‘অবহেলা ছিল না, তবে দায় এড়ানো যায় না’: এ কে এম নাসিরউদ্দিন

মৃত ঘোষিত নবজাতকের কবরস্থানে গিয়ে নড়াচড়া করার ঘটনা এবং শিশুটির এখনকার অবস্থা নিয়ে কথা বলেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক কে এম নাসিরউদ্দিন বলেছেন, জন্মের পর নবজাতককে পৌনে এক ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রেখেছিলেন চিকিৎসকেরা। এই সময়ের মধ্যে তার কোনো স্পন্দন পাওয়া যায়নি। নবজাতককে মৃত ঘোষণায় চিকিৎসকদের কোনো অবহেলা ছিল না।

আজ মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সভাকক্ষে কবরস্থানে নড়ে ওঠা নবজাতকের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

গত শুক্রবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি মেয়েশিশুর জন্ম হয়। জন্মের পর চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতাল থেকে মৃত্যুসনদ নিয়ে বাবা ইয়াসিন নবজাতককে নিয়ে যান আজিমপুর কবরস্থানে। দাফনের খরচ পোষাতে না পেরে সেখান থেকে নবজাতককে নিয়ে যান রায়েরবাজার কবরস্থানে। কবর খোঁড়ার কাজ চলার সময় নবজাতকটি নড়ে ওঠে এবং কাঁদতে থাকে। তখন ইয়াসিন তাকে নিয়ে আবার ঢাকা মেডিকেলে ছুটে আসেন।

ঘটনায় সমালোচনার মুখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কে এম নাসিরউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডেলিভারি হওয়ার পর বাচ্চাটির স্পন্দন ছিল না। আমাদের চিকিৎসকদের নেগলিজেন্সি ছিল না।

তাঁরা ৪৫ মিনিট অবজারভেশনে রেখেছেন, তারপরও কোনো স্পন্দন না পেয়ে মৃত ঘোষণা করেছেন।তিনি আরও বলেন, যেহেতু বাচ্চাটি কবরস্থানে গিয়ে নড়েচড়ে উঠেছে, তাই এর দায়ভার এড়ানো যায় না। ঘটনায় গঠিত চার সদস্যের তদন্ত কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও কিছু সুপারিশ রেখেছে।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন তোলেন, নড়েচড়ে ওঠার পর শিশুটিকে যখন দ্বিতীয়বার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক ইউনিটে আনা হয়, তখন সেখানকার কেউ কেউ তাকে অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে বলেছিলেন। হাসপাতালে দ্বিতীয় দফায় ভর্তি হতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় কেটে যায়। এটা কেন হলো? জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, তদন্তে এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। যে বা যারা অবহেলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, নবজাতক ইউনিটে সব আসন সব সময় ফাঁকা থাকে না। তারপরও তিনি যখন বিষয়টি জানতে পারেন, তখন বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে কথা বলে শিশুটিকে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। জন্য অপেক্ষাকৃত সুস্থ একটি শিশুকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে হয়।

কমিটির নবজাতক ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক মনীষা ব্যানার্জি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নবজাতকের বেঁচে যাওয়া যেমন একটিমিরাকল’, তেমনি তাকে বাঁচিয়ে রাখাওমিরাকল তিনি বলেন, বাংলাদেশে ২৮ সপ্তাহের নিচে কোনো শিশু ভূমিষ্ঠ হলে তাকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। আর এই শিশুটি ভূমিষ্ঠ হয়েছে ২৬ সপ্তাহে। তাকে বাঁচিয়ে রাখার সব রকম চেষ্টা করছেন চিকিৎসকেরা। তার অবস্থা একটু ভালোর দিকে। তবে এখনো সে আশঙ্কামুক্ত নয়। বর্তমানে নবজাতকটি অক্সিজেন চলছে, পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে। আর দুএক দিন পর অল্প অল্প করে খাবার দেওয়া হবে।

তবে ধরনের শিশুদের ক্ষেত্রে যেকোনো সময় শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে চলে যায় বলেও জানান মনীষা চক্রবর্তী। তিনি শিশুটির জন্য সবাইকে দোয়া করতে বলেছেন।

মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক, উপপরিচালক আলাউদ্দিন আল আজাদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অজ্ঞাত রোগী শনাক্ত করবে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি

অজ্ঞাত রোগী শনাক্ত করবে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি, অভিনব পদ্ধতি আবিষ্কার। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পে থাকবে একটি বায়োমেট্রিক মেশিন। হাসপাতালে অজ্ঞাত রোগী আসার পর প্রথমেই পুলিশ ওই রোগীর আঙ্গুলের ছাপ নেবে। জাতীয় পরিচয়পত্রে আঙ্গুলের ছাপ থাকার কারণে বায়োমেট্রিক মেশিনের মাধ্যমে অজ্ঞাত রোগীর পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হবে। চমেক হাসপাতালের অজ্ঞাত রোগীর সেবক খ্যাত প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম নেসার অভিনব এ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। পদ্ধতিটি বাস্তবায়নে দরকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন এবং সরকারি হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পে একটি করে বায়োমেট্রিক মেশিন। তবে সরকারি হাসপাতালে পদ্ধতিটি বাস্তবায়নের দাবিতে প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম নেসার ‘অজ্ঞাত রোগী ও লাশের পরিচয় শনাক্তে চমেক হাসপাতালসহ প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক সিস্টেম চালু’ শীর্ষক একটি আবেদন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবরে জমা দেন। প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম নেসার বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অজ্ঞাত রোগী মানেই বাড়তি বিড়ম্বনা। হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক, নার্স ও মেডিকেলে দায়িত্বরত পুলিশ বাহিনী সবাইকে অজ্ঞাত রোগী নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। তাছাড়া মর্গে আসা অজ্ঞাত লাশ নিয়ে জটিলতাও প্রতিদিনেরই চিত্র। তাই সিএমপি কমিশনারের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুরোধ, যাতে দ্রুত উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করা হয়। এর মাধ্যমে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে সরকারের, কমবে অজ্ঞাত রোগীর ভোগান্তি।’ জানা যায়, গত ১৪ বছর ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অজ্ঞাত রোগী নিয়ে কাজ করছেন নেসার। ইতিমধ্যে প্রায় ৮৫০ জন অজ্ঞাত রোগীর সেবা দেওয়া হয় এবং প্রায় ৩৫০ জন অজ্ঞাত রোগীর পরিচয় শনাক্ত করে পরিবারের হাতে তুলে দেন। বর্তমানে প্রতিনিয়তই সরকারি হাসপাতালগুলোতে অজ্ঞাত রোগী ভর্তি হচ্ছে। চমেক হাসপাতালে প্রতি বছর ভর্তি হয় প্রায় ২৫০ অজ্ঞাত রোগী।

বিএসএমএমইউর নার্স নিয়োগের ভাইভা চলছে, ফলাফল ২৮ অক্টোবর

ছবি: ইন্টারনেট

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ৬০০ সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে।

পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ভাইভা চলছে। আগামী ২৮ অক্টোবর ভাইভার ফল প্রকাশ করা হবে। বিএসএমএমইউয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়েছে।

গত শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন সকালটা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত রাজধানীর কয়েকটি কেন্দ্রে পরীক্ষা হয়েছে। ফলাফল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট এবং নোটিশ বোর্ডে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। মোট ৬০০ পদের বিপরীতে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১৬ হাজার।

৬০০ সিনিয়র স্টাফ নার্সের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এর আগেও বছরের ২৫ জানুয়ারি একবার প্রকাশিত হয়েছিল। ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আবেদনকারীর সংখ্যা কম হওয়ায় আবার নতুন বিজ্ঞপ্তি গত ২৪ আগস্ট প্রকাশিত হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁদের নতুন করে আবেদন করতে হবে না। সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে আবেদনের জন্য ডিপ্লোমাইননার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অথবা বিএসসিইননার্সিং ডিগ্রি এবং বাংলাদেশ নার্সিং মিডওয়াইফারি কাউন্সিল কর্তৃক রেজিস্টার্ড হতে হবে। ১৫ সেপ্টেম্বর ছিল আবেদনের শেষ দিন। নিয়োগপ্রাপ্ত নার্সকে জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫-এর গ্রেড-১০ অনুযায়ী ১৬,০০০-৩৮,৬৪০ টাকা দেওয়া হবে।

আজ বিশ্ব অস্টিওপরোসিস দিবস, হাড় সুস্থ রাখতে সচেতন থাকুন!

শরীরের ওজন নিয়ে এখন যতটা মাথাব্যথা আমাদের, ততটা কিন্তু হাড় নিয়ে নয়। অথচ এই হাড়ই কিন্তু বয়সকালে ধরে রাখবে আপনাকে। বয়স, জিনগত কারণ, মেনোপজ, অনিমিয়ত জীবন যাপনে দেখা দেয় অষ্টিওপোরোসিস মতো হাড় ভঙ্গুর হয়ে যাওয়ার রোগ। ওজন কমানোর ঝোঁকে অল্পবয়সীদের মধ্যে বাড়ছে অস্বাস্থ্যকর ডায়েটের প্রবণতা। যার ফলে ওজন কমলেও ভেঙে যাচ্ছে শরীর। দুর্বল হচ্ছে হাড়। স্বাভাবিক ভাবেই বাড়ছে অস্টিওপরেসিসের প্রকোপ। এই অবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ২০ অক্টোবর বিশ্ব অষ্টিওপোরোসিস দিবস ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। একটু সচেতন থেকে যদি মেনে চলা যায় সঠিক ডায়েট ও শরীরচর্চার রুটিন, তবে অষ্টিওপোরোসিস আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমানো যেতে পারে। অষ্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় রোগ কি? হাড়ের ভেতরের ঘনত্ব বাড়া-কমা একটি চলমান প্রক্রিয়া। ১৬-১৮ বছর বয়সের দিকে হাড়ের দৈঘ্য বৃদ্ধি হওয়া বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু ২০ বছর বয়স পর্যন্ত হাড়ের ভিতরের ঘনত্ত ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে । ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত হাড়ের গঠন ও ক্ষয় একসঙ্গে একই গতিতে চলতে থাকে। ৪০ বছর বয়সের পর থেকে প্রাকৃতিক নিয়মে বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড় ক্ষয়ের মাত্রা একটু একটু করে বাড়তে থাকে। তাই নির্দিষ্ট বয়সে হাড়ের ক্ষয় একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া । হাড়ের এই ক্ষয় বাড়তে বাড়তে হাড় যখন নরম ও ভঙ্গুর হয়ে যায় সেই অবস্থাকে অষ্টিওপোরোসিস বলা হয় । অষ্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় রোগের প্রাদুর্ভাব: এই রোগে মহিলা ও পুরুষ উভয়ই আক্রান্ত হয়, তবে মহিলাদের বিশেষ করে মেনোপজ বা ঋতুস্রাব বন্ধের পর শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যায়, যার ফলে হাড়ের ক্ষয়ের মাত্রা বেড়ে যায় এবং পুরুষের টেস্টোস্টেরেন হরমোন ৭০ বছর বয়সে কমতে শুরু করে তখন হাড়ের ক্ষয় শুরু হয় । তবে পরিসংখ্যানে দেখা গেছে সারাবিশ্বে ৫০ বছরের অধিক বয়সের প্রতি ৩ জন মহিলার মধ্যে ১ জন এবং প্রতি ৫ জন পুরুষের ১ জন অষ্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় রোগে আক্রান্ত । যারা অষ্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় রোগে আক্রান্ত হন তাদের মধ্যে ৮০ ভাগই মহিলা এবং ২০ ভাগ পুরুষ । কাদের অষ্টিওপোরোসিসের ঝুকি বেশী? বর্তমানে অষ্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় রোগ সারা বিশ্বব্যাপী বয়স্ক জনগোস্টীকে হুমকির সম্মুখীন করে দিয়েছে অষ্টিওপোরোসিসের ঝুঁকিপূর্ণরা হলেনঃ ১। মেনোপজ বা ঋতু স্রাব বন্ধ পরবর্তী মহিলারা ২। এশীয় বা ককেশীয়ানরা ৩। যাদের পরিবারের কারো অষ্টিওপোরোসিস আছে ৪। যারা পর্যাপ্ত পরিমান ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি গ্রহন করেন না ৫। যারা ব্যায়াম করেন না ৬। যাদের ওজন কম ৭। ধূমপায়ীরা ও এলকোহল পানকারীরা ৮। কিছু অসুখ অষ্টিওপোরোসিসের ঝুকি বাড়িয়ে দেয় । যেমন – রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস , যাদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কম, যাদের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কম, যাদের শরীরে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেশী, যাদের শরীরে প্যারাথাইরয়েড হরমোনের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেশী , যেসব রোগে খাবারের শোষণ ব্যাহত হয়। যেমন – celiac disease, যে সব রোগে অনেকদিন শুয়ে থাকতে হয় । যেমন – ব্রেইন স্ট্রোক, এইচ আই ভি ইত্যাদি। ৯। কিছু ঔষধ ও অষ্টিওপোরোসিসের ঝুকি বাড়িয়ে দেয়। যেমন – – – তিন মাসের অধিক সময় ধরে কর্টিকস্টেরয়েড ট্যাবলেট খেলে – খিচুনী – বিরোধী ঔষধ খেলে – স্তন ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ – প্রোস্টেড ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ ইত্যাদি। অস্টিওপোরোসিস নির্ণয়ের পরীক্ষা: অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় ও দুর্বল রোগ সহজেই নির্ণয় করা যায় ১। ক্লিনিক্যাল উপসর্গ এবং স্বাভাবিক পর্যবেক্ষণ এর মাধ্যমে ঃ চিকিৎসক আপনার শারীরিক বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল উপসর্গ পর্যবেক্ষণ এবং পূর্ববর্তী রোগ ও ঔষধ গ্রহনের ইতিহাস এবং বিভিন্ন ঝুকি পর্যবেক্ষণ করে আপনার অস্টিওপোরোসিস আছে কিনা নির্ণয় করতে পারেন। ২। হাড়ের এক্স-রে ঃ চিকিৎসক আপনার শরীরের হাড়ের এক্স-রে করে তাদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তারা আপনার হাড়ের ঘনত্ব বুঝতে পারেন । ৩। বি এম ডি(বোন মিনারেল ডেনসিটি) বা হাড়ের ঘনত্ব নিরনয় পরীক্ষা ঃ আপনার অস্টিওপোরোসিস হয়েছে কিনা পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে জানতে বি এম ডি (বোন মিনারেল ডেনসিটি) বা হাড়ের ঘনত্ব নির্ণয় পরীক্ষা করা হয়। এটি সাধারণ এক্সরে স্ক্যানিং এর মত একটি স্ক্যান বা পরীক্ষা যা সম্পূর্ণ ব্যাথামুক্ত, সহজ এবং যেটা খুব সামান্য রেডিয়েশন ব্যবহার করে করা যায় । অষ্টিওপোরোসিস এর পরিণতি কি? অষ্টিওপোরোসিস একটি নীরব ক্ষয় রোগ। প্রাথমিক অবস্থায় অষ্টিওপোরোসিস এর তেমন কোন উপসর্গ দেখা দেয় না। অষ্টিওপোরোসিস তখনই যন্ত্রণাদায়ক হয় যখন হাড়ে ফাটল ধরে বা হাড় ভেঙ্গে যায় । অষ্টিওপোরোসিসে হাড়ের ঘনত্ব কমে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়, ফলে দেখা যায় যে খুবই সামান্য পরিমাণ আঘাত লাগলে বা দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে গিয়েই শরীরের বিভিন্ন জায়গার হাড় ভেঙ্গে যেতে পারে। সাধারণত প্রথমবার হাড় ভাঙ্গার আগে কোন উপসর্গই দেখা যায় না । অষ্টিওপোরোসিসের কারনে শরীরের যেকোনো জায়গার হাড় ভেঙ্গে যেতে পারে তার মধ্যে মেরুদন্ডের হাড়, নিতম্ব বা হিপ জয়েন্ট, কবজি বা রিস্ট জয়েন্ট এর হাড় ভাঙ্গার পরিমাণ বেশি লক্ষ্য করা যায়। অস্টিওপোরোসিস এর চিকিৎসা কি? অস্টিওপোরোসিস এর চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য হল আপনার হাড়কে শক্তিশালী করে তোলা, হাড়ের ক্ষয়ের হার কমানো ও সর্বাপুরী হাড় ভাঙ্গার ঝুকি কমানো। অস্টিওপোরোসিস এর চিকিৎসায় যে সব ঔষধ ব্যাবহার হয়, তার মধ্য উল্ল্যেখযোগ্য – এল্যেন্ড্রনেট সোডিয়াম, রিসড্রনেট সোডিয়াম, ইবান্ড্রনিক এসিড , সিলেক্টিভ ইস্ট্রজেন রিসেপ্টর মডুলেটর, প্যারাথাইরয়েড হরমোন চিকিৎসা, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট, হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি ইত্যাদি। তবে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করুন অস্টিওপোরোসিস মুক্ত থাকুন । লেখকঃ ডাঃ এম ইয়াছিন আলী বাত, ব্যথা ও প্যারালাইসিস রোগে ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান – ফিজিওথেরাপি বিভাগ প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চীফ কনসালটেন্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা।

টেকসই উন্নয়নে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে: সায়মা ওয়াজেদ পুতুল

ছবি: ইন্টারনেট

বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটি অব অটিজম অ্যান্ড নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডারের সভাপতি সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বলেছেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের কোনো বিকল্প নেই।

২৮ তমবিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্যদিবস উপলক্ষে সিআরপি আয়োজিত ডে সেন্টার ফর পিপল উইথ মেন্টাল হেলথ নিডস: মডেল কেয়ার অব বাংলাদেশশীর্ষক ওয়েবিনারে সায়মা ওয়াজেদ এসব কথা বলেন। বছর দিবসটির থিমমানসিক স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ

গতকাল সোমবার সিআরপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কথা জানানো হয়েছে। সিআরপি ২০১৪ সাল থেকে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছে। ২০১৮ সালে কাদুরি চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশনের সহায়তায় সিআরপি গণকবাড়িতে মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় ডেকেয়ার সেন্টার স্থাপন করে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সায়মা ওয়াজেদ পুতুল মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বাংলাদেশের হেলথ প্রফেশনাল বা থেরাপিস্টদের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বা মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিদের হলিস্টিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বল্প সম্পদের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক . হেলাল উদ্দিন আহমেদ, সিআরপির প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর অব অকুপেশনাল থেরাপি ডেকেয়ার সেন্টার ফর পিপল উইথ মেন্টাল হেলথ নিডসের রাজিয়া সুলতানা প্রমুখ অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

ওয়েবিনারে সিআরপির প্রতিষ্ঠাতা ভ্যালেরি টেইলর সভাপতিত্ব করেন। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম রব্বানি, কাদুরি চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশন হংকংয়ের সাউথইস্ট এশিয়ার প্রোগ্রাম ম্যানেজার রিতা বনমালী, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি বর্ধন জং রানা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ননকমিউনিকেবল ডিজিজ সেন্টারের লাইন ডিরেক্টর মোহাম্মাদ হাবিবুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সিআরপির নির্বাহী পরিচালক মো. সফিকুল ইসলাম।

সুস্থ দাঁতের জন্য করনীয়

করোনাভাইরাস বিস্তারে মুখ অন্যতম একটি মাধ্যম। সুতরাং পূর্ণভাবে বাড়িতে মুখ ও দাঁতের যত্ন নিতে হবে, অবশ্যই দিনে দুবার দাঁত ব্রাশ করা উচিত। বর্তমানে পুরো বিশ্ব করোনায় আক্রান্ত। এই মহামারি আমাদের দাঁড় করিয়েছে নতুন এক বাস্তবতার সামনে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসচেতনতা বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে সবাইকে। এর থেকে বাদ যায় না মুখ ও দাঁতের পরিচর্যাও। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ডা. অরূপ রতন চৌধুরীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। তিনি জানান, ইংরেজিতে একটা কথা আছে, ‘ইয়োর মাউথ: আ গেটওয়ে টু ইয়োর বডি’স হেলথ’, অর্থাৎ মুখই স্বাস্থের প্রবেশপথ। অর্থাৎ মুখ দিয়ে যা কিছু খাই, তা–ই আমাদের পাকস্থলীতে যায়। করোনাভাইরাসের অন্যতম প্রবেশদ্বারও মুখ। সুতরাং মুখ ও দাঁতের সুস্থতার সঙ্গে সারা শরীরের সুস্থতা জড়িত। অন্যভাবেও বলা যায়, মুখের সুস্থতার ওপরই দেহের সুস্থতা নির্ভর করে। করোনাভাইরাস বিস্তারে মুখ অন্যতম একটি মাধ্যম। সুতরাং পূর্ণভাবে বাড়িতে মুখ ও দাঁতের যত্ন নিতে হবে, অবশ্যই দিনে দুবার দাঁত ব্রাশ করা উচিত। বিশেষ করে সকালে ও রাতে খাওয়ার পর, সফট টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত ও জিব পরিষ্কার করা উচিত। সকালে ও রাতে হালকা গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করা। দাঁতে ফাটল হতে পারে, এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। যেমন বোতল বা চুলের পিন খুলতে দাঁত ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। করোনার এই সময় যেহেতু বাড়িতেই বেশি সময় থাকতে হচ্ছে, এ জন্য দাঁত ভালো রাখতে সারা দিন কী খাচ্ছেন, সে ব্যাপারে যত্নবান হোন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রুটিন ডেন্টাল চেকআপ এই করোনাকালে না করাই ভালো। তবে কারও যদি কোনো জরুরি প্রয়োজন হয়, যেমন দাঁতের গোড়া বা মুখ ফুলে যাওয়া, মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করা, হাঁ করতে অসুবিধা হওয়া, মুখে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া, ধারালো ভাঙা দাঁতের কারণে ঘা বা ক্ষত। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতেই হবে। এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থার নির্দেশনাগুলো চিকিৎসক, রোগী, স্বাস্থ্যকর্মীসহ সবাইকে মানতে হবে।

গর্ভাবস্থায় পায়ের মাংশপেশী টেনে ধরা – কারণ ও চিকিৎসা

গর্ভাবস্থায় প্রভাবিত করে এমন শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তনগুলি মোকাবেলায় একজন মায়ের সমস্ত যত্ন, আরাম এবং জ্ঞান প্রয়োজন। পিঠে ব্যথা এবং মাথায় ব্যথার মতো গর্ভাবস্থার সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য সমস্ত লক্ষণগুলির মধ্যে, পায়ে খিঁচ লাগা একটি সাধারণ সমস্যা। যাইহোক, এটি একটি অস্থায়ী অবস্থা এবং আপনি একাই যে কেবলমাত্র এই যন্ত্রণায় ভুগছেন তা নয়।

গর্ভাবস্থায় পায়ে খিঁচ লাগা

খিঁচ লাগা হল আপনার শরীরে পেশীতে অনাকাঙ্ক্ষিত সংকোচন বা হঠাৎ শক্ত হয়ে যাওয়া। এই ব্যথাগুলি গর্ভাবস্থাকালীন পায়ের পেশীতে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। অনেক গর্ভবতী মহিলা তাদের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকের মধ্যে প্রায়শই রাতে এমন নি¤œ পায়ে খিঁচ লাগার সমস্যায় ভোগেন। ভাগ্যক্রমে, সম্ভাবনা হল এই রোগগুলি আপনার প্রসবের পরে অদৃশ্য হয়ে যাবে। এর মধ্যে, অস্বস্তি দূর করতে কিছু জিনিস আপনি করতে পারেন। আপনার গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে, যথাযথ বিশ্রামের সাথে নিয়মিত বিকল্প সার্কুলেশন বুস্টার ব্যায়াম অনুশীলন করা (পায়ের পাতা এবং পা উপরে তোলা!) ক্র্যাম্পগুলি বিকাশ থেকে রোধ করতে পারে। ব্যথা একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার। আপনি যখন আপনার আরামদায়ক বিছানায় ঘুম পেতে চেষ্টা করেও সমস্ত রাত জেগে কাটিয়েছেন তখন আপনার চেয়ে বেশি কেউ অনুভব করতে পারে না। সেই নির্জন সময়ে যদি আপনার পায়ের খিঁচ লাগা যদি আপনাকে শান্তিতে বিশ্রাম নিতে না দেয়, তবে আপনার ব্যথার কারণ এবং প্রতিকার সন্ধানের সময় এসেছে। গর্ভধারণের ঠিক পরে, মহিলারা সাধারণত উদ্বেগ প্রকাশ করেন যখন তারা হালকা খিঁচ বা টানের অনুভূতি এবং টেন্ডনে টান অনুভব করে। প্রারম্ভিক গর্ভাবস্থায় পায়ে ক্র্যাম্প হওয়ার কয়েকটি কারণ এখানে রয়েছে:

গর্ভবতী মহিলাদের পায়ে খিঁচ লাগার কারণগুলি

কী কারণে পায়ে খিঁচ সৃষ্টি হয় সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত নন। “চার্লি হর্সের”, আপনার হাঁটুর নিচের মাংসল পেশীগুলিতে বেদনাদায়ক ক্র্যাম্পের অ-ক্লিনিকাল নাম, যদিও অত্যন্ত বেদনাদায়ক, সাধারণত ভাগ্যক্রমে অল্প সময়ের জন্য হয়। গর্ভাবস্থায় পায়ে ক্র্যাম্প হওয়ার কারণগুলি অনেকগুলি হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছেঃ
  • অতিরিক্ত ওজন
  • ভারী জিনিস বহন
  • শরীরে খনিজের ভারসাম্যহীনতা
  • পায়ের স্নায়ু ও রক্তনালীগুলির উপর চাপ বাড়া এবং ক্রমবর্ধমান শিশু দ্বারা প্রসারিত জরায়ু
  • গর্ভাবস্থা সম্পর্কিত ওজন বৃদ্ধি
  • আপনার পায়ে তরল তৈরি হওয়া থেকে ফোলাভাব, এটি ইডেমা হিসাবে পরিচিত যদি আপনার একাধিক গর্ভাবস্থা থাকে এবং একাধিক শিশু বহন করেন; এই জাতীয় মহিলাদের দুটি ভ্রূণের সাথে সামঞ্জস্য করার জন্য আরও অ্যামনিয়োটিক তরল থাকে এবং তাই পায়ে ক্র্যাম্প ও ইডেমা হতে পারে যা স্বাভাবিকের চেয়ে খারাপ। প্রসবের পরে, অতিরিক্ত ঘামের আকারে এই ফোলা কিছু দিনের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যায়।

পায়ে ক্র্যাম্পের লক্ষণ

যখন আপনি হাঁচি, কাশি, বা অবস্থান পরিবর্তন করে বসে থাকা অথবা এমনকি শুয়ে থাকার সময় ক্র্যাম্পিং আরও লক্ষণীয় হতে পারে। এই খিঁচগুলি দিনের বেলা আপনার হাঁটুর উপরে এবং নীচে আসতে পারে, তবে ক্লান্তি এবং তরল জমে গেলে এগুলি সাধারণত রাতে বেশি লক্ষণীয় হয়। আপনি আপনার পায়ের নিচের পেশীগুলিকে হঠাৎ বেদনাদায়ক খিঁচ পেয়ে রাতে জেগে উঠতে পারেন, ভাবতে পারেন এটি স্বপ্ন। এই বেদনাগুলি বিরক্তিকর, তবে এগুলি অবিরত না হলে এবং আপনার দৈনন্দিন জীবনে হস্তক্ষেপের জন্য যথেষ্ট তীব্র না হলে এগুলি সাধারণত উদ্বেগের কারণ নয়। যদি আপনি গুরুতর সমস্যার মুখোমুখি হন তবে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। যদি আপনার চোখের চারপাশে ধোঁয়াশা থাকে, মুখের ফোলাভাব হয় বা পা ও গোড়ালিগুলির অস্বাভাবিক ফোলাভাব হয় অথবা এক পা অন্যটির চেয়ে বেশি ফুলে যায় তবে ক্র্যাম্পগুলি রক্তের জমাট পর্যন্ত নির্দেশ করতে পারে। পায়ের ক্র্যাম্পগুলির সম্ভাবনা বাড়াতে পারে এমন কারণগুলি ওজনে যথেষ্ট পরিমাণ বৃদ্ধি, পায়ের পাতার তলা ফোলা এবং ক্লান্তির মতো কারণগুলি জন্য পায়ে ক্র্যাম্প হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই খিঁচ লাগা আপনার পায়ের পেশীতে দিনের বেলা উপরে ও নীচে হবে এবং রাতে ঘুমের মানের উপরও চাপ দিতে পারে যা স্ট্রেস বা হতাশার দিকে পরিচালিত করে। ওজন বৃদ্ধি – গর্ভাবস্থা এবং ওজন বাড়ার সাথে, অতিরিক্ত চাপের কারণে নি¤œ অঙ্গগুলিতে চাপ তৈরি হয়। ক্রমবর্ধমান জরায়ু – জরায়ুর ক্রমবর্ধমান আকার পায়ের প্রধান শিরাগুলিতে চাপ বাড়ায়। হরমোন – গর্ভাবস্থা হরমোন, (যেমন প্রজেস্টেরন) শারীরবৃত্তীয় কারণগুলির সাথে মিলিত হয়ে পেশীগুলির মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি করে এবং পেশীতে খিঁচ ও দেহের ব্যথায় বাড়ায়। পুষ্টির ঘাটতি – ম্যাগনেসিয়াম বা ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও পায়ে জটিলতা সৃষ্টি করে। মায়ের রক্তে পুষ্টির স্তর হ্রাস পায় যেহেতু ভ্রূণও পুষ্টির জন্য মায়ের দেহের উপর নির্ভর করে। পায়ে ক্র্যাম্পের ব্যথা মোকাবেলা করার চিকিৎসা বেশিরভাগ হবু মায়েদের মধ্যে পায়ের ক্র্যাম্পগুলি সাধারণ এবং বিভিন্ন প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা রয়েছে যা আপনাকে খিঁচ লাগা থেকে মুক্তি দিতে এবং চিকিৎসা করতে পারে বা তাদের তৈরি হতে বাধা দিতে পারে। স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখা ছাড়াও জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আপনাকে এর সাথে মোকাবিলা করতে দীর্ঘ সময় নিতে পারে। কিছু মায়েদের জন্য পরিপূরক ম্যাগনেসিয়াম বা ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হয় (উদাঃ গোটা শস্য, শিম, বাদাম এবং বীজ) গর্ভাবস্থায় লেগ ক্র্যাম্প প্রতিরোধে সহায়তা করে। বাধা রোধ করতে আপনার পেশীগুলিকে হাইড্রেটেড রাখতে জল পান করুন। গর্ভাবস্থায় পায়ে ক্র্যাম্পের জন্য ম্যাগনেসিয়াম আপনার পেশী শক্তিশালী রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় পায়ে খিঁচ লাগার জন্য পরিপূরক গ্রহণের আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। আপনি যদি ভাবছেন যে যখন আপনার পায়ে ক্র্যাম্প থাকে তখন কী করবেন, তবে এই থেকে মুক্তি বা প্রতিরোধে এই সহজ পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করে দেখুন:
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং স্ট্রেচ চেষ্টা করুন।
  • পা ছড়িয়ে আরাম করে বসুন।
  • আপনার পায়ের সমর্থন করতে স্টকিংস পরুন।
  • আপনার হাঁটু এবং পায়ের জন্য একটি প্রশান্ত ম্যাসেজ সাহায্য করবে।
  • জেল প্যাক বা গরম জলের বোতল দিয়ে তাপ প্রয়োগ করুন।
  • ঠান্ডা পৃষ্ঠে দাঁড়িয়ে কিছু সময়ের জন্য অস্বস্তি কমিয়ে আনতে পারেন।\
  • উপযুক্ত জুতো চয়ন করুন যা আরামদায়ক, সমর্থনকারী।
  • আক্রান্ত দিকের পেশীগুলি প্রসারিত করুন।
  • একটি গরম স্নান বা একটি পেশীর ম্যাসেজ সাহায্য করতে পারে।
  • লেগ ক্র্যাম্প প্রতিরোধ দুর্ভাগ্যক্রমে, এই পদ্ধতির কোনটিও গর্ভাবস্থায় পায়ের খিঁচ লাগা প্রতিরোধের গ্যারান্টি দিতে পারে না।
তবে গর্ভাবস্থায় একটি পরিমাণে পায়ের ক্র্যাম্প রোধ করার জন্য কয়েকটি টিপস এখানে রইল:
  • দীর্ঘ সময় ধরে আপনার পা মুড়িয়ে থাকবেন না।
  • আপনার বিছানায় যাওয়ার আগে নিয়মিত আপনার পায়ের পেশীগুলি প্রসারিত করুন।
  • নিজেকে হাইড্রেটেড রাখতে প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন, কারণ সোডিয়ামের অভাবে পেশীর সংকোচনের কারণ হয়। গাঢ় হলুদ বর্ণের প্রস্রাব আপনার অপর্যাপ্ত জল খাওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
  • কফি কম পান করুন কারণ এতে ক্যাফিন রয়েছে যা আপনার প্রস্রাবের মাধ্যমে হ্রাসকারী তরল পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে।

গর্ভবস্থায় লেগ ক্র্যাম্পের প্রাকৃতিক প্রতিকার

গর্ভাবস্থায় শারীরিক ব্যথা এবং পায়ে খিঁচ লাগা স্ট্রেস, অস্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস এবং পর্যাপ্ত ব্যায়ামের অভাব হল সাধারণ কারণ। প্রাকৃতিক প্রতিকারগুলির মাধ্যমে এই মূল কারণগুলি সমাধান করার চেষ্টা করুন। স্বাচ্ছন্দ্য: – এপসম লবণের সাথে একটি গরম জল স্নান আপনার পায়ের ব্যথায় প্রায়শই কার্যকরভাবে আরাম দিতে পারে। এটি আপনাকে শিথিল করতে সহায়তা করে এবং আপনার পেশীগুলির উত্তেজনা থেকে মুক্ত করার সময় আপনার চাপের মাত্রা হ্রাস করে। আপনি রেফ্রিজারেটর থেকে বরফ নিয়ে বা একটি আইস প্যাক ব্যবহার করতে পারেন এবং এটি আপনার ক্র্যাম্পিং পেশীতে প্রয়োগ করতে পারেন। অন্যান্য স্ট্রেস-মুক্ত ক্রিয়াকলাপগুলির মধ্যে বই পড়া, সৃজনশীল শখ, সিনেমা দেখা বা এমন কিছু যা আপনাকে খুশি রাখে তাই করুন। পুষ্টি: – পটাসিয়াম / ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার আপনাকে গর্ভাবস্থায় সক্রিয় থাকতে সহায়তা করে। ম্যাগনেসিয়াম বা অন্য কোনও পরিপূরক গ্রহণের আগে আপনার ব্যাম, যতœ এবং ডাক্তারের পরামর্শ প্রয়োজন। অতিরিক্ত ম্যাগনেসিয়াম, উদাহরণস্বরূপ, ডায়রিয়ায় হতে পারে। পাতলা শাকসব্জী, ফল এবং সালাদ দিয়ে তৈরি একটি সুষম ডায়েট কেবল ঘাটতি পূরণ করবে না, তবে এটি আপনার পুষ্টির চাহিদাও পূরণ করবে এবং ঘন ঘন হওয়া ও তীব্র পায়ের বাধা হ্রাস করবে। টেবিল লবণ এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন। উচ্চ মানের সমুদ্রের লবণের সাথে রান্না করা খাবারও খাবেন না। আপনার নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বিবেচনা করে যদি কোনও গর্ভাবস্থা মাল্টিভিটামিন বা খাদ্য পরিপূরক প্রয়োজন হয় তবে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। এতে থাকা খাবারগুলি অন্তর্ভুক্ত করে স্বাস্থ্যকর ডায়েট খাওয়ার চেষ্টা করুন: ম্যাগনেসিয়াম (খেজুর, ডুমুর, মিষ্টি কর্ন, সবুজ সবজি এবং আপেল)। ক্যালসিয়াম (দুধ এবং দুধজাত পণ্য, সূর্যমুখী বীজ, স্যামন মাছ এবং ডাল) ভিটামিন সি (কমলালেবু, আঙুর, আলু, টমেটো ইত্যাদি) অনুশীলন: – যোগব্যায়াম, হাঁটা বা সাঁতারের মতো কোমল অনুশীলনগুলিও আপনার খিঁচ লাগার তীব্রতা হ্রাস করতে সহায়তা করে। হাঁটার ব্যাপারে সক্রিয় থাকুন, লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি বেছে নেওয়া বা একটি ছোট বাগানে জল দেওয়া সাহায্য করবে। আপনার প্রয়োজন হলে বিশ্রামের জন্য থামার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। হালকা অনুশীলন করা আপনার রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি করতে পারে এবং লেগ ক্র্যাম্প হ্রাস করতে পারে পাশাপাশি প্রসব শ্রমের জন্য প্রস্তুত করার জন্য আপনার শারীরিক শক্তি উন্নত করতে সহায়তা করে। গর্ভাবস্থাকালীন লেগ ক্র্যাম্পের জন্য অনুশীলন করার পূর্বে সম্পর্কিত ক্লাসে যাওয়ার সুপারিশ করা হয় যা আপনাকে সন্তানের জন্ম সম্পর্কে সচেতন করে। পায়ে জল জমা কমাতে যথাযথ অনুশীলন রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নতি করে। ১. গোড়ালি ঘোরানো এবং বসে থাকার সময় আপনার পায়ের আঙুলে মোচড় দেওয়া। ২. যেহেতু এর মধ্যে কিছু খিঁচ পেশীগুলির ক্লান্তি এবং তরল ধারন থেকে আসে, তাই মৃদু যোগ ব্যায়ামের প্রসারগুলি সহায়ক হতে পারে। ৩. ক্রিয়াকলাপের সময়সীমার পরে বিশ্রামের সময় অনুসরণ করা উচিত কারণ আপনি পা উপরে তুলে আরাম করে যান। ৪. দিনের বেলা একটি সমর্থন হিসাবে পায়ের পাতার বিশেষ মোজা পরা। গর্ভাবস্থার জন্য সুরক্ষিত ল্যাভেন্ডার বা ক্যামোমিলের মতো অ্যারোমাথেরাপি তেলগুলি দিয়ে অঞ্চলটি ম্যাসেজ করার সাথেও ক্র্যাম্প হ্রাস পায়। যে কোনও সময় আপনার শরীরের প্রয়োজনীয়তাগুলি অনুসরণ করুন। অতিরিক্ত ওষুধ খাবেন না এবং দিনে ১.৫ লিটার (৮ গ্লাস) জল পান করুন। ব্যথা স্থিতি করার জন্য আপনি কী করতে পারেন? আপনার পেশীগুলি কিছু সময়ের জন্য ক্র্যাম্পের পরে ব্যাথা এবং কোমলভাব বোধ করতে পারে। ব্যথানাশক হিসাবে প্যারাসিটামোলের কার্যকারিতা সম্পর্কে কিছুটা বিতর্ক থাকলেও প্যারাসিটামলোকে ব্যথা উপশম হিসাবে গ্রহণ করা যেতে পারে। বরং পরিবর্তে উষ্ণ স্নান করুন। বিরল ক্ষেত্রে, পায়ে ক্র্যাম্প বা পায়ের ব্যথার কারণ পায়ে একটি শিরাতে রক্তের জমাট বাঁধা হতে পারে (ভেনাস থ্রোম্বোয়েম্বোলিজম)। যদি ব্যথা রক্ত জমাট বাঁধার কারণে হয় তবে আপনার চিকিৎসা করার প্রয়োজন হতে পারে। আপনার যদি এগুলি থাকে তবে আপনার ডাক্তারকে কল করুন:
  • পায়ে অবিরাম ব্যথা
  • হাঁটুর নিচের পেশীর কোমলতা বা ফোলাভাব
  • অস্পষ্ট দৃষ্টি সহ অনবরত মাথাব্যথা
  • শ্বাসকষ্টের সাথে বুকের ব্যথা
  • গর্ভাবস্থা একটি মায়ের জীবন পরিবর্তন করে। স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার মূল বিষয় হল সম্পর্কিত অসুবিধাগুলি সম্পর্কে আরও সজাগ এবং সচেতন হওয়া। শারীরিকভাবে ফিট এবং মানসিকভাবে স্থিতিশীল থাকা এই পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ, তাই শিথিল করার মাধ্যমে আপনার মনকে এই বিষয় থেকে দূরে রাখুন এবং ভবিষ্যতের প্রত্যাশার চেষ্টা করুন।

চীনের আরেক ভ্যাকসিন মানব শরীরে সফল

চীনের তৈরি আরেকটি করোনা প্রতিরোধক ভ্যাকসিন মানব শরীরে পরীক্ষায় সফল হয়েছে। ‘বিবিআইবিপি-করভি’ নামের এ ভ্যাকসিনটি তৈরি করছে বেইজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টসের অধীনে থাকা চায়না ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপ (সিএনবিজি)। সূত্র : রয়টার্স। গবেষকরা বলেছেন, মানুষের ওপর প্রাথমিক ও মধ্যপর্যায়ের সম্মিলিত পরীক্ষায় প্রতিরোধী প্রতিক্রিয়াও দেখিয়েছে বিবিআইবিপি-করভি ভ্যাকসিন। জানা গেছে, এটি এরই মধ্যে চীনে জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পেয়েছে। জরুরি কর্মসূচির অধীনে থাকা দেশটির গুরুত্বপূর্ণ কর্মী ও সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে এ ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। খবরে বলা হয়, বিবিআইবিপি-করভি ভ্যাকসিনটি দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় মারাত্মক কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এতে সামান্য সর্দি, হালকা জ্বর বা ইনজেকশন দেওয়ার জায়গায় সামান্য ব্যথা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার মেডিকেল জার্নাল ‘ল্যানসেট’-এ ভ্যাকসিনটির গবেষণাসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে। জানা গেছে, গত ২৯ এপ্রিল থেকে ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের যৌথ পরীক্ষায় ৬০০ জনের ওপর ভ্যাকসিনটির পরীক্ষা চালানো হয়। বিভিন্ন দলের মানুষের ওপর তিনটি পৃথক ডোজে এটি দেওয়া হয়। এতে সবার শরীরে অ্যান্টিবডি (প্রতিরোধী ক্ষমতা) তৈরি হতে দেখা গেছে। বয়স্কদের শরীরেও এতে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। তবে ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি স্তর কম ও দেরিতে শুরু হয়। সিএনবিজির তৈরি বিবিআইবিপি-করভি ভ্যাকসিনের আরেকটি সংস্করণ চীনের বাইরে পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। ওই ভ্যাকসিনও চীনের জরুরি টিকা কর্মসূচিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। সিএনবিজির একজন নির্বাহী গত মাসে বলেছিলেন, এই দুটি ভ্যাকসিন সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য শর্তাধীন অনুমোদন পেতে পারে। গত আগস্ট মাসে এক গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়, সিএনবিজির অন্য ভ্যাকসিনটি দ্বিতীয় ধাপে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই অ্যান্টিবডি তৈরি করেছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী কমপক্ষে ১০টি করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন পরীক্ষার তৃতীয় ধাপে রয়েছে। এর মধ্যে সিএনবিজির ভ্যাকসিন প্রকল্প অন্যতম। এ নিয়ে মোট চারটি চীনা ভ্যাকসিন তৃতীয় ধাপে রয়েছে।

হেপাটাইটিস সি-তে আক্রান্ত হলে করনীয়

হেপাটাইটিস সি–কে বলা হয় নীরব ঘাতক। বিশ্বে যকৃতের সিরোসিস ও যকৃতের ক্যানসারের অন্যতম কারণ হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের সংক্রমণ। বিশ্বজুড়ে সাত কোটির বেশি মানুষ এ ভাইরাসের সংক্রমণজনিত জটিলতার শিকার বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ২০ লাখ মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত। দেশে দিনে দিনে এ ভাইরাসে আক্রান্তের হার বেড়েই চলেছে।

হেপাটাইটিস সি-তে আক্রান্ত হলে যা হয়

শরীরে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটলে তা ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে যকৃতে স্থায়ী প্রদাহ তৈরি করে। একে বলে ক্রনিক হেপাটাইটিস সি। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে রোগের কোনো লক্ষণ থাকে না বললেই চলে। কিন্তু পরবর্তী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে এই রোগীদের প্রায় অর্ধেকই লিভার সিরোসিসের মতো মারাত্মক জটিলতায় আক্রান্ত হয়। অনেকেরই পরবর্তীকালে লিভার ক্যানসার দেখা দেয়, যার পরিণতি মৃত্যু। হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী অ্যালকোহল কিংবা মাদক সেবন করলে সিরোসিস কিংবা লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি বহুলাংশে বেড়ে যায়।

হেপাটাইটিস সি ছড়ায় যেভাবে

হেপাটাইটিস সি ভাইরাস মূলত ছড়ায় দূষিত রক্তের মাধ্যমে। এ ছাড়া আরও কিছু উপায়ে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াতে পারে। এর মধ্যে শিরাপথে মাদক সেবন, অনিরাপদ অস্ত্রোপচার, কান-নাক ফোঁড়ানো, খতনা ও উলকি বা ট্যাটু আঁকার কাজে অনিরাপদ যন্ত্রপাতির ব্যবহার, কিডনি বিকল হওয়া রোগীর ডায়ালাইসিস করানোর সময়, দাঁতের চিকিৎসায় অনিরাপদ যন্ত্রপাতির ব্যবহার, অনিরাপদ ও অরক্ষিত যৌন মিলন, হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত গর্ভবতী থেকে গর্ভজাত শিশুতে, একই টুথব্রাশ, শেভিং রেজার, ব্লেড একাধিক ব্যক্তি ব্যবহার অন্যতম।

সংক্রমণ শনাক্ত করা যায় যেভাবে

বর্তমানে আমাদের দেশে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে হেপাটাইটিস সি শনাক্তকরণ পরীক্ষার আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে। এসব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে স্বল্প খরচে এবং বিশেষ ক্ষেত্রে বিনা মূল্যে হেপাটাইটিস সি-এর শনাক্তকরণ পরীক্ষা করানো যায়। অ্যান্টি এইচসিভি ও হেপাটাইটিস সি ভাইরাস আরএনএ (পিসিআর টেস্ট) পরীক্ষার মাধ্যমে শরীরে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের সংক্রমণ রয়েছে কি না, তা শনাক্ত করা যায়।

চিকিৎসা

হেপাটাইটিস সি-এর কার্যকর কোনো ভ্যাকসিন বা টিকা নেই। এত দিন এই রোগের প্রধান ওষুধ ছিল একধরনের বিশেষ ইনজেকশন, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এতে হেপাটাইটিস সি নিরাময়ের হারও কম। তবে বর্তমানে মুখে খাওয়ার ওষুধ (ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল) পাওয়া যায়, যা সহজলভ্য ও তুলনামূলক সাশ্রয়ী। এই নতুন ওষুধের কল্যাণে হেপাটাইটিস সি ভাইরাস নিরাময়ের সম্ভাবনা ৯৫ শতাংশের বেশি।

হেপাটাইটিস সি প্রতিরোধে সচেতনতা

  • নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন নিশ্চিত করা।
  • রক্ত দেওয়ার আগে রক্তদাতার হেপাটাইটিস সি পরীক্ষা করানো।
  • এক সিরিঞ্জের একাধিক ব্যবহার পরিহার করা।
  • অস্ত্রোপচারে জীবাণুমুক্ত যন্ত্রপাতি ও সুচ-সুতার ব্যবহার।
  • অন্যের ব্যবহার করা টুথব্রাশ, ব্লেড, শেভিং রেজার ইত্যাদি ব্যবহার না করা।
  • নাক-কান ফোঁড়ানো, খতনা, ট্যাটু বা উলকি আঁকার কাজে জীবাণুমুক্ত যন্ত্রপাতির ব্যবহার।
  • হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত মায়ের গর্ভজাত সন্তানের জন্য যথাযথ প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা।
  • অনিরাপদ ও অরক্ষিত যৌন মিলনে বিরত থাকা।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা। তাই এ সম্পর্কে সচেতন থাকার বিকল্প নেই। সচেতন থাকতে প্রথমেই প্রয়োজন নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অতিরিক্ত ওজন, ধূমপান, মদ্যপান, তেল-চর্বিজাতীয় খাবার, অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ ইত্যাদি উচ্চ রক্তচাপের প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। মানুষকে উচ্চ রক্তচাপ বিষয়ে সচেতন করতে ১৭ অক্টোবর বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস পালন করা হয়। প্রতিপাদ্য ছিল: আপনার রক্তচাপ জানুন, নিয়ন্ত্রণ করুন, দীর্ঘদিন বাঁচুন। চিকিৎসক তানিয়া আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক এস এম মোস্তফা জামান। অনুষ্ঠানের শুরুতেই অধ্যাপক এস এম মোস্তফা জামানের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কোন অবস্থায় বলা যাবে একজন ব্যক্তি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। তিনি জানান, সাধারণভাবে কারও রক্তচাপ যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে তাহলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলে। কিন্তু কেউ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে তা বলার আগে বেশ কিছু বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। যেমন অন্তত এক সপ্তাহ ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকবার রক্তচাপ মাপতে হবে। এরপর যদি দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে রক্তচাপ বেশি তবেই বলা যাবে তিনি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। অবশ্যই বসে রক্তচাপ মাপা উচিত, শরীর ও মন শান্ত অবস্থায় থাকে এমন সময় বেছে নেওয়া উচিত। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রথমবার মাপাতেই রক্তচাপ অনেক বেশি, যাকে বলে ম্যালিগন্যান্ট হাইপারটেনশন। এ ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। উচ্চ রক্তচাপের অনেক রোগী রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকলে ওষুধ সেবন বন্ধ করে দেন। এ বিষয়ে অধ্যাপক এস এম মোস্তফা জামান বলেন, ‘এমন ঘটনা আমরা প্রায়ই দেখে থাকি। অনেক রোগীই ডাক্তারকে না জানিয়ে হঠাৎ ওষুধ সেবন বন্ধ করে দেন; যা একেবারেই ঠিক নয়। উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ হঠাৎ বন্ধ করলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, এমনকি জীবনের ঝুঁকিও থাকে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়। রোগী বলছেন রক্তচাপ বাড়তি থাকলেও আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না, এমন অজুহাতে কেউ কেউ ওষুধ খাওয়া বন্ধ করতে চান। আসলে উচ্চ রক্তচাপে তেমন কোনো উপসর্গ না থাকলেও এটি ধীরে ধীরে হৃদ্‌রোগ, পক্ষাঘাত, দৃষ্টিহীনতা ও কিডনি বিপর্যয়ের ঝুঁকি বাড়ায়। দীর্ঘমেয়াদি এবং বড় ধরনের জটিলতা এড়াতেই ওষুধ দেওয়া হয়।অনেকেই বলেন, “একবার ওষুধ শুরু করলে সারা জীবন খেতে হবে। তাই শুরু না করাই ভালো।” এ চিন্তাও বিপজ্জনক। যদি একবার নিশ্চিত হওয়া যায় কারও উচ্চ রক্তচাপ হয়েছে। তাহলে তাকে অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব ওষুধ শুরু করতে হবে। না হলে জটিলতা বাড়বে।’ অনুষ্ঠান চলাকালে দর্শকেরাও উচ্চ রক্তচাপ–সম্পর্কিত নানা বিষয়ে জানতে চান। এ সময় বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেন অধ্যাপক এস এম মোস্তফা জামান। এর মধ্যে তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন জীবনযাপন পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণে। তাঁর মতে, ‘উচ্চ রক্তচাপের অনেক কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে মানসিক চাপ, উদ্বেগ ইত্যাদি। তবে অনেকই ভাবেন কেবল মানসিক উৎকণ্ঠা উচ্চ রক্তচাপের একমাত্র কারণ। এ ধরণাটিও ভুল। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অতিরিক্ত ওজন, ধূমপান, মদ্যপান, তেল-চর্বিজাতীয় খাবার, অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ ইত্যাদি উচ্চ রক্তচাপের প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। জীবনাচরণ পরিবর্তন করে রক্তচাপ বাড়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। আর ওষুধ সেবনের বেলায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আমাদের দেশের অনেকেই ফার্মেসিতে গিয়ে দোকানির কাছ থেকে অথবা নিজের ইচ্ছেমতো ওধুষ কিনে খেয়ে থাকেন। যেকোনো অসুখের ক্ষেত্রেই এটি বিপজ্জনক।’