Category: অসুখ-বিসুখ

  • শীতে শ্বাসকষ্ট : অ্যাজমা না কি ব্রঙ্কাইটিস, কিভাবে চিনবেন?

    শীতে শ্বাসকষ্ট : অ্যাজমা না কি ব্রঙ্কাইটিস, কিভাবে চিনবেন?

    শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট, দমবন্ধ অনুভব, শ্বাসের সময় বুক থেকে সাঁই সাঁই করে আওয়াজ—লক্ষণগুলো অনেকটা একই রকম হলেও রোগের কারণ ভিন্ন হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এটি অ্যাজমার লক্ষণ, আবার কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ ব্রঙ্কাইটিসের। অ্যাজমা একটি জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যেখানে শ্বাসনালির প্রদাহ ক্রনিক হয়ে যায়। অন্যদিকে ব্রঙ্কাইটিস মূলত সংক্রমণজনিত সমস্যা, যা সাধারণত ঠাণ্ডা লাগা বা ঋতু পরিবর্তনের সময়ে দেখা দেয়। তবে দুটিই অস্বস্তিকর এবং দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য সঠিক রোগ নির্ণয় অত্যন্ত জরুরি।

    অ্যাজমা বা ব্রঙ্কাইটিস—উভয় ক্ষেত্রেই শ্বাসযন্ত্র ও শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাধারণত শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা মানে শুকনো, দমফাটা কাশি, যা রাতে ঘুম বাধাগ্রস্ত করে এবং দৈনন্দিন কাজকর্মের সময় হাঁপিয়ে ওঠার কারণ হয়। শীতে এ ধরনের সমস্যা বেড়ে যায়।

    অ্যাকিউট ব্রঙ্কাইটিস মূলত শ্বাসনালির প্রদাহজনিত রোগ। ধূমপায়ী বা সিওপিডি রোগীদের ক্ষেত্রে এটি আরো জটিল হতে পারে। অন্যদিকে অ্যাজমাও শ্বাসনালির প্রদাহ বাড়াতে পারে। ঠাণ্ডা লাগা, পরিবেশদূষণ বা অ্যালার্জিজনিত কারণে হাঁপানি দেখা দিতে পারে।

    অ্যাজমার লক্ষণ :
    ১। সাধারণত ঠাণ্ডা আবহাওয়া বা অ্যালার্জেনের কারণে হয়।

    ২। রাতে ও ভোরে শুকনো কাশির দাপট বৃদ্ধি পায়।

    ৩। শ্বাসের সময় সাঁই সাঁই শব্দ শোনা যায়।

    ৪। হঠাৎ দমবন্ধ হওয়া, শ্বাস নিতে কষ্ট।

    ৫। হাতে ইনহেলার থাকলে সমস্যা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।

    ব্রঙ্কাইটিসের লক্ষণ :

    ১। ফুসফুসের ব্রঙ্কিয়াল টিউবের প্রদাহজনিত সমস্যা।

    ২। প্রাথমিকভাবে শুকনো কাশি।

    ৩। শুরুতে জ্বর, গা, হাত-পা ব্যথা, দুর্বলতা ও ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।

    ৪। সাধারণত এক থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে উপশম হয়।

    ৫। অ্যাজমার সঙ্গে প্রধান তফাত : ব্রঙ্কাইটিস সাধারণত ঠাণ্ডা লাগা দিয়ে শুরু হয়, এরপর গলা ব্যথা, নাক দিয়ে সর্দি পড়া এবং পরে শুকনো কাশি দেখা দেয়।

    শ্বাসকষ্ট, কাশি বা দমবন্ধের লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ।

  • শীতকালীন রোগ প্রতিরোধে যেসব খাবার খাওয়া জরুরি

    শীতকালীন রোগ প্রতিরোধে যেসব খাবার খাওয়া জরুরি

    বছর শেষে শীত নেমে এসেছে, কনকনে ঠাণ্ডা লাগছে। সর্দি, কাশি, হাত-পায়ে ব্যথা, শুষ্ক ত্বক—এই মৌসুমে এসব সমস্যা স্বাভাবিক। শীতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং সংক্রমণের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। তাই সুস্থ থাকতে কিছু খাবার নিয়মিত খাওয়া জরুরি। এখানে এমন ৫ খাবারের তালিকা দেওয়া হলো, যা রোজ খেলে শরীর সুস্থ ও গরম থাকবে।

    সরিষা শাক
    এই শাকে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, কে ও ফাইবার। এটি হজম শক্তি বাড়ায় এবং হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করে।

    কাঁচা হলুদ
    প্রতিদিনের রান্নায় হলুদ ব্যবহার করা হয়, তবে শীতে কাঁচা হলুদ খাওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।

    এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকে, যা সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং ইমিউনিটি শক্তিশালী করে। সকালে এক টুকরো কাঁচা হলুদ খাওয়া উপকারী।

    খেজুর
    শীতকালে শরীর গরম রাখতে খেজুর খাওয়া যায়। এতে আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম থাকে, যা শরীরের নানা সমস্যা রুখে দিতে সাহায্য করে। এছাড়া বাতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। সকালে ২-৩টি খেজুর খাওয়া যেতে পারে।

    আমলকি
    শীতে রোজ আমলকি খেলে শরীরে ভিটামিন সি পূর্ণ হয়। ভিটামিন সি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সর্দি-কাশি ও ত্বকের সমস্যা কমায়।

    তিল
    তিলের মধ্যে থার্মোজেনিক উপাদান থাকে, যা শরীরকে গরম রাখে। এতে ক্যালশিয়াম থাকায় হাড় মজবুত হয় এবং জয়েন্টের ব্যথা কমে। তিল বিভিন্ন খাবারে ছড়িয়ে খাওয়া বা লাড্ডু বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

  • কাশি-গলাব্যথা থেকে অ্যালার্জি, নিরাময় হবে যে খাবারে

    কাশি-গলাব্যথা থেকে অ্যালার্জি, নিরাময় হবে যে খাবারে

    শীতের সময়ে জ্বর-সর্দি-কাশির সমস্যা প্রায় সবারই লেগে থাকে। বাড়িতে শিশু ও বৃদ্ধরা থাকলে, তারাও এই সময়ে নানা সমস্যায় ভোগেন। শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। অল্প ঠাণ্ডাতেই সর্দি-কাশি ধরে যায়। আর শুকনা কাশি একবার হলে আর সারতে চায় না।

    এই সময়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়ার সংক্রমণও খুব বেড়েছে। ঠাণ্ডা গেলে গলায় ব্যথা হচ্ছে। বদলে যাচ্ছে কণ্ঠস্বরও। এমন পরিস্থিতিতে কেবল ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিকে ভরসা করলে হবে না। সর্দি-কাশি, গলাব্যথা যদি সারাতে হয়, তাহলে রোজ সকাল ও সন্ধ্যায় খেতে পারেন আদার রসম।

    শুধু গলাব্যথা সারানোই নয়, আদার রসম হজমশক্তিও বৃদ্ধি করবে। পেটের সমস্যা, গ্যাস-অম্বল, গলা-বুক জ্বালাও কমে যাবে।

    আমাদের রান্নার অন্যতম একটি উপাদান হচ্ছে আদা। কেবল মসলা হিসেবেই নয়, ভেষজ হিসেবেও আদার অনেক গুণ রয়েছে। ঋতু পরিবর্তনের সময়ে গলায় খুসখুসে কাশি হলেও চটজলদি ঘরোয়া টোটকা হিসেবে মুখে রাখা যায় আদাকুচি। দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ি বা বাসে যাত্রার সময়ে বমি ভাব হলে মুখে এক টুকরা শুকনা আদা দিলেই আরাম। নিমেষে উধাও হবে বমি ভাব।

    তাই পেটের গোলমাল ঠেকানো হোক বা বমি বন্ধ করা, অথবা কাশি-গলাব্যথার সমস্যা, ওষুধের বিকল্প হিসেবে আদায় ভরসা রাখেন অনেকেই। আর সেজন্য আদার সঙ্গে আরো কয়েকটি উপকরণ মিশিয়ে তৈরি করে ফেলুন রসম। পদ্ধতি সহজ, উপকার অনেক।

    কিভাবে বানাবেন আদার রসম

    উপকরণ

    • ২ চামচ আদাকুচি
    • ১টি বড় টমেটো কুচানো
    • ১ চামচ তেঁতুলের ক্বাথ
    • আধ চামচ জিরা
    • একমুঠো কারি পাতা
    • ৪-৬টি গোটা গোলমরিচ
    • ৩-৪ কোয়া রসুন
    • এক চিমটি হলুদ গুঁড়া
    • এক চামচ গোটা সরিষা
    • ২টি শুকনা মরিচ
    • তেল বা ঘি

    প্রণালী

    একটি পাত্রে ২ কাপ পানিতে টমেটো কুচি, হলুদ ও তেঁতুলের ক্বাথ দিয়ে ফোটাতে দিন, যতক্ষণ না টমেটো নরম হচ্ছে। এবার রসম মসলা বানিয়ে নিন। তার জন্য জিরা, গোটা গোলমরিচ ও রসুন বেটে নিতে হবে। টমেটো গলতে শুরু করলে তাতে আদাকুচি ও রসম মসলা দিয়ে দিন। মাঝারি আঁচে ৫-৭ মিনিট ফোটান। তবে খুব বেশিক্ষণ ধরে ফোটাবেন না।

    ফোড়নের জন্য একটি ছোট প্যানে ঘি বা তেল গরম করে তাতে গোটা সরিষা, শুকনা মরিচ ও কারিপাতা ফোড়ন দিন। কম আঁচে নাড়াচাড়া করুন। সুন্দর গন্ধ বের হলে তা রসমের ওপর ঢেলে দিন। ওপর থেকে ধনেপাতাকুচি ছড়িয়ে দিতে পারেন। আদার রসম এক দিন অবধি ফ্রিজে রেখে খেতে পারেন। তবে ভালো করে ফুটিয়ে নিয়েই খেতে হবে। গরম গরম খেলে উপকার হবে।

  • হার্ট সার্জারির আগে যে বিষয়গুলো অবশ্যই জানা উচিত

    হার্ট সার্জারির আগে যে বিষয়গুলো অবশ্যই জানা উচিত

    হার্টের সার্জারি সাধারণ কোনো চিকিৎসা না। ভালভ রিপ্লেসমেন্ট, বাইপাস সার্জারি বা অন্য যেকোনো কার্ডিয়াক অপারেশনই হোক না কেন, একজন রোগীর জীবনে হার্ট সার্জারি একটি বড় সিদ্ধান্ত ও বড় পরিবর্তনের সূচনা করে। এসময় রোগীর নিজস্ব ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

    কী ধরনের সার্জারি হতে চলেছে, আর তাতে ঝুঁকি কী, অপারেশনের আগে ও পরে কী করণীয়—এসব সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকলে সার্জারির সাফল্য যেমন বাড়ে, তেমনই জটিলতার ঝুঁকিও কমে।

    হার্ট সার্জারির আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হলো আপনার নেওয়া সমস্ত ওষুধ সম্পর্কে চিকিৎসককে জানানো। প্রেসক্রিপশন ওষুধের পাশাপাশি অনেক সময় আমরা ব্যথানাশক, ভিটামিন, হারবাল সাপ্লিমেন্ট বা ঘরোয়া ওষুধ গ্রহণ করে থাকি। এগুলোর কিছু রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে বা অ্যানেস্থেশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে।

    তাই সার্জারির আগে কোন ওষুধ চালু থাকবে, কোনটি বন্ধ বা কমানো দরকার—এই সিদ্ধান্ত চিকিৎসকই নেবেন। নিজের সিদ্ধান্তে কোনো ওষুধ বন্ধ করা বিপজ্জনক হতে পারে।

    হার্ট সার্জারির জন্য মানসিক ও পারিবারিক প্রস্তুতিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। অপারেশনের পর কিছুদিন হাসপাতালে থাকতে হতে পারে এবং বাড়ি ফেরার পরও বিশ্রাম এবং সহায়তার প্রয়োজন হয়। তাই আগে থেকেই পরিবারের একজন সদস্য বা কেয়ারগিভারের ব্যবস্থা রাখা দরকার, যিনি দৈনন্দিন কাজে সাহায্য করতে পারবেন।

    বাড়িতে আরামদায়ক পোশাক, সহজে ব্যবহারযোগ্য জিনিসপত্র এবং নিরাপদ চলাচলের ব্যবস্থা থাকলে রিকভারি অনেক সহজ হয়। পাশাপাশি নিয়মিত ফলো-আপ ভিজিট ও চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।

    অনেক রোগী মনে করেন, সার্জারির পর সব সমস্যা শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে হার্ট সার্জারি হলো নতুন জীবনযাপনের শুরু। দীর্ঘমেয়াদে হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে হলে খাদ্যাভ্যাস, ওষুধ গ্রহণ, ব্যায়াম এবং মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ নজর দিতে হয়। কম লবণ ও কম চর্বিযুক্ত হৃদয়বান্ধব খাবার, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম, ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা এবং স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ—এসব অভ্যাস হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।

    সার্জারির পর সুস্থ হয়ে ওঠা ধাপে ধাপে হয়। অপারেশনের জায়গা বা বুকের হাড় সেরে উঠতে সময় লাগে। প্রথম দিকে হালকা হাঁটা বা ছোটখাটো কাজ করা যেতে পারে। তবে ভারী জিনিস তোলা, ঝুঁকে কাজ করা বা হঠাৎ জোরালো ব্যায়াম কয়েক সপ্তাহ এড়িয়ে চলা জরুরি। কার্ডিয়াক রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম অনেক ক্ষেত্রেই রোগীদের ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সাহায্য করে।

    হার্ট সার্জারির আগে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আপনি ঠিক কী ধরনের সার্জারির মধ্যে দিয়ে যাবেন, সেটি পরিষ্কারভাবে বোঝা। এটি কি ওপেন হার্ট সার্জারি, নাকি মিনিমালি ইনভেসিভ পদ্ধতি?

    সম্ভাব্য ঝুঁকি কী হতে পারে—রক্তপাত, সংক্রমণ, হার্টবিটের সমস্যা বা স্ট্রোকের মতো জটিলতা হলে কী করবেন? এগুলো জানা থাকলে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা সহজ হয় এবং সচেতনভাবে সিদ্ধান্তও নেওয়া যায়।

    প্রশ্ন করুন

    সবশেষে, প্রশ্ন করতে কখনো দ্বিধা করবেন না। আপনার শরীর ও আপনার স্বাস্থ্য নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আপনারই। চিকিৎসকের দেওয়া নথি ভালো করে পড়ুন। যা বুঝতে অসুবিধা হয়, তা জিজ্ঞেস করুন এবং অপারেশনের আগে, সময়ে ও পরে কী হবে—সবকিছু পরিষ্কার করে নিন। সচেতন ও সক্রিয় রোগী হিসেবে আপনার অংশগ্রহণই হার্ট সার্জারির সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি।

  • শীতে প্রেসার বাড়লে কী করবেন, জানালেন চিকিৎসক

    শীতে প্রেসার বাড়লে কী করবেন, জানালেন চিকিৎসক

    দেশে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন ব্লাড প্রেসারে ভোগেন বলে জানা গেছে বিভিন্ন জরিপে। তবে সে জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না। শীতকাল মানেই অনেকের প্রেসার বাড়ার সমস্যা দেখা দেয়। এই সময়ে যারা বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যাচ্ছেন, তাদের প্রতি বিশেষ পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

    তাদের মতে, যদি কখনো কোনো অবস্থায় ব্লাড প্রেসার ১৫০-এর বেশি বেড়ে যায়, তাহলে যেকোনো ব্র্যান্ডের একটি ৫ মিলিগ্রামের অ্যামলোডিপিন খেতে পারেন। কিডনির ওপর এর কোনো ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে না। অ্যামলোডিপিনের কারণে শুধু একটু পা ফুলতে পারে মাত্র। ফিরে ডাক্তারকে দেখালে সেই সমস্যাও মিটে যাবে।

    সেই কারণে, যারা ব্লাড প্রেসারে ভোগেন তারা বেড়াতে গেলে অতিরিক্ত অ্যামলোডিপিন ট্যাবলেট সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন।

    আর যারা প্রেসারের রোগী নন, কিন্তু বংশে প্রেসার আছে, তারাও শরীরে অস্বস্তি বোধ করলে অন্য কোনো প্রেসারের ওষুধ না খেয়ে নির্দ্বিধায় অ্যামলোডিপিন খেতে পারেন। রোগীর হৃদযন্ত্র, কিডনি বা অন্য কোনো সমস্যা থাকলে অ্যামলোডিপিন খাওয়াই বেশি নিরাপদ।

    ব্লাড প্রেসারের রোগীদের সুস্থ থাকার জন্য পাঁচটি বিষয় মাথায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

    বছরে একবার কিডনির কার্যকারিতা এবং ইলেকট্রোলাইট পরীক্ষা করাবেন। যদি কিডনি পরীক্ষার ফলাফল বিভিন্নরকম আসে, তবে বছরে তিনবার পরীক্ষা করানো উচিত। গরমে অবশ্যই সোডিয়াম, পটাশিয়ামের লেভেলটা পরীক্ষা করে নেবেন।

    তারা আরো বলেছেন, ব্লাড প্রেসারের জন্য চোখ নষ্ট হয়ে যায়। সেই জন্য বছরে একবার চোখের পরীক্ষা করাবেন।

    তবে চোখ ভালো থাকলে, প্রেসার ভালো থাকলে পাঁচ বছরে একবার পরীক্ষা করালেও হবে। প্রেসার অনিয়ন্ত্রিত থাকলে বছরে একবার চোখের পরীক্ষা করাতেই হবে। নিজের একটা চোখ ঢেকে আরেকটা চোখ দিয়ে দেখুন কোনো চোখে বেশি বা কম দেখছেন কি না।

    এল ভিএইচ কী

    প্রেসারের রোগীদের ইসিজি করানোর পরামর্শও দিয়েছেন চিকিৎসকরা। কতটা লেফট ভেন্ট্রিকুলার হাইপারট্রফি বা হৃৎপিণ্ডের ভেন্ট্রিকল অর্থাৎ নিচের ঘরের পেশি প্রাচীর ঘন বা পুরু হয়ে যাচ্ছে কি না, অর্থাৎ হৃৎপিণ্ডের রক্ত পাম্প করতে অসুবিধা হচ্ছে কি না, তা সবচেয়ে ভালো বোঝা যায় ইকোস্ক্রিন থেকে। যাদের প্রেসার অনেকসময় বেশি হয়ে যায় এবং বয়স ৬০-এর ওপর তাদের বছরে অন্তত একবার ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম এবং ইকোকার্ডিওগ্রাফি করা দরকার। 

    জ্বরের সময় প্রেসারের রোগীরা যাতে অবশ্যই চিকিৎসককে দেখিয়ে প্রেসার অ্যাডজাস্ট করেন, সেই পরামর্শও দিয়েছেন চিকিৎসকরা। জ্বর হলে ব্লাড প্রেসার কমে যায়। সেই সময় ব্লাড প্রেসারের ওষুধের চাহিদা কমে যায়। এর পাশাপাশি শীতকালে ব্লাড প্রেসার পরীক্ষারও পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক।

    আর, প্রেসার যদি ঘনঘন বাড়ে বা কমে, তাহলে দেরি না করে অবিলম্বে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে রক্তচাপের এই বাড়া কমার পেছনে কোন কারণ রয়েছে, তা দ্রুত জানা জরুরি। আর, সেই কারণ দূর করাও জরুরি বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। 

    সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

  • শীতে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে যেসব খাবারে ভরসা রাখবেন

    শীতে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে যেসব খাবারে ভরসা রাখবেন

    শীতকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে থাকে। বিশেষ করে শীতকালে সর্দি-কাশি, হজমে সমস্যা, ক্লান্তি এবং ঘন ঘন সংক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। এ জন্য রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সঠিক পুষ্টির প্রয়োজন হয়। যদিও এমন কোনো নিদিষ্ট খাবার নেই, যে খাবার শরীরে প্রয়োজনীয় সব উপাদান পুষ্টি সরবরাহ করবে।

    এ বিষয়ে ‘রাইয়ান হেল্থ কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার’-এর পুষ্টিবিদ লিনা আকতার বলেছেন, সব খাদ্যগোষ্ঠী থেকে নানা ধরনের বৈচিত্র্যময় খাবার খাওয়া নিশ্চিত করতে হবে, যা আপনার শরীরকে জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে সুস্থ রাখবে।

    চলুন জেনে নেওয়া যাক, পুষ্টিবিদ লিনা আকতার শীতে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কোন খাবার গ্রহণ করা উচিত বলে জানিয়েছেন—

    ভিটামিন ‘সি’

    আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন ‘সি’ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যেহেতু আমাদের শরীর ভিটামিন ‘সি’ তৈরি করে না, তাই খাদ্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। সে জন্য সিট্রাসযুক্ত বা ভিটামিন ‘সি’ যুক্ত খাবার বেশি করে গ্রহণ করতে হবে। এই যেমন আমলকী, লেবু, পেয়ারা ইত্যাদি।

    ভিটামিন ‘ডি’

    শীতকালে মানুষ বাইরে কম থাকে। এ ছাড়া কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশের কারণে এ সময় সূর্যের আলো পর্যাপ্ত পাওয়া যায় না। তাই ভিটামিন ‘ডি’ পাওয়া যায় না। সূর্যের আলো থেকে আমরা ভিটামিন ‘ডি’ বেশি পাই। তাই যাদের ক্রনিক রোগ আছে, তারা চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন ‘ডি’ পরিপূরক খেতে পারেন। আর ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাবার হলো— ডিমের কুসুম, মাশরুম, সামুদ্রিক মাছ, ‘ফরটিফায়েড সিরিয়াল’ প্রভৃতি। এটি শুধু একটি ভিটামিন নয়, বরং শরীরে হরমোন হিসেবে কাজ করে থাকে, যা রোগপ্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

    ফাইটোক্যামিকেল

    যেসব ফল ও শাকসবজি উজ্জ্বল রঙের, যেমন— লাল, নীল, কমলা বা হলুদ, সবুজ ইত্যাদি সেসবে এ উপাদান থাকে।

    টমেটো, ক্যাপসিকাম, স্ট্রবেরি ইত্যাদি লাল-ধর্মী খাবারগুলোতে শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরে ক্ষতিকর কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। আম, গাজর, মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন রয়েছে, যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

    আর সবুজ শাকসবজিতে ‘ক্লোরোফিল’ নামক ফাইটোক্যামিকেল রয়েছে। এ ছাড়া ‘ইনডোল’য়ের মতো নিদিষ্ট ক্যানসার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা রোগপ্রতিরোধে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া শীতকালে পাওয়া যায় এমন শাকসবজি— পালংশাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি ইত্যাদি।

    প্রোবায়োটিক

    শীতকালে নাড়াচড়া করা হয় না তেমন। এ কারণে অনেকেরই হজমশক্তি ভালো হয় না। পাকস্থলী আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার একটি বিশাল অংশ।

    এ সময় প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- দই নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে খেতে পারলে হজমশক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি রোগপ্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

    এ ছাড়া হজমশক্তি ভালো করতে আঁশসমৃদ্ধ শাকসবজি ও ফল গ্রহণ করা উচিত। এটি প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করবে। 

    বাদাম

    নানা প্রকার বাদাম খাওয়া যেতে পারে। এতে ভিটামিন ‘ই’ রয়েছে। এ ছাড়া থাকে প্রোটিন, আঁশ ও স্বাস্থ্যকর চর্বি, যা ঘন ঘন ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে।

    জিঙ্ক

    শীতে অনেকেই সর্দি-কাশি, ফ্লু, ডায়রিয়ার মতো সমস্যায় ভুগে থাকেন। সে জন্য জিঙ্কসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি। এ খনিজের উৎস হিসেবে রয়েছে- বাদাম, তিসি-বীজ, চিয়া-বীজ, শস্য ইত্যাদি।

    মসলা

    শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, সর্দি, কাশির প্রকোপ কমাতে তেজপাতা, কালো মরিচ খাওয়া উপকারী। এ ছাড়া রয়েছে রসুন, যা থেকে মিলবে ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়া রোধী উপাদান। আরও গ্রহণ করা যেতে পারে হলুদ-দুধ কিংবা হলুদ-পানি। কারণ হলুদে কারকিউমিন নামক উপাদান শরীরে প্রদাহ এবং শীতকালীন সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

    পানি বা তরল খাবার

    শীতকালে ঋতু পরিবর্তনের ফলে বাতাস শুষ্ক হয়ে যায়, যা দেহকে ‘ডিহাইড্রেইট’ বা পানিশূন্য করে ফেলতে পারে। আবার গরম কম থাকায়, পিপাসা লাগে কম। ফলে অনেকের পানি পানের পরিমাণ কমে যায় । তবে সুস্থ থাকতে দিনে কমপক্ষে আট গ্লাস পানি পান করুন। আর আর্দ্র থাকতে পানি-ধর্মী সবজি ও ফল খাওয়া উপকারী, যেমন- শসা, কলা, টমেটো ইত্যাদি।

    টিপস 

    ১। পরিষ্কার পরিছন্ন থাকতে হবে।

    ২। ঠান্ডা বাতাস থেকে রক্ষায় গরম কাপড় পরিধান করা উচিত। 

    ৩। পর্যাপ্ত ঘুমানোর প্রয়োজন আছে।

    ৪। মানসিক চাপ বা ‘স্ট্রেস’ কমাতে হবে।

    ৫। যাদের আগে থেকে ফ্লু-ধর্মী সমস্যা রয়েছে, তারা নিয়মিত গরম পানির ভাপ নিন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসক কাছ থেকে ফ্লু ভ্যাকসিন নিতে পারেন।

    ৬। নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। 

    ৭। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। কারণ ব্যায়াম করলে ঠাণ্ডা লাগার সম্ভাবনা কম থাকে।

  • শীতকালে শিশুর ডায়রিয়া কেন হয় জানেন কি?

    শীতকালে শিশুর ডায়রিয়া কেন হয় জানেন কি?

    শীতকালে ডায়রিয়ার লক্ষণ বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে শিশুদের। আর আমাদের দেশে বছরের দুই সময়ে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিক মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে বর্ষার আগে আগে, যখন তাপমাত্রা অনেক উত্তপ্ত থাকে। আর দ্বিতীয়ত শীতের আগে আগে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়া শুরু হয় এবং পুরো জানুয়ারি পর্যন্ত তা চলমান থাকে।

    শীতে ডায়রিয়া হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে— রোটাভাইরাস ও নোরোভাইরাসের মতো ভাইরাসের সংক্রমণ, যা ঠান্ডায় বেশি ছড়ায় এবং মানুষ ঘরের ভেতরে বেশি থাকায় ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া তাপমাত্রা পরিবর্তন, দূষিত খাবার ও পানি এবং পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্রমে পরিবর্তনও শীতকালীন ডায়রিয়ার প্রধান কারণ।

    শীতকালে ডায়রিয়ার কারণসমূহ

    রোটাভাইরাস, নোরোভাইরাস এবং অ্যাডিনোভাইরাস শীতকালে বেশি সক্রিয় থাকে এবং পেটের সংক্রমণ ঘটায়। সে কারণে শীতে শিশুদের বেশি ডায়রিয়া দেখা দেয়। আর ঠান্ডায় খাবার সহজে নষ্ট না হলেও দূষিত পানি কিংবা খাবার থেকে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

    এ ছাড়া শীতকালে মানুষ ঘরে বেশি থাকে। ফলে ভাইরাস সহজেই একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে পড়ে। আর হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তন হলে পরিপাকতন্ত্রে চাপ পড়ে। সে কারণে ডায়রিয়া হতে পারে। যদিও শীতকালে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনে হজম প্রক্রিয়া প্রভাবিত হয়।

    এ বিষয়ে ডা. লুবাবা শাহরিন বলেছেন, শীতকালে যে আউটব্রেক দেখি, তা ভাইরাসের জন্য। এর মাঝে রোটাভাইরাস অন্যতম। এ ছাড়া আরও অনেক ভাইরাস আছে। যেগুলোর লক্ষণ রোটাভাইরাসের মতোই।

    তিনি বলেন, শীতকালীন ডায়রিয়ার পেছনে যে কেবল রোটাভাইরাসই দায়ী, এ কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। আমরা কখনোই এটা খুঁজে বের করিনি যে, এই ডায়রিয়াটা রোটা দিয়ে হচ্ছে, নাকি অন্যকিছু দিয়ে হচ্ছে। কারণ এর একটা কমন প্যাটার্ন আছে। তা হলো— যে কোনো ভাইরাস দিয়েই আক্রান্ত হোক না কেন, এটি সেলফ-লিমিটিং; অর্থাৎ নিজে নিজে ভালো হয়ে যাওয়া। এই ডায়রিয়ার পেছনের কারণগুলোর মাঝে রোটাভাইরাস অন্যতম প্রধান ভাইরাস। তবে ডায়রিয়াটা এডিনো বা অ্যাস্ট্রো ভাইরাসের কারণেও হতে পারে। কিন্তু কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষণ আছে, যা দেখলে বোঝা যাবে ভাইরাল ইনফেকশন হয়েছে। যেমন— হালকা কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া, সামান্য জ্বর (১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো), থেমে থেমে বমি এবং মলে জলীয় অংশের আধিক্য। সবশেষ লক্ষণ দুটো যখন দেখা যাবে, তখন বুঝতে হবে যে, সে ভাইরাল ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সাধারণত হাতে ময়লা থাকলে বা হাত না ধুয়ে শিশুকে খাবার খাওয়ালে ভাইরাল ডায়রিয়া হয়। তবে রোগীকে যদি পরিপূর্ণ যত্ন ও চিকিৎসা প্রদান করা হয়, তাহলে এই ভাইরাল ডায়রিয়া সাত দিনের মাথায় ভালো হয়ে যায়।

    সাধারণত শীতকালে শিশু মৃদু অসুস্থতা নিয়ে আসে। এ সময় শিশুর পানিশূন্যতা কম থাকে। এর অর্থ— আপনার শিশুকে বাসায় রেখে যদি স্যালাইন ঠিকমতো খাওয়ান, তখন হাসপাতালে আনার মতো অবস্থা হয় না।

    কিন্তু গরমকালে ডায়রিয়া হলে অনেক শিশুর মারাত্মক পানিশূন্যতা দেখা দেয়। কারণ এ সময় আপনার শিশু অনেক বেশি ঘেমে যায়। তাই গরমকালে ডায়রিয়া হলে সেটি অনেক বেশি দুশ্চিন্তার।

    ডা. লুবাবা শাহরিন বলেন, ভাইরাল ইনফেকশন শিশুদের মাঝে খুব সাধারণ একটা রোগ। দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা দুই-চারবার এ রকম ভাইরাল ইনফেকশনে ভোগে। এতে করে তার শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তাই এটা নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই।

    তিনি বলেন, আর ডায়রিয়া চলাকালীন পরিমাণমতো ওরস্যালাইন খাওয়াতে হবে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভাইরাল ইনফেকশনের সময় আপনার শিশুর ডায়রিয়া হলে তাকে সঠিক পরিমাণে সালাইন দিতে হবে। শিশুর ওজন যত, প্রতিবার ডায়রিয়ার পর ঠিক তত চা চামচ পরিমাণ স্যালাইন খাওয়াতে হবে। আপনার শিশুর ওজন যদি আট কেজি হয়, তাহলে সে প্রত্যেকবার পায়খানার পর আট চা চামচ স্যালাইন খাবে।

    তিনি আরও বলেন, ওরস্যালাইন একটা ওষুধ। এটা পরিমাণমতো খাওয়াতে হবে। এটা বানাতেও হবে একেবারে চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী। এ ক্ষেত্রে ওরস্যালাইন পানির বোতলে গুলিয়ে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত রেখে দিতে পারেন। এর মাঝে শিশুকে যতটুকু খাওয়ানোর কথা, তা খাইয়ে সময় পার হলে বাকিটা ফেলে দেব।

  • শীত আসতেই গায়ের চামড়া উঠেছে? প্রতিকার কী

    শীত আসতেই গায়ের চামড়া উঠেছে? প্রতিকার কী

    শীত এলেই অনেকেরই হাতে ফোসকা দেখা দেয়। আর ফোসকাগুলোর কারণে হাত বা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চামড়া ওঠতে থাকে। এটি অনেকেরই একটি প্রধান শীতকালীন সমস্যা। ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে হাতের ত্বকে খসখসে, রুক্ষ ও সাদা দাগ দেখা দিতে পারে।

    ঘন ঘন হাত ধোয়া, সাবানের অতিরিক্ত ব্যবহার এবং ঠাণ্ডা পানির সংস্পর্শে আসার ফলে প্রায়শই এই সমস্যাটি আরো বেড়ে যায়। অনেকের জ্বালাপোড়া এবং হালকা চুলকানিও হয়। কেন এই সমস্যা দেখা দেয় এবং এর থেকে বাঁচার উপায় কী, তা জানাতেই আজকের প্রতিবেদন। চলুন, জেনে নেওয়া যাক—

    আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতকালে হাতের তালুর ত্বকের ওপরের স্তরটি প্রায়ই মৃত কোষ হিসেবে খোসা ছাড়তে শুরু করে।

    এটি সাধারণত ত্বকের আর্দ্রতা হ্রাস বা ত্বকে অতিরিক্ত ঠাণ্ডা স্পর্শ, অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার বা হালকা একজিমার কারণে ঘটে। এই সমস্যা এড়াতে হাতকে ময়েশ্চারাইজ করা উচিত।

    বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, যদি সময়মতো যত্ন না নেওয়া হয়, তাহলে এই খসখসে শুষ্কতা ছোট ছোট ফাটলে পরিণত হতে পারে, যা সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ায়। তাই এই ঋতুতে ত্বকের অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন, যার জন্য সকালে গোসলের পর এবং রাতে ঘুমানোর আগে হাতে ময়েশ্চারাইজার লাগানো উচিত। যদি সম্ভব হয় তাহলে গ্লাভস পরা খুবই উপকারী।

    হাতের ফোসকা প্রতিরোধে ঘরোয়া প্রতিকারের সম্পর্কে বলতে গিয়ে আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা নারকেল তেল লাগানোর কথা বলেন। কারণ, এটি ত্বককে ভেতর থেকে পুষ্টি জোগায়। এর ছত্রাক-বিরোধী ও ময়েশ্চারাইজিং বৈশিষ্ট্যও উপকারে আসে। গ্লিসারিন লাগালে ত্বকের আর্দ্রতা আটকে থাকে এবং হাত দীর্ঘ সময় ধরে নরম থাকে।

    এর পাশাপাশি, হালকা গরম পানিতে কয়েক ফোঁটা লেবু ও মধু মিশিয়ে হাত ধোয়ার মাধ্যমেও আরাম পাওয়া যায়।
    হাতের তালুতে ত্বকের সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। তার জন্য যেমন শীতকালে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়া এড়িয়ে চলা এবং সাবানের পরিবর্তে হালকা হাত ধোয়ার প্রাকৃতিক তেল ব্যবহার করা। এটি শীতকালে ত্বকের সংক্রমণ এবং ত্বকের খোসা ছাড়ানোর সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে।

  • শীতকালে দূষণ বাড়াচ্ছে চোখের সমস্যা, জানুন সুরক্ষার উপায়

    শীতকালে দূষণ বাড়াচ্ছে চোখের সমস্যা, জানুন সুরক্ষার উপায়

    শীতকালে ঘোরাঘুরি আর আগের মতো নিশ্চিন্তে করা যাচ্ছে না। দূষণের কারণে চোখের ক্ষতি বাড়ছে, যার হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই মাস্ক ব্যবহার শুরু করেছেন। কিন্তু চোখের সমস্যা আটকানো সহজ নয়।

    বিশেষ করে বড় শহরে দূষণের প্রভাবে চোখ শুকিয়ে যাওয়া, অস্বস্তি, চোখজ্বালা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

    যা শিশুদের মধ্যে সমস্যা বেশি। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা, নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড ও ওজোন চোখের প্রাকৃতিক ‘ফিল্ম’ ও চোখের ত্রিস্তরীয় তরলের আস্তরণকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এর ফলে প্রদাহ, চোখজ্বালা ও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অশ্রুর উৎপাদনও কমছে।

    চোখে দূষণের প্রভাব সহজেই বোঝা যায় কিছু উপসর্গ দেখে; চোখ শুকিয়ে যাওয়া, ঘন ঘন সংক্রমণ, অ্যালার্জির কারণে কনজাঙ্কটিভাইটিস, ধুলো ও আলোতে অস্বস্তি, কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারে সমস্যা। ছোট শিশুদের মধ্যেও সমস্যা বাড়ছে, বিশেষ করে স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে। ধুলো, ধোঁয়া, রাসায়নিক ও বিষাক্ত উপাদান চোখের মারাত্মক ক্ষতি করছে।

    চিকিৎসকরা চোখকে দূষণ থেকে রক্ষা করার কিছু উপায় দিয়েছেন:
    ১। বাড়ির বাইরে গেলে সানগ্লাস বা চশমা ব্যবহার করুন।

    ২। বাড়ি ফিরে ভালোভাবে চোখে পানির ঝাপটা দিন, চোখের পাতা ও পল্লব পরিষ্কার করুন।

    ৩। পর্যাপ্ত পানি পান করুন, যাতে অশ্রু উৎপাদন স্বাভাবিক থাকে।

    ৪। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে আই ড্রপ ব্যবহার করুন।

    ৫। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র ব্যবহার করে ঠাণ্ডা হাওয়ার সরাসরি সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।

    ৬। ঘরের ভিতরের তাপমাত্রার সঙ্গে বাইরের তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখুন।

    ৭। দূষণ বেশি হলে কন্টাক্ট লেন্সের ব্যবহার কমান।

    ৮। একটানা কম্পিউটার, টিভি বা মোবাইলের দিকে তাকাবেন না; প্রতি মিনিটে ১০-১৫ সেকেন্ড বিরতি নিন।

    ৯। চোখের পাতা ঘন ঘন ফেলুন এবং স্ক্রিন চোখের সরাসরি সামনে না রেখে একটু নিচে রাখুন।

    সূত্র: এবিপি

  • কিডনির রোগের আসল কারণ খুঁজে পেলেন গবেষকরা

    কিডনির রোগের আসল কারণ খুঁজে পেলেন গবেষকরা

    কিডনির রোগ কেন হয়? শুধু কি পানি কম খাওয়ার কারণে হয়, নাকি এর নেপথ্যে অন্য কোনো কারণ রয়েছে, যে কিনা কিডনি রোগের ওপর দাপট দেখিয়ে চলে? এ বিষয়ে গবেষকরা জানিয়েছেন, কিডনি রোগের ওপর এক বিশেষ ধরনের স্নেহপদার্থ দাপট দেখায়। সেটি শরীরের শক্তি উৎপাদনকারী কোষ মাইটোকনড্রিয়াকে ফালা ফালা করে দেয়। এর ফলে শক্তি তৈরির প্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে যায়। কোষকে শক্তিহীন করে দিয়ে সেটি সরাসরি আঘাত হানে কিডনির ওপরে। একে একে নষ্ট করতে থাকে কিডনির সুস্থ ও সবল কোষগুলোকে। ফলে যে রোগটি দেখা দেয়, তার নাম ‘অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি’। মূলত এটিই হলো সূত্রপাত। কিডনির কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে হতে শেষে কিডনি বিকল হওয়া শুরু হয়।

    হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের সঙ্গে এ গবেষণায় রয়েছে ইউনিভার্সিটি অফ ইউটা।  সেখানকার গবেষকরা জানিয়েছেন, সেই স্নেহপদার্থটির নাম ‘সেরামাইড’। এটি সবার শরীরেই থাকে। তবে বাইরের খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার কিংবা জাঙ্কফুড বেশি খেলে এর মাত্রা বেড়ে যায়। এই ‘সেরামাইড’ যদি অধিক পরিমাণে রক্তে মিশে যায়, তাহলে সেটি মাইটোকনড্রিয়ার ওপর হামলা করে। আর মাইটোকনড্রিয়া হলো আপনার শরীরের শক্তি তৈরির ঘর। সেখানে কোষের জন্য শক্তি (এটিপি) তৈরি হয়। কোষের জন্ম-মৃত্যু, ক্যালশিয়াম সঞ্চয় করে রাখা, সংকেত আদান-প্রদানেও এর বড় ভূমিকা আছে। মাইটোকনড্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হলে কোষের শক্তি তৈরির প্রক্রিয়াটিই নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কোষগুলোর সুরক্ষাকবচ নষ্ট হতে থাকে। সেই সুযোগে সেরামাইড আক্রমণ করে কিডনির কোষগুলোকে।

    গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, সেরামাইডের আধিক্য ঘটলে কিডনির সব মাইটোকনড্রিয়া কোষগুলোকে নষ্ট করে দিতে পারে। ফলে কিডনির সুস্থ কোষগুলো অকেজো হয়ে যেতে থাকে। 

    এ নিয়ে গবেষকরা ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা করে দেখেছেন, সেরামাইড বেশি হলে কিডনি ফেলিওরের লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। আবার সেরামাইডের মাত্রা কমিয়ে ফেললেই কিডনি সুস্থ হচ্ছে ধীরে ধীরে। সেরামাইডের পরিমাণ যদি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তাহলেই কিডনির অসুখ হওয়ার ঝুঁকি পুরোপুরি কমে যাবে বলেই দাবি করেছেন গবেষকরা। 

    সে ক্ষেত্রে সেরামাইডের মাত্রা কমাতে হলে বিশেষ কোনো ওষুধ খেতে হবে, তা না হলে ইনজেকশন নিতে হবে। কী উপায়ে সেরামাইডকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে, সে চেষ্টাই করছেন গবেষকরা। মানুষের ওপর পরীক্ষা করেও দেখা হচ্ছে। 

    গবেষকরা ‘সেরামাইড কন্ট্রোল থেরাপি’ করে দেখছেন সেটি কতটা কার্যকরী হয়। যত জনের ওপর এ থেরাপি করা হয়েছে, তাদের কিডনির রোগ নির্মূল হওয়ার পথে বলেও দাবি করা হয়েছে। থেরাপিটি করার পর কিছু বদল দেখা গেছে রোগীর শরীরে— প্রথমত  কিডনির ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলো মেরামত হয়েছে। দ্বিতীয়ত কিডনির ক্রনিক রোগে যারা আক্রান্ত, তাদের ডায়ালাইসিসের প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই কমেছে। তৃতীয়ত শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে গেছে।

    তবে গবেষণাটি আরও বৃহত্তর পর্যায়ে করা উচিত বলেই জানিয়েছেন গবেষকরা। রোগীর শারীরিক অবস্থা বিচার করেই থেরাপি করা হবে। সবার ক্ষেত্রে যদি একই রকম কার্যকরী ফল দেয়, তাহলেই থেরাপিটি কিডনির অসুখ সারাতে প্রয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।