ঢাকায় ৭০ জায়গায় বায়ুদূষণ ৫.২ গুণ বেশি

ঢাকার পাঁচ এলাকায় বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি। অভিজাত আবাসিক এলাকায় আশঙ্কাজনকভাবে দিন দিন বাড়ছে দূষণের মাত্রা। ২০২০ সালে বাংলাদেশের বাতাসে গড় ধূলিকণার পরিমাণ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৭৭.১ মাইক্রোগ্রাম। যা পরিবেশ অধিদফতরের আদর্শ মানের সাড়ে ৫ গুণ বেশি। এর মধ্যে ঢাকার ৭০টি স্থানের দূষণ গবেষণা করে দেখা যায়, পরিবেশ অধিদফতরের বায়ুদূষণের মাত্রা আদর্শ মানের চেয়ে বাতাস ৫.২ গুণ বেশি দূষিত। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘ঢাকা শহরের ৭০টি স্থানের বায়ুদূষণ সমীক্ষা-২০২০’ শীর্ষক ক্যাপস-এর বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক এবং স্টামফোর্ড বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, লালবাগ, হাজারিবাগ,  কোতোয়ালি,  কামরাঙ্গীরচর ও সূত্রাপুরে বায়ু দূষণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। আবাসিক এলাকার মধ্যে ধানমন্ডি,  গুলশান,  বাড্ডা ও বনানীতে আশঙ্কাজনক হারে বায়ু দূষণের মাত্রা বেড়েছে। জানানো হয়, অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণ কাজ থেকে দূষণ হয় ৩০ ভাগ, ২৯ ভাগ হয় ইটভাটা ও শিল্প কারখানা থেকে, ১৫ ভাগ যানবাহনের কালো ধোঁয়া থেকে? ১০ ভাগ আন্তঃদেশীয় বায়ুদূষণ এবং ৯ ভাগ গৃহস্থালি ও রান্নার চুলা থেকে নির্গত দূষণ।

পরিবেশ অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক সারওয়ার ইমতিয়াজ হাশমী বলেন, দূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও বাস্তবে এর দেখা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রাথমিকভাবে দূষণ দূরের জন্য পানি ছিটানো, গাছ লাগানো, নির্মাণসামগ্রী ঘিরে রাখার বিষয়গুলো করা যেতে পারে।

বাপার সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল বলেন, দূষণের একটি বড় কারণ অনিয়ন্ত্রিত শিল্প কারখানা। এ ছাড়া পানি ছিটানো, ইটভাটা বন্ধ করা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি অপসারণ করার পাশাপাশি সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার। বাপার যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস বলেন, যারা দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করবে তাদের বেশিরভাগই বসেন সচিবালয়ে। সেই সচিবালয়ের আশপাশেই দূষণের পরিমাণ অনেক বেশি। স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, সরকার ক্লিন এয়ার অ্যাক্ট করে সেটি আটকে রেখেছে। এটা হতে পারে না। দিন দিন দূষণ বেড়েই চলেছে। কিন্তু আইনের খসড়া করে তারা বসেই আছে। আগ্রহ আর নেই সেটি চূড়ান্ত করার। স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী বলেন, নানা উদ্যোগ নেওয়া হলো কিন্তু আইন নাই। তাই সুনির্দিষ্ট আইন থাকা জরুরি।  এ জন্য গবেষণা করাও অনেক বড় কাজ। কোনো অজুহাত  না করে সরাসরি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে স্বল্পমেয়াদি,  মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ করা হয়। এরমধ্যে স্বল্পমেয়াদি সুপারিশে বলা হয়, মাস্ক ব্যবহার করা, প্রতিদিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা পরপর পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা, নির্মাণ সামগ্রী ঢেকে রাখা, রাস্তার ধুলা সংগ্রহে সাকশন ট্রাক ব্যবহার করা, অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ, সবশেষে সমন্বিতভাবে সবাইকে কাজ করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *