ন্যানো-প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃত্রিম মানব ফুসফুস উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানী আয়েশা আরেফিন। মানবশরীরের ওপর পরিবেশের প্রভাব নতুন কোনো ওষুধের প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি পরীক্ষা করার জন্য গবেষকদের দরকার হয় স্যাম্পলের। সে জন্য অনেক ক্ষেত্রে মানুষকেই গবেষকের গিনিপিগ হতে হয়। কিন্তু এর বদলে কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থাকলে সেটার ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মানবশরীরের ওপর প্রভাব বোঝা সম্ভব হয়। ন্যানো-প্রযুক্তির মাধ্যমে তেমনই একটি কৃত্রিম ফুসফুস তৈরি করে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন আমাদের আয়েশা আরেফিন। কৃত্রিম মানব ফুসফুস উদ্ভাবনের পথে কৃতী তরুণ এ গবেষক বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের লস আলামস পরীক্ষাগারে তাঁর গবেষণা চালিয়ে যান। তাঁর ডাকনাম টুম্পা। বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রাম মহানগরীতে। স্নাতক পড়ার জন্য বেছে নেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং। বৈজ্ঞানিক গবেষণা সংক্রান্ত এক কাজে সরকারি আমন্ত্রণে বাংলাদেশে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের আলামস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির গবেষক ক্রিস ডেটার। একই সময়ে তিনি সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সেমিনারে গিয়েছিলেন। সেখানে আয়েশা আরেফিনের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। পরে ডেটার ও তাঁর সহকর্মী ল্যান্স গ্রিন টুম্পাকে লস আলামস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে উচ্চতর পড়াশোনা ও গবেষণার সুযোগ পেতে সহায়তা করেন। এরপর আয়েশা তাঁর ক্যারিয়ার শুরু করেন লস আলামস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির বায়োসিকিউরিটি বিভাগে। ওই ল্যাবের ভারতীয় গবেষক প্রখ্যাত টক্সিকোলজিস্ট রাশি আইয়ার তাঁকে অপ্টোজেনিকস-সংক্রান্ত গবেষণায় নিয়োগ দেন। অপ্টোজেনিকস হচ্ছে জিনবিদ্যা ও প্রোটিন বিষয়ক প্রযুক্তি। যার মাধ্যমে জীবন্ত কোষের মধ্যে ঘটতে থাকা বিভিন্ন স্নায়ুবিক কাজকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও কৃত্রিম কোষ তৈরি করা সম্ভব। টুম্পা ও রাশি আইয়ারের টিমের সদস্যরা বিভিন্ন জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট বিষক্রিয়া, রোগ ও কৃত্রিম অঙ্গ সংস্থাপনের জন্য সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছেন। এর মধ্যে একটি কৃত্রিম ফুসফুস তৈরি করেন টুম্পা।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের লস আলামস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির ওয়েবসাইটে আয়েশা আরেফিনের গবেষণার তথ্য প্রকাশ হয়। সেখানে জানানো হয়, আয়েশা এবং তাঁর দলের অন্য সদস্যরা মিলে বিভিন্ন জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট বিষক্রিয়া, রোগ ও কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন করছেন। যদিও তাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজের সময় ফুসফুসের কোষগুলো কীভাবে কাজ করে তা জানা এবং এর প্রতিষেধক উদ্ভাবন করা। রোগটি এতই ভয়াবহ যে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর কারণ হিসেবে এর স্থান তৃতীয়। গবেষণা থেকে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির ফুসফুসের কোষ এবং এর সংশ্লিষ্ট আণবিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও নির্ভুল তথ্য পাওয়া যাবে। তাদের গবেষণাগারে আরও চারটি দল মানবদেহের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে কাজ করছেন। আয়েশার আরেকটি গবেষণা হলো, মানব মস্তিষ্কের রক্ত সংবহনের একটি মডেল তৈরি করে ব্রেন স্ট্রোকের কারণ অনুসন্ধান করা। শুধু গবেষণা নয়, আয়েশা আরেফিন পড়ালেখার পাশাপাশি নানা ধরনের স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে জড়িত।