একাধিকবার ঠাণ্ডা খাবার গরম করা যাবে?

0
269
Spread the love

খাবার খাওয়ার পর রয়ে গেলে আমরা ফ্রিজেই সাধারণত রেখে দিই। পরে আবার গরম করে খাই। এতে করে খাবারের অপচয়ও কম হয়। কিন্তু অনেকের ধারণা, খাবার একাধিকবার গরম করে খাওয়া নিরাপদ নয়।

খাবার নিয়ে এ ধরনের অস্পষ্ট ধারণা আমাদের সমাজে বহু প্রচলিত। কিছু সহজ ধাপ মেনে সহজেই খাবার সংরক্ষণ এবং দ্বিতীয়বার গরম করে খেতে পারেন।

বিষয়টি জানার আগে চলুন জেনে নিই, খাবার খেয়ে কেন আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি।

বিভিন্নভাবে খাবারে ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে। প্রাকৃতিকভাবেই পরিবেশে জন্ম নিতে পারে এই ধরনের ব্যাকটেরিয়া। ভাইরাস খাবারের ভেতর জন্মায় না এবং একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় গিয়ে ভাইরাস ধ্বংস হয়। অন্যদিকে খাবারে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে। তবে সব ব্যাকটেরিয়া আপনাকে অসুস্থ করবে না। কিছু ব্যাকটেরিয়া আমাদের জন্য খুব উপকারী। এ ক্ষেত্রে দইয়ে পাওয়া ব্যাকটেরিয়া পেটের জন্য ভালো। খাদ্যে থাকা ক্ষতিকর জীবাণু অসুস্থতা তৈরি করে। কিছু ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সহজেই পেটে তৈরি হয়। তখন পেট খারাপ হয়ে যায়, সঙ্গে অন্যান্য সমস্যাও তৈরি হতে পারে।

কিন্তু রান্না করার সময় এবং বারবার গরম করার কারণে আস্তে আস্তে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মরে যায়। তবে এর কারণে তৈরি বিষাক্ত বা স্পোর নষ্ট করতে পারে না। গরম করার ফলে বিষক্রিয়া বোড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। যেসব খাবার পরিষ্কারভাবে এবং সতর্কতার সঙ্গে তৈরি করা হয় না বা রান্না করার পর খুব আস্তে আস্তে ঠাণ্ডা করা হয় বা গরম করা হয়, সেখানে ক্ষতিকর জীবাণু তৈরি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

খাবারের যে ধরনের ব্যাকটেরিয়া অসুস্থতা তৈরি করে, সেটা সাধারণত ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে এবং দ্রুত বৃদ্ধি পায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যেসব খাবারে দ্রুত ব্যাকটেরিয়া জন্মে সেগুলো হলো, মাংস, দুগ্ধজাত খাবার, সামুদ্রিক খাবার, ভাত, ডিম, পাস্তা এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার।

পুনরায় খাবার গরম করলে খাদ্যে বিষক্রিয়া তৈরি করে যে ব্যাকটেরিয়া, সেই অপরাধীর নাম স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস। যেটা অনেক মানুষের নাকে বা গলায় থাকে। এটি তাপ স্থিতিশীল টক্সিন বা বিষ তৈরি করে। যা খেলে বমি এবং ডায়রিয়া হয়।

খাবার ধরার আগে অবশ্যই হাত ধুয়ে নেওয়া উচিত। কারণ পুনরায় গরম করার সময় এই ব্যাকটেরিয়াগুলো হাত থেকে খাবারে চলে যেতে পারে। যদি খাবারকে ব্যাকটেরিয়া উপযোগী তাপমাত্রায় রাখা হয় তাহলে স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস বৃদ্ধি পাবে এবং বিষাক্ত পদার্থ তৈরি করবে। পরবর্তীতে পুনরায় গরম করলে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হবে ঠিকই কিন্তু টক্সিন বা বিষ হবে না।

নিরাপদ খাবার

ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি কমাতে তাপমাত্রার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। মানে ঠাণ্ডা খাবার ঠাণ্ডা রাখা (৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে) এবং গরম খাবার গরম রাখা (৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। এটা দ্বারা আরো বোঝায়, রান্নার পরেই বিপজ্জনক খাবারগুলো ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ঠাণ্ডা করে ফেলা। খাবার সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও এটি অনুসরণ করতে হবে। রান্না করা গরম খাবার সরাসরি ঠাণ্ডা করার জন্য ফ্রিজে রাখা যাবে না। রান্না করে একটি পাত্রে ঢেলে ঠাণ্ডা করুন। এরপর অন্য একটি পাত্রে ফ্রিজে রেখে দিন। যেসব খাবার পরিষ্কারভাবে রান্না করা হয় এবং দ্রুত ঠাণ্ডা করা হয়, সেই খাবার আবার গরম করলে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকবে না।

নিরাপদে কিভাবে গরম করবেন?

১. সব সময় রান্নার সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে খাবার তৈরি করবেন।

২. রান্নার পর দ্রুত ঠাণ্ডা করে দুই ঘণ্টার মধ্যে ফ্রিজে রাখুন। ফ্রিজে রাখার পর অন্তত চার ঘণ্টা ফ্রিজে ঠাণ্ডা করতে হবে।

৩. প্রয়োজন না হলে বেশি পরিমাণে খাবার একসঙ্গে গরম করবেন না। আলাদা আলাদা পাত্রে খাবার রেখে দিন। অল্প পরিমাণে গরম করুন।

৪. সঙ্গে সঙ্গেই গরম খাবার না খেলে হাত দিয়ে ধরা থেকে বিরত থাকুন।

৫. এর পরেও মনে কোনো সন্দেহ হলে খাবারটি খাবেন না।

 

সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে