দিনদিন পাউরুটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। দোকানের তাকে প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে হরেক রকমের পাউরুটি। সকাল বেলা রুটির সাথে মাখন বা ডিম দিয়ে দিন শুরু করা অনেক স্বাস্থ্যকর বলে বিবেচিত হচ্ছে। আমরা অনেকেই এই পরিশোধিত আটায় তৈরি খাবারের উপর আসক্ত হয়ে পড়ছি।
বাজারের এই পাউরুটিগুলো মিহি আটা, মাখন এবং চিনির সংমিশ্রণে তৈরি হয়। যা অন্য অনেক কিছুর থেকেও বেশি ক্ষতিকর। এক টুকরো পাউরুটিতে ৫৩টি পুষ্টিহীন ক্যালরি থাকে। যা অনেক দিক থেকেই আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। অনেক সময় দেখা যায় দীর্ঘদিন ধরে ব্যায়াম করলেও ওজনের পরিবর্তন হচ্ছে না। এর পেছনে দায়ী এই রুটি। আজ আমরা এই পাউরুটির বিকল্প হিসেবে কিছু সবজি এবং ফলের কথা জানব। যা খেলে একই সাথে আমাদের চর্বি এবং ওজন হ্রাস পাবে।
আলু: আলুতে প্রচুর কার্বোহাইড্রেট রয়েছে সেটি আমাদের সবার জানা। কিন্তু তারপরও অনেকক্ষেত্রে আলু একটি ভাল বিকল্প। বিশেষ করে যারা কার্ডিও ওয়ার্কআউট করে। কারণ কার্ডিও ওয়ার্কআউটের পর শরীরে অন্যান্য পুষ্টির চেয়ে কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা বেশি তৈরি হয়। সেক্ষেত্রে এই অবস্থায় রুটি খাওয়া কখনই ভাল হতে পারে না। রুটির বদলে আলু ব্যবহার করা যেতে পারে। অবশ্য যেসব রুটি অনেক রকম শস্য মিশ্রিত আটা দিয়ে তৈরি হয় সেগুলোতে অনেক রকম পুষ্টিগুণ থাকে।
ক্যাপসিকাম: অনেকেই খাদ্য তালিকায় সালাদ রাখতে পছন্দ করেন। কেউ কেউ রুটি দিয়ে স্যান্ডউইচ বানিয়ে খায়। সেক্ষেত্রে সালাদকে রঙিন করতে আমরা ক্যাপসিকাম যোগ করতে পারি। এমনকি স্যান্ডউইচেও। আমাদের দেশে এখন এই সবজিটি সারা বছরই পাওয়া যায়। ক্যাপসিকাম শরীরের ওজন হ্রাসে সহায়তা করার পাশাপাশি শরীরের আরও নানা চাহিদা পূরণ করে থাকে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও এটি বেশ কাজের।
বেগুন: আমাদের দেশে বেগুন সাধারণত ভাতের সাথে রান্না করা সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। অনেকে আবার ভেজেও খান। কিন্তু চাইলে এটি আমরা আমাদের নাস্তায় যোগ করতে পারি। বেগুন একটি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। রুটির বিকল্প হিসেবে ভাজা বেগুনের পাতলা টুকরো ব্যবহার করা যায়। এবং এটিকে মুখরোচক করতে এর সাথে ক্যাপসিকাম, পনির এবং আলু যোগ করা যেতে পারে।
টমেটো: আমাদের এই উপমহাদেশে টমেটো একটি বিশেষ খাবার। আমরা প্রায় সব খাবারেই টমেটো যোগ করি। আমরা মনে করি এতে খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি পায়। অনেকেই স্যান্ডউইচের স্লাইসের মধ্যে টমেটো ব্যবহার করেন। যা একটি চর্বিযুক্ত খাবার। রুটির টুকরোগুলো বাদ দিয়ে শুধু টমেটো খাওয়ার অভ্যাস ধরে রাখতে পারলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যাবে।
শসা: পাউরুটি দিয়ে যারা স্যান্ডউইচ বানিয়ে খেতে অভ্যস্ত তারা চাইলে রুটির বিকল্প হিসেবে শসা নানান উপায়ে ব্যবহার করতে পারেন। রুটির বদলে শসা এবং সাথে পনির, জলপাই এবং টমেটো দিয়ে চমৎকার খোলা স্যান্ডউইচ বানানো সম্ভব। অথবা শসাকে একদম পাতলা করে কেটে অন্যান্য উপকরণ পেচিয়ে খাওয়া যায় স্যান্ডউইচ এর মত করে। এভাবে খাদ্যতালিকা থেকে ক্যালরির মাত্রা কমিয়ে ফাইবার সমৃদ্ধ্য নাস্তা তৈরি করা সম্ভব।
লেটুস: লেটুস পাতা বেশ জনপ্রিয়। বাজারে অনেক রকমের এবং আকারের লেটুস পাতা পাওয়া যায়। এগুলো খাবারের মোড়ক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। পছন্দ মত পুর তৈরি করে ল্যাটুস দিয়ে পেচিয়ে খাওয়া যেতে পারে। দুপুরের খাবার হিসেবে এটি বেশ কাজের। রুটির ক্ষুধা মেটাতেও এটি বেশ উপকারি।
আনারস: আনারস শুধু ফল হিসেবেই খাওয়া যায় না। চাইলে আনারসের টুকরোর উপরে ব্রাউন সুগার দিয়ে গ্রিল করতে পারেন। আনারসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে। শুনতে অবাক লাগলেও আনারস আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
বাঁধাকপি: লেটুসের মত বাঁধাকপি দিয়েও চাইলে বিভিন্ন খাবারের মোড়ক তৈরি করা যায়। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন কে এবং সি থাকে। পাউরুটি দিয়ে সন্ধ্যার নাস্তা না করে চাইলে বাঁধাকপি দিয়ে সালাদ খেতে পারেন। সাথে মুরগি বা আলুর কিউব যোগ করলে স্বাদ বাড়বে বহুগুণে।
গাজর: শসার মত গাজর পাতলা করে কেটে কিংবা টুকরো করে খেতে পারেন। বিশেষ করে যাদের হৃদরোগের সমস্যা আছে তাদের জন্য গাজর বেশ উপকারি। অনেকেই শুধু গাজর চিবিয়ে খেতেও পছন্দ করেন। গাজর দিয়ে অনেক ধরনের খাবার তৈরি করা যায়। তবে রান্না করার চেয়ে কাঁচা গাজর বেশি উপকারি। গাজর দাঁতেরও সুরক্ষা দেয়।
সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া