দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে কি ওজন কমে?

0
353
Spread the love

স্থূলতা একটি রোগ। শরীরে বাড়তি মেদ জমে নানাবিধ রোগের সৃষ্টি হয়।  বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে, দেহের এই ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে নানাবিধ অসুখ-বিসুখের একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

টাইপ-২ ডায়াবেটিস, গল ব্লাডারের ডিজিজ, হাইপারটেনশন, ডিসলিপিডেমিয়া, ইনসুলিন রেজিসটেন্স, এথেরোস্কে¬রোসিস, করোনারি হার্ট ডিজিজ, মেটাবলিক সিনড্রোম, স্ট্রোক, গাউট (গেঁটেবাত), অস্টিও আর্থ্রাইটিস, ক্যান্সার, রিপ্রোডাকটিভ অ্যাব নরমালিটিস, স্লিপ এপনিয়া, হার্নিয়া, অ্যাজমা, স্কিন কমপ্লিকেশনসহ আরও নানাবিধ রোগের অন্যতম কারণ দেহের অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন আল-রাজী হাসপাতালের কনসালটেন্ট পুষ্টিবিদ তামান্না রুবিন।

স্থূলতা নির্ণয়ের একাধিক পদ্ধতি রয়েছে। কাম্য ওজন অপেক্ষা শতকরা ১০ ভাগ বেশি হলে সামান্য মোটা কিন্তু, ওজন যদি শতকরা ২০ ভাগের বেশি হয় তবে তাকে রীতিমতো মোটা বা স্থূল বলে গণ্য করতে হবে।

দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকলে আপনার শরীরের মেটাবলিক রেট অনেক স্লো হয়ে যাবে, আর এক্ষেত্রে পরে আপনি যে খাবারটিই খাবেন তা আপনার শরীরে ধরে রাখবে, সুতরাং দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকাও ওজন বাড়ার একটি অন্যতম কারণ।

এছাড়া ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আপনি যদি না খেয়ে থাকেন কিংবা সুষম খাদ্য তালিকা বা ব্যালান্সড ডায়েট মেনে না চলেন, ওজন সাময়িক সময়ের জন্য কিছুটা কমলেও পরে আপনার ওজন আরও দ্বিগুণ মাত্রায় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে, সেই সঙ্গে আপনার বিভিন্ন কমপ্লিকেশনস দেখা দেবে যেমন- বিভিন্ন ভিটামিন এবং মিনারেলসের অভাবজনিত রোগ, চুল ঝরে যাওয়া, হতাশা, দুর্বলতা, রক্তের হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া, বয়সের ছাপ, চামড়া রুক্ষ হওয়া, নখ ভেঙে যাওয়া, অতি মাত্রায় এসিডিটি ইত্যাদি। সুতরাং ওজন কমাতে হবে খেয়ে, না খেয়ে নয়। সারাদিনের খাদ্য তালিকাটিতে অবশ্যই কার্বহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিনস এবং মিনারেলস থাকতে হবে।

কোন খাবার কতটুকু খাবেন

প্রথমত: ক্যালরি নির্ধারণ করা। ক্যালরিনির্ভর করবে প্রত্যেক ব্যক্তির তার নিজস্ব ওজন, উচ্চতা, বয়স, দৈহিক শ্রমের পরিমাণ এবং শারীরিক অবস্থা ইত্যাদির ওপর। সুতরাং সঠিক ক্যালরি নিরূপণ করে সেই খাদ্য তালিকায় খাদ্যের প্রত্যেকটি বিভাগ থেকে খাদ্য নির্বাচন করতে হবে যেমন- কার্বহাইড্রেট, প্রোটিন, বিভিন্ন ভিটামিন এবং মিনারেলস জাতীয় খাবার।

দ্বিতীয়ত : সারাদিনের খাদ্য তালিকাটিকে ৬ বেলায় ভাগ করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে কার্বহাইড্রেট থেকে ৬-৭ সার্ভিং, প্রোটিন জাতীয় খাদ্য থেকে ২ সার্ভিং, সবজি থেকে ৫ সার্ভিং, ফল থেকে ২ সার্ভিং, দুধ ও দুধজাতীয় খাদ্য থেকে ১ সার্ভিং, রান্নার তেল-৩ চা চামচ (মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড), বাদাম ১.৫ আউন্স।

ওজন নিয়ন্ত্রণে সকালবেলা পরোটা/ভাতের পরিবর্তে লাল আটার রুটি/ওট নেয়া যেতে পারে। ডিম পোচ বা ওমলেট এর পরিবর্তে ডিম সিদ্ধ হতে পারে এবং মিক্সড সবজি (রঙ্গিন সবজি ৩/৪ রকমের) রাখা যেতে পারে। রান্নায় তেলের ব্যবহার কমাতে হবে, এক্ষেত্রে রান্নার সময় মাছটাকে না ভেজে রান্না করা যেতে পারে। ওজন নিয়ন্ত্রণে তেলের ইনটেক কমাতে হবে, ১ চামচ তেলে ৪৫ ক্যালরি থাকে। মধ্য সকাল বেলায় মিক্সড নাট, চিকেন স্যুপ দই হতে পারে।

বিকালে শসার সালাদ, ছোলা, ফলের জুস (টক ফল) হতে পারে। রাতের বেলায় শারীরিক শ্রম কম থাকে বলে ক্যালরি বার্ন কম হয় তাই সকাল ও দুপুরের তুলনায় কিছুটা পরিমাণে কম খেতে হবে। সেসঙ্গে অবশ্যই নির্দিষ্ট সময় কমপক্ষে ১ ঘণ্টা ব্যায়াম করতে হবে।

মোট কথা, ওজন একটু বৃদ্ধি পেলেই ঘনীভূত ক্যালরিবহুল খাদ্যগুলো বাদ দিয়ে বয়স-ওজন-উচ্চতা অনুসারে সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক ও সঠিক পদ্ধতিতে খাদ্য তালিকা প্রস্তুত করে তা মেনে চলুন। আর তাই ওজন কমাতে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন।

আপনার দেহের ওজন যেমন রাতারাতি বৃদ্ধি পায়নি সুতরাং তা নিয়ন্ত্রণে কিছুটা সময় দিন, নিজের এবং বিশেষজ্ঞের প্রতি ভরসা রাখুন। ধৈর্যের সঙ্গে পরিবর্তিত খাদ্য তালিকাটি উপভোগ করুন। মনে রাখবেন, ওজন নিয়ন্ত্রণ সময়সাপেক্ষ কিন্তু অসম্ভব নয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে