প্রকৃতিতে বইছে পরিবর্তনের হাওয়া। শীতপ্রধান দেশগুলোতে বাড়ছে শীত, করোনাকাল হওয়ায় বাড়ছে নতুন আক্রান্তের সংখ্যাও। করোনা মহামারীর পাশাপাশি শীত মৌসুম হৃদরোগীদের জন্য দুঃসময়। এখন উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের ব্যথা, হার্ট অ্যাটাক এবং মৃত্যুঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। তাই শীতকালে দরকার সতর্কতা।
ধীরে ধীরে বাংলাদেশে শীতের আগমন ঘটছে। পিঠাপুলি খাওয়ার মজার সঙ্গে সঙ্গে কিছু অস্বস্তিকর ব্যাপারও ঘটে থাকে। যেমন- চামড়ার সমস্যা, জ্বর, সর্দি, কাশি ইত্যাদি। এ ছাড়া করোনার এ সময় আমাদের আরও বেশি সচেতন ও যত্নবান হতে হবে। বিশেষ করে হৃদরোগীদের। কিন্তু সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাপার হলো শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের ব্যথা, হার্ট অ্যাটাক ও মৃত্যুঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের তথ্য থেকে জানা যায়, প্রতি বছরই শীতকালে হার্ট অ্যাটাকের রোগী ৩০% থেকে ৫০% বৃদ্ধি পায়। শীতের প্রভাবে রক্তচাপের পরিমাণ ১২ থেকে ১৮ মিলিমিটার বাড়তে পারে যা গবেষণায় প্রমাণিত। শীতের প্রভাবে রক্তনালি সংকোচিত হওয়ার ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি ঘটে।
শীতের প্রভাবে রক্ত উপাদানে অনেক পরির্বতন পরিলক্ষিত হয়। রক্ত জমাট বাঁধার জন্য দায়ী রক্তকণিকা, Tiatelets লোহিত কণিকা, ফিব্রিনোজেন এবং কলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায় ফলে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় শতকরা ২০ ভাগ পর্যন্ত। রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের প্রবণতা অনেক গুণে বৃদ্ধি পায়।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, অত্যধিক শীতের প্রকোপে হার্টের অনিয়মিত হৃদস্পন্দন শুরু হতে পারে। যার ফলে তাৎক্ষণিক মৃত্যু ঘটাও অস্বাভাবিক নয়। পেট ভরে খেয়ে ঠান্ডা আবহাওয়ায় হাঁটাহাঁটি করলে খুব সহজেই এনজিনার ব্যথা শুরু হয়ে যায়, যার জন্য রক্তনালির সংকোচনকেই দায়ী করা হয়। যারা সুস্থ-সবল, তারা খুব সহজে ঠান্ডা জনিত এসব পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন, কিন্তু যারা শারীরিকভাবে দুর্বল, বয়সের ভারে ন্যুব্জ, বিভিন্ন অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত তারা খুব সহজেই এসব পরির্বতনের ফলে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে থাকেন। তবে এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকার জন্য আপনার প্রস্তুতি এবং সতর্কতা আপনাকে ঝুঁকিমুক্ত থাকতে সাহায্য করবে।
সতর্কতা ও করণীয় :
♦ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হৃদরোগীরা নিয়মিত ওষুধ সেবন করবেন।
♦ শীতের শুরুতে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে ওষুধপত্রের মাত্রা ঠিক করে নিন।
♦ ঠান্ডা আবহাওয়ায় বাইরে যাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং কাপড় সঙ্গে রাখুন।
♦ বাইরে হাঁটাহাঁটি করতে যাওয়ার সময় গরম কাপড়, জুতা, ছাতা এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে নিয়ে বের হবেন।
♦ বয়স্ক হৃদরোগীরা প্রতিদিন গোসল না করে এক দিন পর পর হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করবেন। মনে রাখবেন খুব বেশি গরম পানি দিয়ে গোসল আপনার স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
♦ পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের পরিমাণ বিশেষ করে শর্করা জাতীয় খাবার ১৫% থেকে ২০% বৃদ্ধি করা উচিত। বয়স্ক হৃদরোগীদের শীতকালীন বৃষ্টির মধ্যে ঘরের বাইরে না যাওয়াই উত্তম।