যারা উচ্চরক্তচাপ বা হাই প্রেসারে আক্রান্ত তাদের বেলায় হঠাৎ প্রেসার বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এ অবস্থায় রোগীর শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড়, অস্বস্তিবোধ করা, শরীর দুর্বল হয়ে পড়া, চোখে দেখতে অসুবিধা হওয়া, ঘাড় মাথা ব্যথা ও মাথা ঘোরার মতো লক্ষণ হতে দেখা যায়। এসব উপসর্গের তীব্রতা দেখে প্রেসারের পরিমাপ নির্ধারণ করা সঠিক নাও হতে পারে। সঠিকভাবে প্রেসার যন্ত্রের সাহায্যে পরিমাপ করেই তার বৃদ্ধির পরিমাণ নির্ণয় করতে হবে। উল্লেখ্য, একই মাত্রায় প্রেসার বৃদ্ধি, সবার ক্ষেত্রে একই রকম উপসর্গ পরিলক্ষিত হয় না, ব্যক্তির প্রেসার বৃদ্ধির পূর্ব অবস্থায় মানে স্বাভাবিক সময়ে প্রেসার কত ছিল এবং সেই অবস্থা থেকে বর্তমানে কতটুকু বৃদ্ধি পেয়েছে তার সঙ্গে উপসর্গের তীব্রতা বহুলাংশে নির্ভর করে।
ধরুন কারও স্বাভাবিক সময়ে প্রেসার ১৬০/৯৫ ছিল, তার যদি প্রেসার বৃদ্ধি পেয়ে ১৯০/১০৫ হয় তার ক্ষেত্রে যে ধরনের উপসর্গের তীব্রতা হবে এবং অন্য একজন স্বাভাবিক সময়ের প্রেসার ১৩০/৮৫ ছিল, তার যদি প্রেসার বেড়ে ১৯০/১০৫ হয় তবে উপসর্গের তীব্রতা অনেক বেশি হবে। আমি অনেককে দেখেছি তার প্রেসার ২০০/১১০ কিন্তু তার কোনো উপসর্গ নেই, এর কারণ হলো বহুদিন যাবৎ তার প্রেসার ধীরে ধীরে বাড়তে বাড়তে এ অবস্থায় পৌঁছেছে। তার মানে তার প্রেসার বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে তার শরীর এ ধরনের হাই প্রেসারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে, তাই তার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। হঠাৎ অত্যধিক উচ্চরক্তচাপ মানবদেহে অনেক ধরনের বিপত্তি ঘটাতে পারে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো রোগী ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়া, যার ফলে রোগীর শরীরের একপাশ মানে ডান অথবা বাম পাশ অবস হয়ে যাওয়া, হাত-পা নাড়াতে না পারা, রোগী দাঁড়াতে না পারা, চোখে দেখতে অসুবিধা হওয়া অনেক ক্ষেত্রে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
ডানপাশ আক্রান্ত হলে রোগীর কথা জড়িয়ে আসতে পারে এবং বাকরুদ্ধ হয়ে যেতে পারে। হঠাৎ প্রেসার বৃদ্ধির ফলে রোগী তাৎক্ষণিকভাবে হার্ট অ্যাটাক বা হার্ট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে। যার লক্ষণগুলো হলো প্রচ- বুক ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, দম আটকে আসা, বুক ধড়ফড় করা ও শরীর অত্যধিক ঘেমে যাওয়া তার সঙ্গে বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে রোগী সাধারণত অজ্ঞান হয় না, রোগী সজ্ঞানে সবকিছু বলতে ও বুঝতে পারে। তবে অত্যধিক জটিল অবস্থায় কখনো কখনো রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। হঠাৎ প্রেসার বেড়ে গেলে সাধারণ মানুষ কি করে বা কি করা উচিত? আমাদের দেশের অনেক এলাকাতে তাৎক্ষণিকভাবে তেঁতুলের সরবত পান করানোর একটি রেওয়াজ প্রচলিত আছে, যার তেমন কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তির খোঁজ পাওয়া যায় না। তবে তেঁতুল যেহেতু খাদ্যবস্তু, তাই এক গ্লাস তেঁতুলের সরবত খেলে তেমন কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু দিনে এক গ্লাসের বেশি খাওয়ালে অসুবিধা হতে পারে। হঠাৎ প্রেসার বৃদ্ধি পেলে রোগীর বিশ্রামের ব্যবস্থা নিতে হবে।
অত্যধিক গরম আবহাওয়ায় ভেজা কাপড় দিয়ে রোগীর শরীর মুছে দেওয়া এবং ক্ষেত্রবিশেষে রোগীর মাথায় পানি ঢালা যেতে পারে। রোগীকে বিটা ব্লকার জাতীয় ওষুধ-৫ মিলিগ্রাম একটি ট্যাবলেট খাওয়ালে ভালো হয় অথবা ক্যালসিয়াম ব্লকার জাতীয় ওষুধ ৫ মিলিগ্রাম অথবা নিফিডিপিন জাতীয় ওষুধ-১০ মিলিগ্রাম একটি ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে। এবং দ্রুত একজন মেডিসিন অথবা হার্ট স্পেশালিস্টের শরণাপন্ন হতে হবে।
লেখক:
ডা. এম শমশের আলী
চিফ কনসালটেন্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শামলী, ঢাকা।