২০৫০ সালে বিশ্বে ডায়াবেটিসে ভুগবে ১৩০ কোটিরও বেশি মানুষ : গবেষণা

prediabetes

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে যে হারে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বাড়বে। বৈশ্বিক গণস্বাস্থ্য ও এ সংক্রান্ত বিভিন্ন পরিসংখ্যান সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের (আইএইচএমই) সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণা প্রতিবেদনটি বিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্পর্কিত প্রথম সারির আন্তর্জাতিক পিআর রিভিউ সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিতও হয়েছে।

আইএইচএমই’র গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে বিশ্বজুগে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৫৩ কোটি; কিন্তু ২০৫০ সালে এই সংখ্যা বেড়ে পৌঁছাবে ১৩০ কোটিতে।

ডায়াবেটিস আসলে কোনো রোগ নয়, বরং একটি বিশেষ শারীরিক অবস্থা, যা বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা তৈরি করে এবং এটি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে মানুষের মৃত্যুও ঘটে ডায়াবেটিসে।

আমাদের রক্তে শর্করার প্রয়োজনীয় শর্করার পরিমাণ নির্ধারণ করে ইনসুলিন নামের একটি হরমোন। সুস্থ-স্বাভাবিক প্রতিটি মানুষের শরীরের ভেতরে এই হরমোন প্রয়োজনীয় মাত্রায় নিঃসৃত হয়; কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম ঘটে। এই শারীরিক অবস্থায় আক্রান্ত রোগীদের দেহে প্রয়োজনীয় মাত্রার ইনসুলিনের উৎপাদন হয় না। ফলে, রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায় এবং এই শর্করা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগে মৃত্যু ঘটে মানুষের।

চিকিৎসাবিজ্ঞানে ডায়াবেটিসের ধরন অনুসারে একে দু’ভাগে ভাগ করা হয় টাইপ ১ এবং টাইপ ২। যাদের দেহে জন্মগতভাবেই ইনসুলিনের উৎপাদন কম হয়— তারা টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। অন্যদিকে, জীবনাচরণ, খাদ্যাভাস ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশের প্রভাবে যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন— তারা টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলে মনে চিকিৎসাবিজ্ঞান।

জাতিসংঘের অন্যতম অঙ্গসংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে যত ডায়াবেটিস রোগী রয়েছেন, তাদের ৯০ ভাগই টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।

ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞদের মতে, শারীরিক স্থুলতা বা অতিরিক্ত শারীরক ওজন যাদের ওজন না কমালে জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে তাদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ইনস্টিটিউট অব হেলথ মেট্রিক্স ইভ্যালুয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৩ দশকের মধ্যে বিশ্বজুড়ে টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের হার ৯৫ শতাংশ উন্নীত হবে।

ইনস্টিটিউট ফর হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের শীর্ষ গবেষক এবং এই গবেষণা প্রবন্ধের প্রধান লেখক লিয়েন অং ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানকে এ সম্পর্কে জানান, নগরায়ন ও শিল্পায়নের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের দ্রুত পরিবর্তন এবং শাকসবজি, ফলমূল ও সাধারণভাবে উৎপাদিত আমিষজাত খাদ্যের পরিবর্তে ক্রমশ প্রক্রিয়াজাত খাবারের ওপর বাড়তে থাকা নির্ভরশীলতাই আসন্ন এই সংকটের জন্য প্রধানত দায়ী।

দ্য গার্ডিয়ানকে লিয়েন ওয়েং বলেন, ‘গত ৩০ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লোকজন তাদের দেশীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত দৈনন্দিন খাবার থেকে সরে আসছে। একসময় তাদের খাদ্যতালিকায় মাংসের পাশাপাশি মাছ, ফলমূল, শাকসবজিরও প্রাধান্য থাকত; কিন্তু নগরায়ন ও শিল্পায়নের প্রভাবে এখন তারা ক্রমশ ফাস্টফুড ও অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রতি ঝুঁকছে। মূলত এই ব্যাপারটিই আগামী তিন দশকে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ করার ক্ষেত্রে সরাসরি দায়ী থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডায়াবেটিস এখন আর কোনো রহস্য নয়। গত শতকেই ডায়াবেটিসের সংজ্ঞা, কী কারণে এটি হয় এবং এর প্রতিকার বা প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়েছে। কিন্তু সামাজিক পরিস্থিতির কারণেও যে ডায়াবেটিসের বিস্তার ঘটতে পারে— তা আমরা ধরতে ব্যর্থ হয়েছি।’

গবেষণা প্রবন্ধটির সহলেখক এবং যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক লিওনার্ড ইগেড এক বিবৃতিতে বলেন, ‘নগরায়ন ও শিল্পায়ন বিভিন্ন দেশের জনগণের মধ্যে তাদের ঐতিহ্যগত খাবারগুলোর প্রতি একধরনের বর্ণবাদী ও অবজ্ঞাসূচক মনোভাব গড়ে তুলছে। তার ফলাফল হলো ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের এই ক্রমবর্ধমান হার।’

সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *