বিশেষ পুষ্টিসমৃদ্ধ নতুন ডিম বাজারজাত শুরু করেছে রেনাটা লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির নিউট্রাসিউটিক্যালস বিভাগ ‘পূর্ণভা’ খাবারে ফোলেট অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ‘ফোলেট ডিম’ নামের এই ডিম বাজারে এনেছে।
রোববার (২৮ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ কথা জানান রেনেটার কর্মকর্তারা।
রেনেটা কর্তৃপক্ষ জানান, এই ফোলেট ডিমে সাধারণ ডিমের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি ফোলেট থাকে যা প্রস্তাবিত খাদ্য চাহিদার (আরডিএ) ২০ শতাংশ পূরণ করে। এমনকি শিশু, কিশোর ও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী এই ফোলেট (ভিটামিন বি ৯) লোহিত কণিকা তৈরিতে গঠন এবং বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ।
অনুষ্ঠানে ফোলেট ডিমের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্সের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খালেদা ইসলাম।
এ সময় তিনি জানান, ফোলেট স্বাভাবিকভাবেই ডিমে পাওয়া যায়। পূর্ণভার ফোলেট ডিমে সাধারণ ডিমের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি ফোলেট থাকে।
ফোলেট বিশেষভাবে শিশু, কিশোর ও গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে লোহিত ও শ্বেত রক্ত কণিকা তৈরিতে সহায়তা করে, ডিএনএ এবং আরএনএ তৈরি করে। এমনকি এটি খাদ্যকে পরিপাকে সহায়তার মাধ্যমে শরীরে পুষ্টি উপাদানের যোগান দেয়।
প্রবন্ধে বলা হয়, ফোলেট (ভিটামিন বি ৯) লোহিত রক্ত কনিকার গঠন এবং বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ। এই ফোলেট গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বিশেষ করে স্তূণের নিউরাল টিউব, মেরুদণ্ড এবং মস্তিষ্কে জন্মগত ত্রুটিগুলো কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফোলেটের অভাবের ফলে ঠোঁট ও তালু ফাটা, হার্টের ত্রুটি, অঙ্গের ত্রুটি, প্রি-টার্ম ডেলিভারি, জন্মের সময় কম ওজন এবং গর্ভাবস্থায় গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
আরও বলা হয়, ফলিক অ্যাসিডের সম্পূরকগুলোতে ফোলেটের একটি সিন্থেটিক, নন-বায়োঅ্যাকটিভ ফর্ম থাকে যা মানব দেহের মধ্যে কয়েকটি রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে সক্রিয় ও শোষণযোগ্য আকারে রূপান্তরিত হয়। অন্যদিকে ফোলেট সমৃদ্ধ ডিমে ইতিমধ্যেই একটি বায়োঅ্যাকটিভ ফর্ম ফলিক অ্যাসিড থাকে যা সহজেই শোষিত হয় এবং শরীরে ব্যবহারের জন্য সক্রিয় হয়ে যায়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সাধারণত ডিমে ফলিক অ্যাসিড থাকে কারণ এটি মুরগির খাদ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু মুরগির হজম প্রক্রিয়ার ফলে পাকস্থলীর অ্যাসিড ফোলেটকে হ্রাস করে, যার ফলে ডিমে ভিটামিন বি ৯ এর পরিমাণ ও কমে যায়। এই সমস্যা এড়াতে, রেনাটা লিমিটেডের বিজ্ঞানীরা স্প্রে-কোটিং কৌশল ব্যবহার করে একটি পরিবর্তিত রিলিজ ফোলেট তৈরি করেছেন যা মুরগির পেটে শক্তিশালী অ্যাসিডের উপস্থিতিতে অক্ষত থাকে। ফলে ডিমে স্বাভাবিকভাবেই বেশি ফোলেট পাওয়া যায়।
এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রেনাটা লিমিটেড তাদের পোল্ট্রি রিসার্চ এবং ডেভেলপমেন্ট সুবিধা সম্বলিত কাশর, ভালুকায় একটি ট্রায়াল পরিচালনা করেছিল। ১২টি মুরগির তিনটি দলে বিভক্ত করে মোট ৩৬ টি মুরগি পরীক্ষায় ব্যবহার করা হয়েছিল। কন্ট্রোল গ্রুপের ডায়েটে একটি ফলিক অ্যাসিড অন্তর্ভুক্ত ছিল যা সাধারণত মুরগির খাবারে ব্যবহৃত হয়। দুটি গ্রুপকে পরিবর্তিত রিলিজ ফলিক অ্যাসিড খাওয়ানো হয়েছিল। ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গড়ে প্রতি ১০০ গ্রাম ফোলেট ডিমে ফোলেট থাকে ১৫২ এমসিজি।
অনুষ্ঠানে রেনেটা লিমিটেডে পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন রেনেটার অ্যানিম্যাল হেলথ ডিভিশনের পরিচালক মো. সিরাজুল হক। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তারা।