Category: অসুখ-বিসুখ

  • শীতে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে যেসব খাবারে ভরসা রাখবেন

    শীতে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে যেসব খাবারে ভরসা রাখবেন

    শীতকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে থাকে। বিশেষ করে শীতকালে সর্দি-কাশি, হজমে সমস্যা, ক্লান্তি এবং ঘন ঘন সংক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। এ জন্য রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সঠিক পুষ্টির প্রয়োজন হয়। যদিও এমন কোনো নিদিষ্ট খাবার নেই, যে খাবার শরীরে প্রয়োজনীয় সব উপাদান পুষ্টি সরবরাহ করবে।

    এ বিষয়ে ‘রাইয়ান হেল্থ কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার’-এর পুষ্টিবিদ লিনা আকতার বলেছেন, সব খাদ্যগোষ্ঠী থেকে নানা ধরনের বৈচিত্র্যময় খাবার খাওয়া নিশ্চিত করতে হবে, যা আপনার শরীরকে জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে সুস্থ রাখবে।

    চলুন জেনে নেওয়া যাক, পুষ্টিবিদ লিনা আকতার শীতে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কোন খাবার গ্রহণ করা উচিত বলে জানিয়েছেন—

    ভিটামিন ‘সি’

    আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন ‘সি’ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যেহেতু আমাদের শরীর ভিটামিন ‘সি’ তৈরি করে না, তাই খাদ্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। সে জন্য সিট্রাসযুক্ত বা ভিটামিন ‘সি’ যুক্ত খাবার বেশি করে গ্রহণ করতে হবে। এই যেমন আমলকী, লেবু, পেয়ারা ইত্যাদি।

    ভিটামিন ‘ডি’

    শীতকালে মানুষ বাইরে কম থাকে। এ ছাড়া কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশের কারণে এ সময় সূর্যের আলো পর্যাপ্ত পাওয়া যায় না। তাই ভিটামিন ‘ডি’ পাওয়া যায় না। সূর্যের আলো থেকে আমরা ভিটামিন ‘ডি’ বেশি পাই। তাই যাদের ক্রনিক রোগ আছে, তারা চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন ‘ডি’ পরিপূরক খেতে পারেন। আর ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাবার হলো— ডিমের কুসুম, মাশরুম, সামুদ্রিক মাছ, ‘ফরটিফায়েড সিরিয়াল’ প্রভৃতি। এটি শুধু একটি ভিটামিন নয়, বরং শরীরে হরমোন হিসেবে কাজ করে থাকে, যা রোগপ্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

    ফাইটোক্যামিকেল

    যেসব ফল ও শাকসবজি উজ্জ্বল রঙের, যেমন— লাল, নীল, কমলা বা হলুদ, সবুজ ইত্যাদি সেসবে এ উপাদান থাকে।

    টমেটো, ক্যাপসিকাম, স্ট্রবেরি ইত্যাদি লাল-ধর্মী খাবারগুলোতে শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরে ক্ষতিকর কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। আম, গাজর, মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন রয়েছে, যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

    আর সবুজ শাকসবজিতে ‘ক্লোরোফিল’ নামক ফাইটোক্যামিকেল রয়েছে। এ ছাড়া ‘ইনডোল’য়ের মতো নিদিষ্ট ক্যানসার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা রোগপ্রতিরোধে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া শীতকালে পাওয়া যায় এমন শাকসবজি— পালংশাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি ইত্যাদি।

    প্রোবায়োটিক

    শীতকালে নাড়াচড়া করা হয় না তেমন। এ কারণে অনেকেরই হজমশক্তি ভালো হয় না। পাকস্থলী আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার একটি বিশাল অংশ।

    এ সময় প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- দই নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে খেতে পারলে হজমশক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি রোগপ্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

    এ ছাড়া হজমশক্তি ভালো করতে আঁশসমৃদ্ধ শাকসবজি ও ফল গ্রহণ করা উচিত। এটি প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করবে। 

    বাদাম

    নানা প্রকার বাদাম খাওয়া যেতে পারে। এতে ভিটামিন ‘ই’ রয়েছে। এ ছাড়া থাকে প্রোটিন, আঁশ ও স্বাস্থ্যকর চর্বি, যা ঘন ঘন ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে।

    জিঙ্ক

    শীতে অনেকেই সর্দি-কাশি, ফ্লু, ডায়রিয়ার মতো সমস্যায় ভুগে থাকেন। সে জন্য জিঙ্কসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি। এ খনিজের উৎস হিসেবে রয়েছে- বাদাম, তিসি-বীজ, চিয়া-বীজ, শস্য ইত্যাদি।

    মসলা

    শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, সর্দি, কাশির প্রকোপ কমাতে তেজপাতা, কালো মরিচ খাওয়া উপকারী। এ ছাড়া রয়েছে রসুন, যা থেকে মিলবে ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়া রোধী উপাদান। আরও গ্রহণ করা যেতে পারে হলুদ-দুধ কিংবা হলুদ-পানি। কারণ হলুদে কারকিউমিন নামক উপাদান শরীরে প্রদাহ এবং শীতকালীন সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

    পানি বা তরল খাবার

    শীতকালে ঋতু পরিবর্তনের ফলে বাতাস শুষ্ক হয়ে যায়, যা দেহকে ‘ডিহাইড্রেইট’ বা পানিশূন্য করে ফেলতে পারে। আবার গরম কম থাকায়, পিপাসা লাগে কম। ফলে অনেকের পানি পানের পরিমাণ কমে যায় । তবে সুস্থ থাকতে দিনে কমপক্ষে আট গ্লাস পানি পান করুন। আর আর্দ্র থাকতে পানি-ধর্মী সবজি ও ফল খাওয়া উপকারী, যেমন- শসা, কলা, টমেটো ইত্যাদি।

    টিপস 

    ১। পরিষ্কার পরিছন্ন থাকতে হবে।

    ২। ঠান্ডা বাতাস থেকে রক্ষায় গরম কাপড় পরিধান করা উচিত। 

    ৩। পর্যাপ্ত ঘুমানোর প্রয়োজন আছে।

    ৪। মানসিক চাপ বা ‘স্ট্রেস’ কমাতে হবে।

    ৫। যাদের আগে থেকে ফ্লু-ধর্মী সমস্যা রয়েছে, তারা নিয়মিত গরম পানির ভাপ নিন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসক কাছ থেকে ফ্লু ভ্যাকসিন নিতে পারেন।

    ৬। নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। 

    ৭। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। কারণ ব্যায়াম করলে ঠাণ্ডা লাগার সম্ভাবনা কম থাকে।

  • শীতকালে শিশুর ডায়রিয়া কেন হয় জানেন কি?

    শীতকালে শিশুর ডায়রিয়া কেন হয় জানেন কি?

    শীতকালে ডায়রিয়ার লক্ষণ বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে শিশুদের। আর আমাদের দেশে বছরের দুই সময়ে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিক মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে বর্ষার আগে আগে, যখন তাপমাত্রা অনেক উত্তপ্ত থাকে। আর দ্বিতীয়ত শীতের আগে আগে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়া শুরু হয় এবং পুরো জানুয়ারি পর্যন্ত তা চলমান থাকে।

    শীতে ডায়রিয়া হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে— রোটাভাইরাস ও নোরোভাইরাসের মতো ভাইরাসের সংক্রমণ, যা ঠান্ডায় বেশি ছড়ায় এবং মানুষ ঘরের ভেতরে বেশি থাকায় ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া তাপমাত্রা পরিবর্তন, দূষিত খাবার ও পানি এবং পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্রমে পরিবর্তনও শীতকালীন ডায়রিয়ার প্রধান কারণ।

    শীতকালে ডায়রিয়ার কারণসমূহ

    রোটাভাইরাস, নোরোভাইরাস এবং অ্যাডিনোভাইরাস শীতকালে বেশি সক্রিয় থাকে এবং পেটের সংক্রমণ ঘটায়। সে কারণে শীতে শিশুদের বেশি ডায়রিয়া দেখা দেয়। আর ঠান্ডায় খাবার সহজে নষ্ট না হলেও দূষিত পানি কিংবা খাবার থেকে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

    এ ছাড়া শীতকালে মানুষ ঘরে বেশি থাকে। ফলে ভাইরাস সহজেই একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে পড়ে। আর হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তন হলে পরিপাকতন্ত্রে চাপ পড়ে। সে কারণে ডায়রিয়া হতে পারে। যদিও শীতকালে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনে হজম প্রক্রিয়া প্রভাবিত হয়।

    এ বিষয়ে ডা. লুবাবা শাহরিন বলেছেন, শীতকালে যে আউটব্রেক দেখি, তা ভাইরাসের জন্য। এর মাঝে রোটাভাইরাস অন্যতম। এ ছাড়া আরও অনেক ভাইরাস আছে। যেগুলোর লক্ষণ রোটাভাইরাসের মতোই।

    তিনি বলেন, শীতকালীন ডায়রিয়ার পেছনে যে কেবল রোটাভাইরাসই দায়ী, এ কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। আমরা কখনোই এটা খুঁজে বের করিনি যে, এই ডায়রিয়াটা রোটা দিয়ে হচ্ছে, নাকি অন্যকিছু দিয়ে হচ্ছে। কারণ এর একটা কমন প্যাটার্ন আছে। তা হলো— যে কোনো ভাইরাস দিয়েই আক্রান্ত হোক না কেন, এটি সেলফ-লিমিটিং; অর্থাৎ নিজে নিজে ভালো হয়ে যাওয়া। এই ডায়রিয়ার পেছনের কারণগুলোর মাঝে রোটাভাইরাস অন্যতম প্রধান ভাইরাস। তবে ডায়রিয়াটা এডিনো বা অ্যাস্ট্রো ভাইরাসের কারণেও হতে পারে। কিন্তু কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষণ আছে, যা দেখলে বোঝা যাবে ভাইরাল ইনফেকশন হয়েছে। যেমন— হালকা কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া, সামান্য জ্বর (১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো), থেমে থেমে বমি এবং মলে জলীয় অংশের আধিক্য। সবশেষ লক্ষণ দুটো যখন দেখা যাবে, তখন বুঝতে হবে যে, সে ভাইরাল ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সাধারণত হাতে ময়লা থাকলে বা হাত না ধুয়ে শিশুকে খাবার খাওয়ালে ভাইরাল ডায়রিয়া হয়। তবে রোগীকে যদি পরিপূর্ণ যত্ন ও চিকিৎসা প্রদান করা হয়, তাহলে এই ভাইরাল ডায়রিয়া সাত দিনের মাথায় ভালো হয়ে যায়।

    সাধারণত শীতকালে শিশু মৃদু অসুস্থতা নিয়ে আসে। এ সময় শিশুর পানিশূন্যতা কম থাকে। এর অর্থ— আপনার শিশুকে বাসায় রেখে যদি স্যালাইন ঠিকমতো খাওয়ান, তখন হাসপাতালে আনার মতো অবস্থা হয় না।

    কিন্তু গরমকালে ডায়রিয়া হলে অনেক শিশুর মারাত্মক পানিশূন্যতা দেখা দেয়। কারণ এ সময় আপনার শিশু অনেক বেশি ঘেমে যায়। তাই গরমকালে ডায়রিয়া হলে সেটি অনেক বেশি দুশ্চিন্তার।

    ডা. লুবাবা শাহরিন বলেন, ভাইরাল ইনফেকশন শিশুদের মাঝে খুব সাধারণ একটা রোগ। দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা দুই-চারবার এ রকম ভাইরাল ইনফেকশনে ভোগে। এতে করে তার শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তাই এটা নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই।

    তিনি বলেন, আর ডায়রিয়া চলাকালীন পরিমাণমতো ওরস্যালাইন খাওয়াতে হবে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভাইরাল ইনফেকশনের সময় আপনার শিশুর ডায়রিয়া হলে তাকে সঠিক পরিমাণে সালাইন দিতে হবে। শিশুর ওজন যত, প্রতিবার ডায়রিয়ার পর ঠিক তত চা চামচ পরিমাণ স্যালাইন খাওয়াতে হবে। আপনার শিশুর ওজন যদি আট কেজি হয়, তাহলে সে প্রত্যেকবার পায়খানার পর আট চা চামচ স্যালাইন খাবে।

    তিনি আরও বলেন, ওরস্যালাইন একটা ওষুধ। এটা পরিমাণমতো খাওয়াতে হবে। এটা বানাতেও হবে একেবারে চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী। এ ক্ষেত্রে ওরস্যালাইন পানির বোতলে গুলিয়ে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত রেখে দিতে পারেন। এর মাঝে শিশুকে যতটুকু খাওয়ানোর কথা, তা খাইয়ে সময় পার হলে বাকিটা ফেলে দেব।

  • শীত আসতেই গায়ের চামড়া উঠেছে? প্রতিকার কী

    শীত আসতেই গায়ের চামড়া উঠেছে? প্রতিকার কী

    শীত এলেই অনেকেরই হাতে ফোসকা দেখা দেয়। আর ফোসকাগুলোর কারণে হাত বা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চামড়া ওঠতে থাকে। এটি অনেকেরই একটি প্রধান শীতকালীন সমস্যা। ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে হাতের ত্বকে খসখসে, রুক্ষ ও সাদা দাগ দেখা দিতে পারে।

    ঘন ঘন হাত ধোয়া, সাবানের অতিরিক্ত ব্যবহার এবং ঠাণ্ডা পানির সংস্পর্শে আসার ফলে প্রায়শই এই সমস্যাটি আরো বেড়ে যায়। অনেকের জ্বালাপোড়া এবং হালকা চুলকানিও হয়। কেন এই সমস্যা দেখা দেয় এবং এর থেকে বাঁচার উপায় কী, তা জানাতেই আজকের প্রতিবেদন। চলুন, জেনে নেওয়া যাক—

    আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতকালে হাতের তালুর ত্বকের ওপরের স্তরটি প্রায়ই মৃত কোষ হিসেবে খোসা ছাড়তে শুরু করে।

    এটি সাধারণত ত্বকের আর্দ্রতা হ্রাস বা ত্বকে অতিরিক্ত ঠাণ্ডা স্পর্শ, অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার বা হালকা একজিমার কারণে ঘটে। এই সমস্যা এড়াতে হাতকে ময়েশ্চারাইজ করা উচিত।

    বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, যদি সময়মতো যত্ন না নেওয়া হয়, তাহলে এই খসখসে শুষ্কতা ছোট ছোট ফাটলে পরিণত হতে পারে, যা সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ায়। তাই এই ঋতুতে ত্বকের অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন, যার জন্য সকালে গোসলের পর এবং রাতে ঘুমানোর আগে হাতে ময়েশ্চারাইজার লাগানো উচিত। যদি সম্ভব হয় তাহলে গ্লাভস পরা খুবই উপকারী।

    হাতের ফোসকা প্রতিরোধে ঘরোয়া প্রতিকারের সম্পর্কে বলতে গিয়ে আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা নারকেল তেল লাগানোর কথা বলেন। কারণ, এটি ত্বককে ভেতর থেকে পুষ্টি জোগায়। এর ছত্রাক-বিরোধী ও ময়েশ্চারাইজিং বৈশিষ্ট্যও উপকারে আসে। গ্লিসারিন লাগালে ত্বকের আর্দ্রতা আটকে থাকে এবং হাত দীর্ঘ সময় ধরে নরম থাকে।

    এর পাশাপাশি, হালকা গরম পানিতে কয়েক ফোঁটা লেবু ও মধু মিশিয়ে হাত ধোয়ার মাধ্যমেও আরাম পাওয়া যায়।
    হাতের তালুতে ত্বকের সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। তার জন্য যেমন শীতকালে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়া এড়িয়ে চলা এবং সাবানের পরিবর্তে হালকা হাত ধোয়ার প্রাকৃতিক তেল ব্যবহার করা। এটি শীতকালে ত্বকের সংক্রমণ এবং ত্বকের খোসা ছাড়ানোর সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে।

  • শীতকালে দূষণ বাড়াচ্ছে চোখের সমস্যা, জানুন সুরক্ষার উপায়

    শীতকালে দূষণ বাড়াচ্ছে চোখের সমস্যা, জানুন সুরক্ষার উপায়

    শীতকালে ঘোরাঘুরি আর আগের মতো নিশ্চিন্তে করা যাচ্ছে না। দূষণের কারণে চোখের ক্ষতি বাড়ছে, যার হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই মাস্ক ব্যবহার শুরু করেছেন। কিন্তু চোখের সমস্যা আটকানো সহজ নয়।

    বিশেষ করে বড় শহরে দূষণের প্রভাবে চোখ শুকিয়ে যাওয়া, অস্বস্তি, চোখজ্বালা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

    যা শিশুদের মধ্যে সমস্যা বেশি। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা, নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড ও ওজোন চোখের প্রাকৃতিক ‘ফিল্ম’ ও চোখের ত্রিস্তরীয় তরলের আস্তরণকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এর ফলে প্রদাহ, চোখজ্বালা ও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অশ্রুর উৎপাদনও কমছে।

    চোখে দূষণের প্রভাব সহজেই বোঝা যায় কিছু উপসর্গ দেখে; চোখ শুকিয়ে যাওয়া, ঘন ঘন সংক্রমণ, অ্যালার্জির কারণে কনজাঙ্কটিভাইটিস, ধুলো ও আলোতে অস্বস্তি, কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারে সমস্যা। ছোট শিশুদের মধ্যেও সমস্যা বাড়ছে, বিশেষ করে স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে। ধুলো, ধোঁয়া, রাসায়নিক ও বিষাক্ত উপাদান চোখের মারাত্মক ক্ষতি করছে।

    চিকিৎসকরা চোখকে দূষণ থেকে রক্ষা করার কিছু উপায় দিয়েছেন:
    ১। বাড়ির বাইরে গেলে সানগ্লাস বা চশমা ব্যবহার করুন।

    ২। বাড়ি ফিরে ভালোভাবে চোখে পানির ঝাপটা দিন, চোখের পাতা ও পল্লব পরিষ্কার করুন।

    ৩। পর্যাপ্ত পানি পান করুন, যাতে অশ্রু উৎপাদন স্বাভাবিক থাকে।

    ৪। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে আই ড্রপ ব্যবহার করুন।

    ৫। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র ব্যবহার করে ঠাণ্ডা হাওয়ার সরাসরি সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।

    ৬। ঘরের ভিতরের তাপমাত্রার সঙ্গে বাইরের তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখুন।

    ৭। দূষণ বেশি হলে কন্টাক্ট লেন্সের ব্যবহার কমান।

    ৮। একটানা কম্পিউটার, টিভি বা মোবাইলের দিকে তাকাবেন না; প্রতি মিনিটে ১০-১৫ সেকেন্ড বিরতি নিন।

    ৯। চোখের পাতা ঘন ঘন ফেলুন এবং স্ক্রিন চোখের সরাসরি সামনে না রেখে একটু নিচে রাখুন।

    সূত্র: এবিপি

  • কিডনির রোগের আসল কারণ খুঁজে পেলেন গবেষকরা

    কিডনির রোগের আসল কারণ খুঁজে পেলেন গবেষকরা

    কিডনির রোগ কেন হয়? শুধু কি পানি কম খাওয়ার কারণে হয়, নাকি এর নেপথ্যে অন্য কোনো কারণ রয়েছে, যে কিনা কিডনি রোগের ওপর দাপট দেখিয়ে চলে? এ বিষয়ে গবেষকরা জানিয়েছেন, কিডনি রোগের ওপর এক বিশেষ ধরনের স্নেহপদার্থ দাপট দেখায়। সেটি শরীরের শক্তি উৎপাদনকারী কোষ মাইটোকনড্রিয়াকে ফালা ফালা করে দেয়। এর ফলে শক্তি তৈরির প্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে যায়। কোষকে শক্তিহীন করে দিয়ে সেটি সরাসরি আঘাত হানে কিডনির ওপরে। একে একে নষ্ট করতে থাকে কিডনির সুস্থ ও সবল কোষগুলোকে। ফলে যে রোগটি দেখা দেয়, তার নাম ‘অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি’। মূলত এটিই হলো সূত্রপাত। কিডনির কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে হতে শেষে কিডনি বিকল হওয়া শুরু হয়।

    হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের সঙ্গে এ গবেষণায় রয়েছে ইউনিভার্সিটি অফ ইউটা।  সেখানকার গবেষকরা জানিয়েছেন, সেই স্নেহপদার্থটির নাম ‘সেরামাইড’। এটি সবার শরীরেই থাকে। তবে বাইরের খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার কিংবা জাঙ্কফুড বেশি খেলে এর মাত্রা বেড়ে যায়। এই ‘সেরামাইড’ যদি অধিক পরিমাণে রক্তে মিশে যায়, তাহলে সেটি মাইটোকনড্রিয়ার ওপর হামলা করে। আর মাইটোকনড্রিয়া হলো আপনার শরীরের শক্তি তৈরির ঘর। সেখানে কোষের জন্য শক্তি (এটিপি) তৈরি হয়। কোষের জন্ম-মৃত্যু, ক্যালশিয়াম সঞ্চয় করে রাখা, সংকেত আদান-প্রদানেও এর বড় ভূমিকা আছে। মাইটোকনড্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হলে কোষের শক্তি তৈরির প্রক্রিয়াটিই নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কোষগুলোর সুরক্ষাকবচ নষ্ট হতে থাকে। সেই সুযোগে সেরামাইড আক্রমণ করে কিডনির কোষগুলোকে।

    গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, সেরামাইডের আধিক্য ঘটলে কিডনির সব মাইটোকনড্রিয়া কোষগুলোকে নষ্ট করে দিতে পারে। ফলে কিডনির সুস্থ কোষগুলো অকেজো হয়ে যেতে থাকে। 

    এ নিয়ে গবেষকরা ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা করে দেখেছেন, সেরামাইড বেশি হলে কিডনি ফেলিওরের লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। আবার সেরামাইডের মাত্রা কমিয়ে ফেললেই কিডনি সুস্থ হচ্ছে ধীরে ধীরে। সেরামাইডের পরিমাণ যদি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তাহলেই কিডনির অসুখ হওয়ার ঝুঁকি পুরোপুরি কমে যাবে বলেই দাবি করেছেন গবেষকরা। 

    সে ক্ষেত্রে সেরামাইডের মাত্রা কমাতে হলে বিশেষ কোনো ওষুধ খেতে হবে, তা না হলে ইনজেকশন নিতে হবে। কী উপায়ে সেরামাইডকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে, সে চেষ্টাই করছেন গবেষকরা। মানুষের ওপর পরীক্ষা করেও দেখা হচ্ছে। 

    গবেষকরা ‘সেরামাইড কন্ট্রোল থেরাপি’ করে দেখছেন সেটি কতটা কার্যকরী হয়। যত জনের ওপর এ থেরাপি করা হয়েছে, তাদের কিডনির রোগ নির্মূল হওয়ার পথে বলেও দাবি করা হয়েছে। থেরাপিটি করার পর কিছু বদল দেখা গেছে রোগীর শরীরে— প্রথমত  কিডনির ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলো মেরামত হয়েছে। দ্বিতীয়ত কিডনির ক্রনিক রোগে যারা আক্রান্ত, তাদের ডায়ালাইসিসের প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই কমেছে। তৃতীয়ত শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে গেছে।

    তবে গবেষণাটি আরও বৃহত্তর পর্যায়ে করা উচিত বলেই জানিয়েছেন গবেষকরা। রোগীর শারীরিক অবস্থা বিচার করেই থেরাপি করা হবে। সবার ক্ষেত্রে যদি একই রকম কার্যকরী ফল দেয়, তাহলেই থেরাপিটি কিডনির অসুখ সারাতে প্রয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

  • অল্প বয়সে হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে যা করবেন

    অল্প বয়সে হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে যা করবেন

    গত কয়েকদিন ধরে খুব কাছের কিছু মানুষের মৃত্যু সংবাদ পাচ্ছি। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অল্প বয়সে অনেকেই মারা যাচ্ছেন ইদানীং। আপনারাও হয়তো অনেকের এরকম মৃত্যু সংবাদ পাচ্ছেন।

    হৃদরোগের মৃত্যু মানে আগে আমরা যেটা ভাবতাম একটু  বেশি বয়সে হবে, সেটি এখন কম বয়সী মানুষেরও হচ্ছে। 

    জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ২০ বছর বয়সী রোগীও আমরা মেসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়ে আসতে দেখেছি। এখন প্রতিনিয়তই ২০-৩০-৪০ বছর বয়স্ক মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। 

    এ বিষয়ে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং কেন হৃদরোগের সংখ্যা ও অন্যান্য নন কমিউনিকেবল ডিজিজ এর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে এ বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। 

    এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। তবে আমাদের জীবনযাত্রার জন্য এই ঝুঁকি অনেক বাড়ছে।

    ১) পারিবারিক ও জন্মগতভাবে অনেকের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। 

    ২) আমাদের লাইফস্টাইল- আমরা অনেক বেশি স্ট্রেসফুল জীবনযাপন করছি, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করছি।   

    ৩) ধুমপান, এলকোহল,মাদকসহ সব ধরনের নেশা জাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার ও প্রচলন বেড়েছে 

    ৪) অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা: আমাদের আয়ের চেয়ে খরচ বেশি হওয়াতে এবং বিভিন্ন ধরনের দুশ্চিন্তা যুক্ত হওয়ায় আমরা হৃদরোগের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছি। 

    ৫) অস্বাস্থ্যকর খাবার ও অনিয়ন্ত্রিত খাবার। 

    ৬) পরিবেশ দূষণ: বর্তমান সময়ে পরিবেশ দূষণ আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। 

    ৭) ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না রাখা। কখনো কখনো আমরা জানিও না আমাদের ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ আছে। 

    ৮) অতিরিক্ত ওজন, যা শরীরে ক্ষতিকারক চর্বির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।

    ৯) শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম, খেলাধুলা একদম কমিয়ে দেয়া।

    ১০) অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন তার মধ্যে কম ঘুমানো ও অতিরিক্ত মোবাইল, টিভি দেখা, স্ক্রিন টাইম বাড়ানো। 

    ১১) নাক ডাকা,স্লিপ এপনিয়াসহ অন্যান্য রোগের কারণ

    ১২) কিডনি রোগসহ জটিল কিছু শারীরিক রোগ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে 

    জেনে নিই কিভাবে হৃদরোগসহ অন্যান্য ক্রনিক ডিজিজের ঝুঁকি কমাবেন

    ১)স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ফলমূল, শাকসবজি ও গোটা শস্য বেশি খান।

    অতিরিক্ত চর্বি, লবণ (দিনে ৫ গ্রামের কম) ও চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।

    ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ খাদ্য তালিকায় রাখুন।

    ২) নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ: 

    ছোট রাস্তা কখনোই রিকশায় বা গাড়িতে চড়বেন না, চেষ্টা করবেন হেঁটে চলতে। 

    প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম বা জোরে হাঁটুন।

    সপ্তাহে ৫ দিন করে ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলুন।

    ৩) ওজন নিয়ন্ত্রণ: ওজন কমান, সুস্থ থাকুন।

    সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন, বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) স্বাভাবিক রাখুন।

    ৪)ধূমপান, এলকোহল সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ: 

    ধূমপান এবং তামাকজাত দ্রব্য ,এলকোহল সেবন চিরতরে বন্ধ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

    ৫) মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: পর্যাপ্ত ঘুম, মেডিটেশন বা নামাজ বা পছন্দের কাজ করে মানসিক চাপ কমান

    আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য বিধান করতে হবে 

    ৬) যদি উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস থাকে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন করে তা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

    ৭) নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা (লিপিড প্রোফাইল) নিয়মিত পরীক্ষা করুন।

    ৮) ওষুধ সেবন: হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে বা আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ (যেমন: অ্যাসপিরিন, স্ট্যাটিনস, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ ইত্যাদি) সেবন করতে ভুলবেন না 

    ৯) চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

    খুব অল্প টাকায় সরকারি ও আধা সরকারি হাসপাতাল ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে হৃদরোগের চিকিৎসা হয়। 

    বাংলাদেশে এখন উন্নত মানের সকল হৃদরোগের চিকিৎসা হচ্ছে। হার্টের রিং পরানো থেকে শুরু করে সকল চিকিৎসা বাংলাদেশে হয়। 

    আপনার তীব্র বুকে ব্যথা উঠলে অবশ্যই নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করবেন, অন্যথায় মৃত্যু কখনো কখনো অনিবার্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। 

    লেখক:  ডা. মো. ফখরুল হাসান,

    হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল 

  • অ্যাংজাইটি অ্যাটাকের কারণ হতে পারে অতিরিক্ত মানসিক চাপ, করণীয় কী?

    অ্যাংজাইটি অ্যাটাকের কারণ হতে পারে অতিরিক্ত মানসিক চাপ, করণীয় কী?

    আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও নতুন ঘটনা, অনিশ্চয়তা ও চাপ বাড়ছে। কাছের কেউ অসুস্থ হলে কী করতে হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়। এর সঙ্গে পড়ালেখা, সংসার, অফিস, আর্থিক চাপ—সব মিলিয়ে মানসিক ক্লান্তি আমাদের অনেকের মধ্যেই দেখা দিচ্ছে। অনেকেই ভাবছেন, এত কিছু সামলানোর পরও চাকরি বা আয়ের নিরাপত্তা থাকবে তো? এই অনিশ্চয়তা থেকেই বাড়ছে মানসিক চাপ।

    তবুও মনে রাখতে হবে—এমন পরিস্থিতি চিরদিন থাকবে না। কঠিন সময় একসময় কেটে যায়। কিন্তু তত দিন নিজেকে শান্ত রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে মানসিক চাপ, ভয় এবং অ্যাংজাইটি অ্যাটাকের ঘটনা আগের তুলনায় অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে।

    উদ্বেগ বেড়ে গেলে শরীরে কিছু শারীরিক লক্ষণও দেখা দিতে পারে—শ্বাস দ্রুত হওয়া, বুক ধড়ফড়, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া বা অতিরিক্ত ঘাম হওয়া। এগুলো সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম সক্রিয় হয়ে যাওয়ার কারণে হয়। শরীরে কোনো সমস্যা নাও থাকতে পারে, কিন্তু তবু মনে হবে দম নিতে কষ্ট হচ্ছে।

    অস্থিরতা, ভয় ও দুশ্চিন্তা এসব অনুভূতি স্বাভাবিক।

    কিন্তু অতিরিক্ত উদ্বেগ কোনো সমস্যার সমাধান নয়, বরং তা আরো স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। তাই নিজেকে ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি।

    এ ধরনের পরিস্থিতিতে—
    মেডিটেশন বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন।
    যাকে বিশ্বাস করেন, তার সঙ্গে কথা বলুন।
    নিয়মিত ব্যায়াম করুন।

    নিজের পছন্দের কাজ বা শখে কিছু সময় দিন।

    যদি বারবার এমন উদ্বেগ দেখা দেয় বা দৈনন্দিন জীবনে বাধা সৃষ্টি করে, তাহলে মনোবিদ বা কাউন্সিলরের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে ভালো। এখন অনলাইন সেশন সহজলভ্য হওয়ায় সহায়তা পাওয়া আরো সহজ হয়েছে।

  • উপসর্গ দেখার আগেই শনাক্ত করা যাবে কোলন ক্যান্সার, কিভাবে সতর্ক হবেন

    উপসর্গ দেখার আগেই শনাক্ত করা যাবে কোলন ক্যান্সার, কিভাবে সতর্ক হবেন

    আমরা প্রতিদিন যা খাই, সেই খাবারের পুষ্টিগুণ রক্তে মিশে যাওয়ার পর অবশিষ্টাংশ জমা হয় কোলনে। আর সেখানেই যদি কোষ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে, তাহলে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

    সারা বিশ্বে যেসব ক্যান্সারের দাপট সবচেয়ে বেশি, সেগুলোর মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে কোলন ক্যান্সার। আমাদের দেশেও খুব একটা পিছিয়ে নেই এই রোগ।

    ক্রমাগত বেড়েই চলছে এই রোগের প্রকোপ। অনেক সময়েই দেরিতে উপসর্গ দেখা দেয় বলে চিকিৎসার সময় পাওয়া যায় না। কিন্তু এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় দেখাচ্ছেন ক্যান্সার চিকিৎসকরা।

    চিকিৎসকদের মতে, উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগে কোলন ক্যান্সার শনাক্ত করা সম্ভব।

    তার জন্য নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের প্রয়োজন। একাধিক ক্যান্সারের মতো কোলন ক্যান্সারের জন্যও স্ক্রিনিং হয়। আর যাদের উপসর্গ নেই, তাদের পরীক্ষা করে দেখা হয়, শরীরে কোলন ক্যান্সারের প্রকোপ শুরু হয়েছে কি না।

    যাদের কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ নেই, তাদের শরীরেই স্ক্রিনিংয়ের পরীক্ষাগুলো করা হয়।

    কোলন ক্যান্সারের জন্যও তাই স্ক্রিনিং করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। এগুলো রোগের সম্ভাব্য লক্ষণগুলো শনাক্ত করতে সাহায্য করে।

    যদি স্ক্রিনিংয়ে উদ্বেগজনক কিছু চোখে পড়ে, তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ সুপারিশ করবেন চিকিৎসক। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্য হাল আরো বিস্তারিত জানতে আরো কয়েকটি পরীক্ষার প্রয়োজন পড়তে পারে।

    মলের দুইটি পরীক্ষা করে স্ক্রিনিং হয় বলে জানালেন চিকিৎসকরা।

    স্টুল ফর অকাল্ট ব্লাড টেস্ট : মল দিয়ে রক্তপাত হচ্ছে কি না, সেটি পরীক্ষা করা হয়। খালিচোখে নজরে না না আসার ঝুঁকি থাকে বলে মাইক্রোস্কোপিক পরীক্ষা হয়। বছরে একবার পরীক্ষা করালেই হয়।

    স্টুল ফর ফিকাল ডিএনএ টেস্ট : শরীরের ভেতরে ক্যান্সার থাকলে অস্বাভাবিক ডিএনএ তৈরি হয়। সেগুলো মলের সঙ্গে বের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মল পরীক্ষা করে দেখা হয়, অস্বাভাবিক ডিএনএ আছে কি না। তিন বছর অন্তর অন্তর এই পরীক্ষা করানো হয়।

    এই দুইটি পরীক্ষা ছাড়াও কোলোনোস্কোপি করানোর পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক। দশ বছরে একবার এই পরীক্ষা করালেই হয়।

    ক্যান্সার চিকিৎসক কখন শুরু করা উচিত

    চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, সাধারণত ৪৫ বছর বয়স থেকে কোলন ক্যান্সারের স্ক্রিনিং শুরু করা উচিত। তবে যাদের বংশে ক্যান্সারের ইতিহাস রয়েছে, বা জেনেটিক পরীক্ষার মাধ্যমে যাদের অস্বাভাবিক জিন শনাক্ত হয়েছে, তাদের আরো কম বয়স থেকেই শুরু করা উচিত।

    প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের নিরাময় সম্ভব। কিন্তু একবার ক্যান্সার কোলনের বাইরে ছড়িয়ে পড়লে, তার চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এই কারণে ৪৫ বছর বয়স থেকেই নিয়মিত কোলোরেক্টাল ক্যান্সার স্ক্রিনিং করা প্রয়োজন।

  • শীতে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য সতর্কতার পরামর্শ

    শীতে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য সতর্কতার পরামর্শ

    এ দেশে শীতের সঙ্গে অসুখের সম্পর্ক নতুন নয়। শীতকালেই নানা রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের রোগীদের জন্য শীত বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। ঠাণ্ডা তাপমাত্রার কারণে শরীরের অভ্যন্তরীণ রক্তনালি, শিরা ও ধমনী সংকুচিত হয়।

    ফলে রক্ত সঞ্চালনের জন্য রক্তনালিকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয় এবং রক্তচাপ বেড়ে যায়। বয়স পঞ্চাশের পর এই সমস্যা আরো সাধারণ। চলুন, জেনে নিই শীতকালে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের উপায়।

    রক্তচাপ নিয়মিত পরীক্ষা করুন
    বাড়িতে রক্তচাপ মাপার যন্ত্র রাখুন এবং সপ্তাহে ৩-৪ দিন মাপুন।

    যাদের ক্রনিক হাইপারটেনশন, শীতকালে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধের মাত্রা সমন্বয় করুন।

    উষ্ণ পোশাক পরুন
    বাইরে বের হলে গরম ও আরামদায়ক পোশাক ব্যবহার করুন। শীতকালীন সোয়েটার, টুপি, মোজা ইত্যাদি অবশ্যম্ভাবী।

    রুটিন বজায় রাখুন
    নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের নিয়ম মেনে চলুন।

    লবণ ও ফাস্ট ফুড কমান
    শীতে অতিরিক্ত নোনতা খাবার, স্ন্যাক্স বা ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলুন।

    স্বাস্থ্যকর খাবার খান
    শীতকালীন শাকসবজি, ফল, স্বাস্থ্যকর খাবার, বাদাম, প্রোটিন জাতীয় খাদ্য যেমন মাছ, মুরগি, সয়াবিন, ডাল রাখুন।

    অ্যালকোহল সীমিত করুন
    শীতকালে পার্টি ও পিকনিকের সময় অ্যালকোহল বেশি গ্রহণ করবেন না, কারণ এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ উষ্ণতা হঠাৎ কমিয়ে দিতে পারে এবং রক্তনালীর সংকোচন ঘটাতে পারে।

    শীতকালে এই সতর্কতা মেনে চললে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো যায়।

  • যেভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন টাইপ-২ ডায়াবেটিস

    যেভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন টাইপ-২ ডায়াবেটিস

    টাইপ-২ ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা, যেখানে শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। তবে সঠিক জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম ও প্রয়োজনে ওষুধ বা ইনসুলিনের সাহায্যে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। চলুম, জেনে নিই কিভাবে প্রতিদিনের ছোট পরিবর্তনগুলো আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।

    খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
    বেশি করে শস্য, শাকসবজি, ফলমূল, চর্বিহীন প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি (যেমন জলপাই তেল),
    চিনিযুক্ত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনিযুক্ত পানীয় ও জুসের বদলে পানি বা কম ক্যালরির পানীয় পান,
    স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

    ব্যায়াম
    সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি ব্যায়াম (যেমন দ্রুত হাঁটা) করুন। এটি সপ্তাহে ৫ দিন × ৩০ মিনিটও করা যায়। হাঁটা, হাইকিং, খেলাধুলা বা অন্য শারীরিক কার্যকলাপ করুন। সপ্তাহে দুই দিন প্রতিরোধমূলক ব্যায়াম করুন (যেমন পুশ-আপ, ওজন তোলা, ফিটনেস মেশিন)।

    হঠাৎ বেশি ব্যায়াম বা ক্যালরি কমানো রক্তে শর্করা বিপজ্জনকভাবে কমাতে পারে। ধীরে ধীরে করুন।

    ওষুধ
    টাইপ-২ ডায়াবেটিসে সাধারণত মেটফর্মিন (গ্লুকোফেজ) দেওয়া হয়। এটি লিভারকে কম গ্লুকোজ উৎপাদনে সাহায্য করে এবং শরীরকে ইনসুলিন ভালোভাবে কাজে লাগাতে সাহায্য করে।

    যদি শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি না করে বা সঠিকভাবে ব্যবহার না করতে পারে, তাহলে ইনসুলিন প্রয়োজন হতে পারে। ইনজেকশন কলম, পাম্প, ইনহেলার বা জেট ইনজেক্টর দিয়ে ইনসুলিন নেওয়া যায়।

    সতর্কতা
    বেশি ইনসুলিন নিলে বা খাবার কম খেলে রক্তে শর্করা কমে যেতে পারে। কম শর্করার লক্ষণ: ঘাম, ঝাঁকুনি, মাথা ঘোরা, ক্ষুধা, দ্রুত হৃদস্পন্দন, বিরক্তি বা উদ্বেগ।

    চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণ
    ওষুধের প্রতিক্রিয়া প্রত্যেকের জন্য ভিন্ন।

    ডাক্তার সঙ্গে নিয়মিত পরামর্শ করুন।
    রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
    নিয়মিত ডাক্তারের চেকআপ করুন।
    চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন

    ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম এবং ধ্যান সাহায্য করবে। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও ঔষধ বাড়িতে রাখুন। চোখ, পা ও ত্বকের দিকে নজর রাখুন।উদ্বেগ, চাপ বা বিষণ্ণতা হলে সাহায্য নিন।

    সূত্র : বিবিসি