাহলে শিশুদের মধ্যে চলে আসতে পারে। এ অবস্থায় শিশুকে নিয়মিত নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল দিয়ে ম্যাসাজ করুন।
এছাড়া ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুণ। প্রতিদিন শিশুকে কুসুম গরম পানিতে গোসল করান। যদি শিশুর সারা গায়ে চুলকানি হয় তাহলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
ইনফ্যানটাইল সেবোরিক ডার্মাটাইটিস
যেসব শিশুদের বয়স এক বছরেরও কম তাদের ক্ষেত্রে এই রোগ বেশি হয়। প্রায় ১০-১২% শিশুদের মধ্যে এই সমস্যা দেখা দেয়। এই চর্মরোগ হলে শিশুদের মাথায় শিশুদের মাথায় খুব খুশকি হয়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে যেমন গলায়, বগলে, থাইয়ের খাঁজে, ন্যাপি এরিয়ায় লাল লাল দাগ হয়, চামড়া উঠতে শুরু করে এবং অনেক সময় রস বের হতে থাকে। এছাড়া চোখের পাতায়, চোখের পালকে স্কেলস হতে পারে। পরিত্রাণ পেতে নিয়মিত নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল বাচ্চার চুলে লাগান। ইহা ২-৩ মাস মাথায় তেল লাগাতে হবে। এছাড়া কিটোকোনিজল বা জিংক পাইরেথিওন সমৃদ্ধ শ্যাম্পু দিয়ে বা চিকিৎসকের পরামর্শে সপ্তাহে ২-৩ বার শিশুর চুল পরিষ্কার করুন। দুই থেকে তিন মাস এই চিকিৎসা করতে হবে। দেখা যায় এই ডার্মাটাইটিসে শিশুর ত্বকে ইরিটেশন হয় তাই প্রায়ই আক্রান্ত শিশুর চুলকানি বেড়ে যায় ও চুলকাতে থাকে। বেশি সমস্যা হলে দ্রুত ডাক্তার দেখাতে হবে। ফলে চামড়া উঠে যাওয়াটা স্বাভাবিক। পরিত্রাণে শিশুর গায়ে নারিকেল বা অলিভওয়েল ভালো করে মাখান ও ম্যাসাজ করুন। এবং বাচ্চাকে লিকুইড সোপ বা পিইচ মাত্রার সমান লাগান।
সদ্য নবজাতকের ত্বকের যত্নে করণীয়
– সদ্য নবজাতকের ত্বকে ঠবৎহরী নামক একটি পদার্থ লাগানো থাকে, যা দেখতে অনেকটা ময়লা বা আশের মতো, এটি শরীরের তাপ, পানি ধরে রাখে এবং রোগ জীবানু ত্বকে বসতে দেয় না; তাই এটি একদম সরিয়ে ফেলা উচিত নয়।
– শিশুর ত্বকে ঊংংবহঃরধষ ঙরষ থাকে, যা ত্বককে সুন্দর, মসৃন ও রোগমুক্ত রাখে; তাই নবজাতককে সপ্তাহে ১ বার বা তার চেয়েও কম গোসল করানো ভালো
– জোরে ঘসা দিয়ে গোসল করানো যাবে না
– সফ্ট কাপড় পরাতে হবে
– মুখ বাদে সারা শরীর সফ্ট টাওয়েল বা সফ্ট কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে
– ঘন ঘন ডায়াপার চেক করুন
–ভেজা ডায়াপার দ্রুত সরিয়ে ফেলুন
– ডায়াপার এরিয়া ঘষে পরিষ্কার করবেন না, সফ্ট কাপড় বা তুলায় পানি নিয়ে স্পন্জ করে মুছে ফেলুন
– হালকা ম্যাসাজ করতে পারেন
– নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েল অথবা সানফ্লাওয়ার অয়েল মাখতে পারেন
– ডায়াপার এরিয়াতে বেবী পাউডার লাগাতে পারেন
– সফ্ট ডিটারজেন্ট দিয়ে নবজাতকের কাপড় ধুবেন (কখনোই বড়দের কাপড়ের সঙ্গে একত্রে ধুবেন না)।
যা করতে মানা
শিশুকে কখনো সরিষার তেল মাখাবেন না। সরিষার তেল থেকে প্রদাহ হতে পারে। সরিষার তেল মাখিয়ে বাচ্চাকে রোদে রাখার যে প্রচলিত রীতি আছে তা একেবারেই অনুচিত। শিশুর ব্যবহারের সাবান এবং শ্যাম্পু সম্বন্ধে সচেতন থাকুন। আর শিশুর ত্বকে কিছু দেখা দিলে মোটেও অবহেলা করবেন না।
লেখক:
ডা. এসএম বখতিয়ার কামাল
চর্ম, যৌন, অ্যালার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ (সাবেক), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
কামাল হেয়ার অ্যান্ড স্কিন সেন্টার
ফার্মগেট, গ্রীন রোড, ঢাকা।