মৃত করোনা রোগীর ফুসফুস বলের মতো শক্ত, বিস্মিত চিকিৎসকরা
করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া ৬২ বছরের এক ব্যক্তির শরীরে ময়নাতদন্তের পর তার ফুসফুস দেখে বিস্মিত হয়েছেন চিকিৎসকরা। কারণ, মৃত ওই ব্যক্তির ফুসফুস চামড়ার বলের মতো শক্ত হয়ে গেছে।
ভারতের কর্ণাটকের বাসিন্দা ওই ব্যক্তির শরীরে মৃত্যুর ১৮ ঘণ্টার পরে মিলেছে করোনার অস্তিত্ব। শুধু তাই নয়, তার নাসারন্ধ্র ও গলা থেকে সংগৃহীত নমুনার ভেতরে রয়ে গেছে কোভিড-১৯ সংক্রমণের চিহ্ন। এই প্রথম কর্ণাটকে কোনো করোনা রোগীর ময়নাতদন্ত হলো।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ময়নাতদন্ত করেছেন অক্সফোর্ড মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ড. দীনেশ রাও। তিনি জানান, মৃত ব্যক্তির ফুসফুসের বায়ুথলি ফেটে গিয়েছিল। জমাট বেঁধে গিয়েছিল রক্তনালীগুলো।
গত ১০ অক্টোবর ওই ময়নাতদন্ত করেন তিনি। সময় লেগেছিল ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট। ড. রাও বলছেন, কোভিড আক্রান্তদের শরীরে ময়নাতদন্ত করলে রোগের অগ্রগতির বিষয়ে বুঝতে সুবিধা হয়।
মৃত ব্যক্তির নাক ও গলার নমুনায় করোনার উপস্থিতি ধরা পড়লেও ত্বকে ভাইরাসের অস্তিত্ব মেলেনি। ড. রাও জানান, অর্থাৎ কোভিড রোগীর মৃতদেহ সংক্রামক হতে পারে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তাদের ত্বকে ভাইরাসের উপস্থিতি নেই।
ওই ব্যক্তির পরিবারের অনুমতি নিয়েই ময়নাতদন্ত করেন চিকিৎসকরা। তিনি যখন মারা গিয়েছিলেন, তখন তার পরিবারের সদস্যরা কোয়ারান্টাইনে ছিলেন। সেই জন্য তারা দেহ দাবি করেননি।
ড. রাও আরও জানান, আমেরিকা ও ইতালিতে কোভিড রোগীদের ময়নাতদন্তে যা দেখা গেছে, আমার পর্যবেক্ষণ তার থেকে আলাদা। যা থেকে প্রমাণ হয়, ভারতে এই ভাইরাসের চরিত্র আলাদা। শিগগিরি এই ময়নাতদন্তের পূর্ণ বিবরণ তিনি কোনো জার্নালে প্রকাশ করার পরিকল্পনা করছেন বলেও জানান তিনি।
বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা চার কোটি ২৪ লাখ ছাড়াল
ছবি: ইন্টারনেট
বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা চার কোটি ২৪ লাখ ছাড়িয়েছে।
আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সকাল ৭ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪ কোটি ২৪ লাখ ৬২ হাজার ৯৫৭ জন।
একই সময়ে করোনায় মারা গেছেন ১১ লাখ ৪৮ হাজার ৬৯৮ জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩ কোটি ১৪ লাখ ১৭ হাজার ৫৩১ জন।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারিতে এ পর্যন্ত বিশ্বের ২১৫টি দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে।
এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮৭ লাখ ৪৬ হাজার ৯৩১ জন। আর মৃত্যু হয়েছে দুই লাখ ২৯ হাজার ২৮৪ জন।
আক্রান্তের হিসাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭৮ লাখ ১৩ হাজার ৬৬৮। এর মধ্যে এক লাখ ১৭ হাজার ৯৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় ডায়াবেটিস রোগীরা
চার প্রতিষ্ঠানের যৌথ গবেষণা
করোনাভাইরাসে আক্রান্তের পর সুস্থদের মধ্যে ৭৫ ভাগ ডায়াবেটিস রোগী কোনো না কোনো দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় ভুগছেন। তাছাড়া করোনায় আক্রান্তদের প্রতি পাঁচজনে একজন ডায়াবেটিস রোগী। এর মধ্যে পুরুষ এবং ৩১-৫০ বছরের ডায়াবেটিস রোগীরা সবচেয়ে বেশি শারীরিক জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছেন।
করোনা পরবর্তীতে সবচেয়ে বেশি নানা জটিলতা দেখা যায় ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের মধ্যে। আক্রান্ত প্রতি ১০০ জনের মধ্যে একজন সুস্থ হওয়ার পর নতুনভাবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। চট্টগ্রাম বিশ্বিদ্যালয় (চবি), চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক), চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল ইনফেকসাস ডিজিজের (বিআইটিআইডি) যৌথ গবেষণায় এসব তথ্য ওঠে আসে। গবেষণা পত্রে দেখা যায়, করোনায় আক্রান্ত ৪০ ভাগ ডায়াবেটিস রোগীকেই ইনসুলিনের মাত্রা তিনগুণ করতে হয় রক্তে শ্র্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য। আক্রান্ত ডায়াবেটিস রোগীদের ৯০ ভাগেরই জ্বর, ৬০ ভাগের কফ ও কাশি এবং ৪৫ ভাগের শারীরিক ব্যথা লক্ষ্য করা যায়। ৬০ ভাগের বেশি রোগীর ফেরিটিন ও ডি ডাইমারের পরিমাণ বেশি পাওয়া গেছে। ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের মধ্যে উপসর্গবিহীন হওয়ার সংখ্যা কম। মাত্র ৪ ভাগ ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর কোনো উপসর্গ পর্যবেক্ষিত হয়নি।
কিন্তু ডায়াবেটিসবিহীন করোনা রোগীদের মধ্যে বেশি উপসর্গবিহীন হওয়ার মাত্রা দেখা গেছে। গবেষণায় নেতৃত্বদানকারী ড. আদনান মান্নান বলেন, ‘যাদের দীর্ঘ মেয়াদি শারীরিক সমস্যা আছে, করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের বিভিন্ন উপসর্গ ও সমস্যা দেখা যায়। এটি ইতিমধ্যে বিশ স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশ করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে এক কোটি ডায়াবেটিস রোগী থাকার কারণে তাদের শারীরিক প্রতিক্রিয়া আলাদাভাবে জানা প্রয়োজন। কারণ ডায়াবেটিস বহুমাত্রিক শারীরিক সমস্যা, যা অনেক উপসর্গের সঙ্গে সম্পর্কিত। কারণ করোনাভাইরাস একই সঙ্গে একজন রোগীর অনেক অঙ্গকে আক্রান্ত করার প্রবণতা দেখায়।’ গবেষণা দলের ক্লিনিক্যাল প্রধান ডা. ফারহানা আক্তার বলেন, ‘বিশ্জুড়ে বিভিন্ন গবেষণায় করোনায় আক্রান্তদের বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি জটিলতাগুলোর মধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম। আমাদের গবেষণায়ও এর প্রতিফলিত ঘটেছে। ডায়াবেটিস রোগীর যে কোনো সংক্রমণ হলে স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যায়, যা রক্তে গ্লুকোজ বাড়িয়ে দেয়। একইভাবে আক্রান্তদের এই স্ট্রেস হরমোনের কারণে ডায়াবেটিস মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়। তাছাড়া করোনার চিকিৎসায় কিছু ওষুধ ব্যবহার করায় ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে।
অন্যদিকে বেশি সংক্রমণের কারণে ইনসুলিনও ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। ফলে রোগীর ইনসুলিন গ্রহণের মাত্রা বেড়ে যায়। তাছাড়া করোনা পরবর্তী নতুন ডায়াবেটিস রোগীও পাওয়া যায়, যাদের ব্যাপারে আরও দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার পরিকল্পনা আছে।’ ডা. এইচএম হামিদুল্লাহ মেহেদী বলেন, ‘করোনা পরবর্তীতে ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে ৪৫ ভাগের প্রায় চার থেকে ছয় সপ্তাহ প্রচ- বা মাঝারিমানের শারীরিক ব্যথা অনুভব করেন। ৩০ ভাগ রোগীর রাতে নিরবচ্ছিন্ন ঘুমাতে সমস্যা হচ্ছে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের শারীরিক জটিলতা দূর করতে করোনা পরবর্তী সময়ে হাঁটাচলা, শ্রীর চর্চা ও নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে।’ গবেষণায় বলা হয়, আন্তর্জাতিকভাবেও ডায়াবেটিসকে করোনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশ্নের এক প্রতিবেদনে, যুক্তরাজ্যে করোনায় আক্রান্তদের মাঝে ২০ ভাগ, যুক্তরাষ্ট্রে ১১ ভাগ এবং চীনে ১০ ভাগ রোগী ডায়াবেটিস। পৃথিবীতে প্রতি দশ্জনে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। দেশে বর্তমানে প্রায় এক কোটি ডায়াবেটিস রোগী। চট্টগ্রামে প্রায় দশ লাখের বেশি। পৃথিবীতে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ অষ্টম।
ডায়াবেটিসের তীব্রতার কারণে করোনার সঙ্গে ডায়াবেটিসের সম্পর্ক, প্রতিক্রিয়া, সুস্থ হতে জটিলতা ও চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে গবেষণা জরুরি। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকাশ্না সংস্থা এলসেভিয়ার-এর ‘ডায়াবেটিস অ্যান্ড মেটাবলিক সিনড্রোম : ক্লিনিক্যাল রিসার্চ অ্যান্ড রিভিউস’ শীর্ষক গবেষণা নিবন্ধে প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে। চট্টগ্রামের চারটি কভিড হাসপাতালে গত এপ্রিল থেকে জুন মাসে ভর্তি রোগীর ওপর পরিচালিত জরিপের মাধ্যমে গবেষণাটি তৈরি করা হয়।
গবেষণায় নেতৃত্ব দেন চমেকের ডায়াবেটিস ও হরমোন বিভাগের প্রধান ডা. ফারহানা আক্তার ও চবির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক ড. আদনান মান্নান। গবেষণা তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে ছিলেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. এইচএম হামিদুল্লাহ মেহেদী ও ডা. আবদুর রব মাসুম, বিআইটিআইডির ল্যাব প্রধান ডা. শাকিল আহমেদ এবং চবি শিক্ষক মো. মাহবুব হাসান। তথ্য সংগ্রহে নেতৃত্ব দেন গবেষণা শিক্ষার্থী আসমা সালাউদ্দিন ও সাখাওয়াত হোসেন মিয়াজি। গবেষণার তত্ত্বাবধান করে ডিজিজ বায়োলজি অ্যান্ড মলিকুলার এপিডেমিওলজি রিসার্চ গ্রুপ, চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামে ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে করোনার তীব্রতা, উপসর্গ এবং করোনা পরবর্তী অবস্থা নিয়ে সম্পাদিত গবেষণায় করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার চার সপ্তাহ পর রোগীদের মাঝে পরিচালনা করা হয়।
হাই হিল পরলে যত ক্ষতি
ফ্যাশন সচেতন অনেকেই হাই হিল পরতে পছন্দ করেন। গবেষণায় দেখা গেছে যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৪ বছর তারাই সবচাইতে বেশি (৪৯%) হাই হিল পরেন। তবে জানেন কি হাই হিল নিয়মিত পরলে অনেক ধরনের ক্ষতি হতে পারে?
রক্তনালী সংকোচন
হাই হিল সাধারণত একটু আঁটসাঁট ও চোখা আকৃতির হয় যাতে এটি দেখতে ফ্যাশনেবল মনে হয়। কিন্তু এই আটসাঁট হাই হিলের কারণে পায়ে থাকা রক্তনালীগুলোতে রক্তপ্রবাহ অনেকাংশে কমে যায় ফলে রক্তনালী সংকুচিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টির ফলে রক্তনালী ছিঁড়ে যেতে পারে যেটি খুবই ভয়ঙ্কর।
জয়েন্টে ব্যাথা
হাই হিল পরলে স্বাভাবিকের তুলনায় উচ্চতা বেড়ে যায়। ফলে চলাচলে নানান ধরনের বিঘ্নতা সৃষ্টি হয়। কারণ উচ্চতা বাড়ার জন্য আমাদের হাঁটার যে স্বাভাবিক গতি প্রকৃতি সেটি বদলে যায়। পা একদম সোজাভাবে থাকে ফলে বাঁকানো যায় না। এইজন্য হাঁটুতে প্রচুর চাপ পড়ে এবং জয়েন্ট পেইন শুরু হয়। যেটি একবারেই কাম্য নয়। আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব অর্থোপেডিক সার্জন এর তথ্যমতে এই জয়েন্ট পেইনই ধীরে ধীরে আর্থাইটিসে রূপ নেয়।
ফোসকা পরা
পায়ের চামড়ার সাথে হিলের ঘর্ষণ ও আঁটসাঁট হওয়ার ফলে কিছুক্ষণ হাঁটার পরেই পায়ে ফোসকা পরে যেতে পারে। যেটি খুবই অস্বস্তিকর ও অনাকঙ্খিত।
ব্যাকপেইন
হাই হিল পরলে হাঁটার সময় এটি পেলভিসকে প্রভাবিত করে ফলে কোমরের উপর প্রচুর চাপ পরে। যা পরবর্তীতে ব্যাকপেইনে রূপ নেয়। অনেক সময় এই ব্যাক পেইন আবার অস্টিপোরোসিসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
পায়ে ব্যথা
গবেষণা বলছে হাই হিলের আকৃতি ও গঠন আলাদা হওয়ায় কয়েকদিন পরলেই ব্যথা হতে পারে পায়ের তলা অথবা গোড়ালিতে।
মেরুদণ্ড বেঁকে যেতে পারে
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিনিয়ত হাই হিল পরলে মেরুদণ্ডের আকৃতি পাল্টে বেঁকে যেতে পারে।
কীভাবে নিরাপদ হিল পছন্দ করবেন?
- হাই হিলের উচ্চতা ২ ইঞ্চির মধ্যে রাখুন।
- তলা সমতল এমন জুতা পছন্দ করুন।
- আরামদায়ক জুতা পছন্দ করুন।
- অল্প কয়েক ঘন্টার জন্য হিল জুতা পরুন।
- অর্থোপেডিক প্যাড ব্যবহার করুন।
- কয়েক ধরনের জুতা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করুন।
অ্যাজমার কারন ও চিকিৎসা
দিন দিন বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা, করোনার অন্যতম উপসর্গ শ্বাসকষ্ট, যারা আগে থেকেই অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টে ভুগছেন তাদের বেশী সতর্ক থাকতে হবে। শিশুসহ যেকোনো বয়সী নারী-পুরুষ অ্যাজমায় আক্রান্ত হতে পারে। এটা সারা জীবনের রোগ হলেও সঠিক চিকিৎসা নিলে ভালো থাকা যায়। অ্যাজমায় মানুষ মারা যায় না বললেই চলে। কিন্তু সুচিকিৎসার অভাবে তারা বেশ কষ্ট পায়। আসুন আমরা জেনে নিই অ্যাজমা কি ও তার চিকিৎসা সম্পর্কে –
অ্যাজমাঃ
শ্বাসনালির ক্রনিক প্রদাহজনিত দীর্ঘস্থায়ী রোগ অ্যাজমা, যা হাঁপানি নামে পরিচিত। এর ফলে শ্বাসনালিতে বিভিন্ন কোষ, বিশেষত ইয়োসিনোফিল ও অন্যান্য কোষীয় উপাদান জমা হয়ে শ্বাসনালি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে। অ্যাজমার কারণে শ্বাসনালির ছিদ্রপথ সরু হয়ে যায়। ধুলাবালি, ধোঁয়া ইত্যাদির প্রতি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়াশীল হয়। রোগী শ্বাসকষ্টসহ শুকনো কাশি, বুক জ্যাম হওয়া, শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার সময় বুকে শাঁ শাঁ শব্দ হওয়া ইত্যাদি সমস্যায় ভুগতে থাকে। অ্যাজমায় মানুষ মারা যায় না বললেই চলে। কিন্তু সুচিকিৎসার অভাবে তারা বেশ কষ্ট পায়। শীতকালের শুষ্ক ঠা-া আবহাওয়া, বাতাসে উড়ে বেড়ানো ধূলিকণার আধিক্যে অ্যাজমার প্রকোপ বাড়ে। যাদের আগে থেকে অ্যাজমা ছিল না, তাদেরও শীতকালে অ্যাজমায় আক্রান্ত হতে দেখা যায়।কারণঃ
অ্যাজমার কারণ আজ পর্যন্ত অজানা। আবার ঠিক কী কারণে কিছু মানুষের শ্বাসনালি সাধারণ ধুলিবালির সংস্পর্শে সরু হয়ে শ্বাসকষ্টের উদ্রেক করে; তা এখনো মানুষের নাগালের বাইরে। তবে বংশগত বা জেনেটিক ও পরিবেশগত উপাদানের পারস্পরিক ক্রিয়ার মাধ্যমে এ রোগের উদ্ভব ঘটে বেশি। কিছু উপাদান অ্যাজমা রোগের উৎপত্তি, আক্রমণ ও স্থায়িত্বকে বেশ প্রভাবিত করে থাকে, যাকে ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান বলে। এই ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান রোগীসংশ্লিষ্ট ও পরিবেশগত এই দুই ধরনের।রোগীসংশ্লিষ্ট কারণঃ
বংশগত বা জেনেটিক : যদি মা-বাবার অ্যাজমা থাকে, তবে সন্তানের অ্যাজমা হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এটপি : এটপি মানে এ ধরনের রোগীদের রক্তে ইমুন্যুগ্লুুুবিউলিন-ই (ওমঊ) নামক অ্যান্টিবডির আধিক্য থাকে। এই রোগীদের অ্যাজমা ও অন্যান্য অ্যালার্জিজনিত রোগ যেমন-একজিমা, রাইনাইটিস বেশি হয়। তবে অ্যাজমা আক্রান্ত মা যদি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান, তাহলে এ রোগগুলোর আশঙ্কা কমে। অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়াশীল শ্বাসনালি : এ ধরনের শ্বাসনালি খুব সহজেই সংকুচিত হয়ে যায়। লিঙ্গ: সাধারণত শিশু বয়সে ছেলেদের ও প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বেশি অ্যাজমা দেখা যায়।পরিবেশগত কারণঃ
অ্যালার্জেন: সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অ্যাজমার ঝুঁকি, যেমন পশুর লোম, আরশোলা, রেণু, ছত্রাক ইত্যাদি। উত্তেজক: সিগারেটের ধোঁয়া, কারখানার উত্তেজক পদার্থ, ঠা-া বাতাস, রঙের ঝাঁজালো গন্ধ, মসলা, সুগন্ধি প্রভৃতি। ওষুধ: অ্যাসপিরিন, ব্যথানাশক, বিটা ব্লকারস, হিরোইন প্রভৃতি। এ ছাড়া টিনজাত ফলের, ভাইরাসজনিত শ্বাসনালিতে সংক্রমণ, দৈহিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম অ্যাজমা ট্রিগার করে থাকে, অতিরিক্ত আবেগপ্রবণতা : যেমন অট্টহাসি, কান্না ছাড়াও অ্যাজমার অসংখ্য ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান রয়েছে।লক্ষণঃ
– শ্বাসনালি সংকুচিত হওয়ার ফলে রোগীর শ্বাসকষ্ট হয়। – বুকে চাপ বা জ্যাম লাগা অনুভূত হয়। – কাশি বা শুকনো কাশি হয়। – শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার সময় বুকে বাঁশির মতো শাঁ শাঁ শব্দ হয়।প্রকারভেদঃ
এটপিক অ্যাজমা: যেসব অ্যাজমা রোগীর এটপি থাকে তাদের এটপিক অ্যাজমা বলে। এ রকম রোগীদের অ্যাজমার কারণ অ্যালার্জিজনিত—অন্যগুলো নন-এটপিক অ্যাজমা। ব্যায়াম প্রভাবিত: ব্যায়ামের সময় যে অ্যাজমার প্রকোপ হয়, তাকে ব্যায়াম প্রভাবিত অ্যাজমা বলে। অকুপেশনাল অ্যাজমা: পেশাগত পরিবেশে রোগীরা যেমন—গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি, বার্বুচি, জুট মিল শ্রমিক ইত্যাদি অকুপেশনাল অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া আছে সিজনাল অ্যাজমা, যা ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে বাড়ে বা কমে। অ্যাজমা রোগের তীব্রতার ওপর ভিত্তি করে সবিরাম, মৃদু স্থায়ী, মাঝারি স্থায়ী ও তীব্র স্থায়ী এই চার ভাগে ভাগ করা হয়। এটা অ্যাজমা চিকিৎসার প্রধান নির্দেশক।পরীক্ষা-নিরীক্ষাঃ
বেশির ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে অ্যাজমা রোগ নির্ণয়ে কোনো পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। তবে অ্যাজমার মতো অন্য রোগ যেমন সিওপিডি, হার্ট ফেইলিওর, শিশুদের ক্ষেত্রে ব্রংকিউলাইটিস ইত্যাদি অ্যাজমার মতো লক্ষণ নিয়ে আসে। সে ক্ষেত্রে পরীক্ষার সঙ্গে রোগের লক্ষণ মিলিয়ে অ্যাজমা রোগ নির্ণয় করা হয়। অ্যাজমার প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলো হলো – – রোগীর শ্বাসনালিতে শ্বাস গ্রহণে বাধা আছে কি না তা স্পাইরোমেট্রি বা পিক ফ্লো মেট্রি পরীক্ষায় নির্ণয় করা হয়। স্পাইরোমেট্রি দিয়ে অ্যাজমা ও সিওপিডি এই দুটি রোগ পার্থক্য করা যায়। – কাশিপ্রধান অ্যাজমার ক্ষেত্রে মেথাকলিন চ্যালেঞ্জ পরীক্ষা করে শ্বাসনালির অতি প্রতিক্রিয়াশীলতা দেখা যায়। – রক্তে ও কফে ইয়োসিনোফিল বেড়ে যায়। – রক্তে সিরাম ইমুন্যুগ্লুবিউলিন-ই (ওমঊ) অ্যালার্জিজনিত অ্যাজমা বেড়ে যায়। তবে অ্যাজমা চিকিৎসায় এর তেমন ভূমিকা নেই। – অ্যালার্জেন বা ট্রিগার পরীক্ষার জন্য স্কিন প্রিক টেস্ট করা হয়। তবে এ টেস্ট সব রোগীর ক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়ে না।কিভাবে বুঝবেন?
রোগী নিজেকে নিচের প্রশ্নগুলো করতে পারেন, যদি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয়, তবে ধরে নিতে হবে তিনি অ্যাজমা রোগী। তখন কালক্ষেপণ না করে ডাক্তার দেখানো উচিত। – শ্বাসের সময় বুকে বাঁশির মতো শাঁ শাঁ শব্দ হয় কি? – রাতে কি তীব্র কাশি হয়? – ব্যায়ামের পর কাশি বা শ্বাসকষ্ট হয় কি? – বায়ুবাহিত অ্যালার্জেন বা উত্তেজকের সংস্পর্শে কাশি বা শ্বাসকষ্ট অনুভব হয় কি? – রোগীর কখনো ঠা-া লাগলে কি ১০ দিনের বেশি থাকে? – রোগীর লক্ষণ কি অ্যাজমার ওষুধে ভালো হয়ে যায়?ঝুঁকি বোঝার উপায়ঃ
সাধারণত অ্যাজমায় মৃত্যুহার শতকরা ১ ভাগের নিচে। তবে অ্যাজমায় জীবন ঝুঁকিপূর্ণ আক্রমণ নিম্নরূপ লক্ষণ থেকে বোঝা যায়। – যদি রোগী শ্বাসকষ্টের জন্য এক নিঃশ্বাসে একটি পূর্ণ বাক্য বলতে না পারে। – যদি রোগীর জ্ঞান স্বাভাবিক না থাকে বা অজ্ঞান হয়ে যায়। – সোজা হয়ে বসে থাকার প্রবণতা থাকে। – নাকের অগ্রভাগ নীল হয়ে গেলে। – শ্বাস-প্রশ্বাস মিনিটে ৩৫-এর বেশি হলে। – নাড়ি মিনিটে ১২০-এর বেশি হলে। এসব লক্ষণ দেখা মাত্রই হাসপাতালে নেওয়া দরকার।ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান থেকে বাঁচতে করণীয়ঃ
অ্যাজমা চিকিৎসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে—ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান থেকে নিজেকে দূরে রাখা। এ জন্য নিম্নরূপ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে : – ব্যবহূত বালিশ, তোশক ও মেট্রেসে অচ্ছেদ্য কাভার দিলে ভালো হয়। – বিছানার সব কিছু অন্তত সপ্তাহে একবার অধিক তাপে বিশুদ্ধ করা। – কার্পেট না রাখলে ভালো। রাখলেও নিয়মিত ট্যানিক এসিডে পরিষ্কার করা। – শিশুদের খেলনা নিয়মিত ধুয়ে রাখা। – ঘরে কোনো পোষা প্রাণী না রাখা ভালো। রাখলেও নিয়মিত সপ্তাহে অন্তত দুদিন গোসল করানো। – বাসায় ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করা ভালো।চিকিৎসাঃ
উপশমকারী ওষুধ: যেমন সালবিউটামল। এ ওষুধ তাত্ক্ষণিতকভাবে শ্বাসনালির ছিদ্রপথ প্রসারিত করে শ্বাস-প্রশ্বাসের বাধা কমিয়ে দেয়। যদিও এর কার্যকাল খুবই কম। প্রতিরোধক ওষুধ: যেমন স্টেরয়েড, অ্যামাইনোফাইলিন, ক্রোমগ্লাইকেট ইত্যাদি। ইনহেলার পদ্ধতি: এটি সবচেয়ে উপকারী এবং আধুনিক পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ওষুধ শ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে প্রবেশ করে শ্বাসনালিতে কাজ করে। ফলে খুবই অল্প মাত্রার ওষুধ প্রয়োগে অধিক সুবিধা হয়। পাশাপাশি যেহেতু ওষুধ রক্তে খুব একটা যায় না, ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না বললেই চলে। তবে রোগীকে এর ব্যবহার শেখানোটা একটু কঠিন। খাবার বড়ি/ক্যাপসুল/সিরাপ: এ পদ্ধতি শিশু বা অক্ষম ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি। কারণ অধিক মাত্রার ওষুধ রোগীর রক্তে প্রবেশ করে। নেবুলাইজার: তীব্র অ্যাজমার আক্রমণে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়। তবে মনে রাখতে হবে, নেবুলাইজার যথাযথভাবে জীবাণুমুক্ত না রাখলে এর মাধ্যমে জীবাণু সংক্রমণ হয়। ইনজেকশন: অ্যাজমার মারাত্মক আক্রমণে শিরায় স্টেরয়েডের ইনজেকশন দেওয়া হয়। তবে আমাদের দেশে অযৌক্তিকভাবে অতিরিক্ত হারে অ্যামাইনোফাইলিন ব্যবহূত হয়, যা কখনো কখনো হৃদযন্ত্রের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া করে। লেখকঃ অধ্যাপক এ কে এম মোশাররফ হোসেন বক্ষব্যাধি বিশেষঙ্গ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়১২শ শয্যার হচ্ছে জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতাল
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে ১ হাজার ২০০টি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
বৃহস্পতিবার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিয়াড ক্যাথল্যাব-২ উদ্বোধন করতে এসে একথা জানান তিনি। হৃদরোগের চিকিৎসায় বিশেষায়িত ঢাকার এই সরকারি হাসপাতালে বর্তমানে শয্যা সংখ্যা ৭০০ তা থেকে ৫০০ বাড়ানো হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “দেশের ৮টি বিভাগে ৮টি উন্নত মানের ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজকে ৫ হাজার বেডে উন্নীত করা হচ্ছে। একইভাবে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটকে ৭০০ শয্যা থেকে ১২০০ শয্যায় উন্নীত করা হচ্ছে।” স্বাস্থ্যমন্ত্রী করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলায় নিয়োজিত চিকিৎসক-নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের ধন্যবাদ জানান।তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোনো দেশের টিকার স্বীকৃতি এখন পর্যন্ত দেয়নি। বাংলাদেশ টিকা পেতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। “যখনই কোনো দেশ স্বীকৃতি পাবে আমরা সবার আগে সেটি দেশে নিয়ে আসব। ভ্যাকসিন আনতে সরকার অন্যান্য দেশের সাথেও আলোচনা অব্যাহত রেখে চলেছে। ভ্যাকসিন অনুমোদিত হলে আমাদের দেশে আনতে কোনো দেরি হবে না।” জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, স্বাচিপের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ বক্তব্য রাখেন।নতুন বছরের শুরুতেই কমপক্ষে দুটি করোনার টিকা মিলবে: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
আগামী বছরের শুরুতে কমপক্ষে দুটি করোনাভাইরাসের টিকা মিলবে বলে জানালেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বৈজ্ঞানিক সৌম্যা স্বামীনাথন।
সৌম্যা বলেন, করোনাকালে যেভাবে বৈজ্ঞানিকরা সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করছেন সেটি ইতিবাচক। হাতে হাত মিলিয়ে বিশ্বজুড়ে কাজ চলায় দ্রুত জ্ঞানলাভ হচ্ছে বলে জানান তিনি। একটি ওয়েবিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বৈজ্ঞানিক বলেন, অভুতপূর্ব গতিতে কাজ হচ্ছে। যেভাবে করোনা পরীক্ষার জন্য অ্যান্টিজেন টেস্ট এসেছে, তারও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, টিকা নিয়ে কাজ হচ্ছে ও আগামী বছরের শুরুর মধ্যে কমপক্ষে দুটি নিরাপদ ও কার্যকরী টিকা পাওয়া যাবে। সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
ঢাকার শতকরা ৪৫ ভাগ মানুষের শরীরে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি
ঢাকার শতকরা ৪৫ ভাগ মানুষের শরীরে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে এবং বস্তি অঞ্চলে এই হার প্রায় ৭৪ শতাংশ বলে একটি গবেষণায় বলা হয়েছে।
গত জুলাই মাসের শুরু পর্যন্ত গবেষণা চালিয়ে এই চিত্র দেখেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর), তারপর আরও তিন মাস কেটে গেছে।
গত ১৮ এপ্রিল থেকে ৫ জুলাইয়ের মধ্যে এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়। আইইডিসিআরের পক্ষে গবেষণাটি পরিচালনা করেছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ-আইসিডিডিআর,বি। সহযোগিতায় ছিল উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ের ওই সময় পর্যন্ত ঢাকায় ৪৫ শতাংশ মানুষ করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার পর তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছিল।
সোমবার গুলশানের লেইক শোর হোটেলে ঢাকায় কোভিড-১৯ এর প্রার্দুভাব ও বিস্তৃতি নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়।
সেমিনারে বলা হয়, রাজধানী ঢাকার ২৫টি ওয়ার্ডে ১২ হাজার ৬৯৯ জনের নমুনার আরটিপিসিআর পরীক্ষায় ৯ দশমিক ৮ শতাংশের করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ২৪ শতাংশের বয়স ষাট বা তার বেশি। ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী ১৮ শতাংশ। দ্বিতীয়বার কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার ‘কিছু তথ্যও বাংলাদেশে পাওয়া গেছে’ বলে সেমিনারে জানানো হয়।
সেমিনারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথম পর্যায়ের নানা তথ্য, উপাত্ত তুলে ধরেন।
গবেষণাটি চালানোর সময় আইইডিসিআরের পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা। বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, “এই তথ্য যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। এতদিন যেসব তথ্য দেওয়া হচ্ছিল তা ছিল যারা পরীক্ষা করাতে আসে তাদের ওপর ভিত্তি করে। বাড়িতে যারা ছিলেন তাদের কোনো তথ্য নেওয়া হয়নি।
“আমাদের এখানে রোগটা কতখানি ছড়িয়েছে, এই জরিপের মাধ্যমে বোঝা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতি দশ জনে একজন আক্রান্ত। আমাদের তথ্যটাও কিন্তু কাছাকাছি ৯ দশমিক ৮। সুতরাং সারা বিশ্বের যে চিত্র আমাদেরও একই চিত্র।”
ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আক্রান্তদের ১ শতাংশ হাসপাতালে গেছেন।
“এর মানে হচ্ছে আমাদের এখানে আক্রান্তদের বেশিরভাগ মৃদু লক্ষণ-উপসর্গযুক্ত। জরিপে কোভিড-১৯ পজিটিভদের ৮২ শতাংশ লক্ষণ-উপসর্গহীন। তারা জানতই না তাদের করোনাভাইরাস পজিটিভ। এই ৮২ শতাংশকে কিন্তু আমরা চিনি না। তারা রোগটি ছড়াতে পারে। এ কারণে মাস্ক ব্যবহার করলে হয়ত আশপাশের মানুষের মধ্যে ছড়াবে না। এজন্য সাবধানতা বজায় রাখা জরুরি।”
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি ভার্চুয়াল মাধ্যমে সেমিনারে যুক্ত হন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ কারণে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কম।
“অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় করোনা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ভালো করেছে, ভালো আছে। এ পর্যন্ত ১ থেকে ১০৯টি ল্যাব হয়েছে, সেন্ট্রাল অক্সিজেন, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলাসহ অন্যান্য সব কিছুর ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
সেমিনারে ইউএসএআইডির বাংলাদেশ মিশনের পরিচালক ডেরিক এস ব্রাউন এবং আইসিডিডিআর,বির বাংলাদেশ নির্বাহী ডা. তাহমিদ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
পঙ্গু হাসপাতালে র্যাবের অভিযান
কারাদন্ড ১১ দালালের
রাজধানীর শ্যামলীতে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) আসা রোগীদের অন্যত্র নেওয়ার অভিযোগে ১১ দালালকে কারাদন্ড দিয়েছে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল দুপুরে পঙ্গু হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে তাদের সাজা দেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু।
তিনি জানান, চিকিৎসাসেবা গ্রহণে সাধারণ রোগীদের হয়রানি, জীবন ও অর্থ হানি করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তথাকথিত প্রভাবশালী ব্যক্তির একটি সিন্ডিকেটের (দালাল) বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হয়। এ চক্রটি বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ রোগীদের জিম্মি করে বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে কম খরচে উন্নতমানের চিকিৎসার প্রলোভন দেখাত। ওইসব প্রাইভেট হাসপাতালে নামসর্বস্ব ও ভুয়া ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসাসেবা প্রদান এবং বিভিন্ন ধরনের সংবেদনশীল ও জটিল অস্ত্রোপচার করা হয়।
এতে রোগীরা উপযুক্ত সেবা থেকে বঞ্চিত হয় এবং কিছু ক্ষেত্রে তাদের মারাত্মকভাবে জীবন-অঙ্গ হানিসহ আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ রয়েছে। পরে রোগীদের মোটা অঙ্কের বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়। বিল পরিশোধ না করতে পারলে তাদের রিলিজ দেওয়া হতো না। উল্টো জিম্মি করে রাখা হতো। এ চক্রের দুই নারী ও নয়জন পুরুষকে বিনাশ্রম ছয় মাস করে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।
বরিশালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হামলায় ক্ষোভে ফুসছেন সিনিয়র ডাক্তাররা
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হামলার ঘটনায় ক্ষোভে ফুসছেন সিনিয়র ডাক্তাররা। মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে এক চিকিৎসককে তার কক্ষে আটকে রেখে মারধরের অভিযোগ উঠেছে একই বিভাগের শিক্ষা-নবিশদের বিরুদ্ধে। এমন ঘটনায় বিস্মিত চিকিৎসকদের সংগঠন-বিএমএর নেতারাও।
এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থার কথা জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক। শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারি রেজিস্টার ডাক্তার মাসুদ খানকে ফোন করা হয় মঙ্গলবার বিকেলে। নিজের কাজ সেরে সন্ধ্যায় তিনি নিজের অফিসে যান। সেখানে আগে থেকে অপেক্ষায় ছিলেন হাসপাতালের ৪৬ তম ব্যাচের ইন্টার্ন চিকিৎসক সজল পান্ডেসহ বেশ কয়েকজন।
অভিযোগ রয়েছে, ডাক্তার মাসুদ খানকে তার অফিস কক্ষে দরজা বন্ধ করে মারধর করেন শিক্ষানবিশরা। এই কাজে বাধা দিতে গেলে হেনস্তা হতে হয় আরো এক চিকিৎসককে। এসময় মাসুদ খানের চিৎকারে রোগীর স্বজনরা জড়ো হলে স্থান ত্যাগ করে হামলাকারীরা। এই ঘটনায় ক্ষোভ বিরাজ করছে স্টাফ চিকিৎসকদের মাঝে। অনেকে নিরাপত্তাহীনতার কথাও বলছেন। মেডিকেল এসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, এমন অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য।
হামলার ঘটনা ছোট হলেও, এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। তাই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান হাসপাতালের পরিচালক।
চলতি বছরের শুরুতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সঙ্গে ব্যাপক বিরোধ হয় শের-ই বাংলা মেডিকেলের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। সেসময় দুই কর্মচারীকে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ করে কর্মচারী ইউনিয়ন। এসব ঘটনার প্রভাব পড়েছে হাসপাতালটির চিকিৎসা সেবাতে।