করোনাকে জয় করলেন বিশ্বের সাবেক সবচেয়ে স্থূল ব্যক্তি!

মেক্সিকোর সেই হুয়ান পেদ্রো ফ্রাঙ্কো, যিনি এক সময় ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে স্থূল ব্যক্তি ছিলেন। অনেক প্রচেষ্টায় সেই অবস্থা থেকে কিছুটা উতরে উঠেছেন। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও পালমোনারির জটিলতায় ভুগছেন তিনি। এমন অবস্থায়ও তিনি জয় করলেন করোনাভাইরাসকে। অতিরিক্ত ওজনের কারণে এক সময় মরণদশা অবস্থা ছিল তার। ওজন দাঁড়িয়েছিল ৫৯৫ কেজি, মেরু অঞ্চলের পুরুষ ভালুকের চেয়ে বেশি। শরীরের অবিশ্বাস্য ওই জনের জন্যই ২০১৭ সালে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস বুকে নাম উঠেছিল তার। তবে বেঁচে থাকার ছাড়েননি ফ্রাঙ্কো। কয়েক বছর ধরে ডায়েট, ব্যায়াম ও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পাকস্থলী ছোট করে ওজন অনেকটা কমিয়ে এনেছেন। বর্তমানে তার ওজন প্রায় ২০৮ কিলো। ৩৬ বছর বয়সী ফ্রাঙ্কো সম্প্রতি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। শরীরে নানা ধরনের জটিলতা থাকায় নতুন এই রোগটি মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়েছিল তার জন্য। করোনা থেকে সেরে ওঠা নিয়ে মধ্য মেক্সিকোর আগুয়াস্কালিয়েন্তেস নিজের বাড়ি থেকে ফ্রাঙ্কো এএফপিকে বলেন, “এটা খুবই আক্রমণাত্মক রোগ। জ্বরের সঙ্গে আমার মাথা ব্যথা ছিল, শরীর ব্যথা ছিল, শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল। আমি খুবই ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তি ছিলেন। ” ফ্রাঙ্কোর স্থূলতা কমানো নিয়ে চিকিৎসক দলের প্রধান চিকিৎসক আন্তোনিও কাস্তানেদা বলেন, “যেসব রোগী ডায়বেটিসে আক্রান্ত, যারা উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টে সমস্যা রয়েছে তাদের গুরুতর জটিলতায় ভোগার সম্ভাবনা রয়েছে। ” এদিকে, ফ্রাঙ্কো করোনাভাইরাস থেকে সেরে উঠলেও ছোঁয়াচে এই রোগে মারা গেছেন তার ৬৬ বছর বয়সী মা ফ্রাঙ্কো। তার বিশ্বাস, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিস বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণেই করোনা থেকে আরোগ্য লাভ করেছেন তিনি। করোনাভাইরাসে পর্যুদস্ত দেশগুলোর মধ্যে মেক্সিকো অন্যতম। প্রায় ৭৫ হাজার মৃত্যুতে বৈশ্বিক তালিকায় চতুর্থস্থানে আছে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের দেশটি। আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ৭ লাখ ১০ হাজার। স্থূল শিশুদের দিক থেকে দেশ হিসেবে মেক্সিকোর অবস্থান বিশ্বের শীর্ষে। আর স্থূল প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষদের মধ্যে দেশটির অবস্থান দ্বিতীয়। করোনায় এখন পর্যন্ত মেক্সিকোতে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের অধিকাংশই উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিস ও স্থূলতার সমস্যা ছিল। সূত্র: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু!

করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) চতুর্থ একটি ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (এনআইএইচ)। বুধবার এই ঘোষণা দেয়া হয়। জেনসেনের কোভিড-১৯ টিকা জেএনজে-৭৮৪৩৬৭২৫-এর একটি ডোজ প্রয়োগ করার পর তা কোভিড-১৯-এর উপসর্গ রোধ করতে পারবে কি না তা মূল্যায়ন করতেই প্রাপ্তবয়স্ক স্বেচ্ছাসেবীদের অংশগ্রহণে এ পরীক্ষাটি চালানো হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের প্রায় ২১৫টি গবেষণা কেন্দ্রে ৬০ হাজারের মতো স্বেচ্ছাসেবী এ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। জনসন অ্যান্ড জনসনের আওতাধীন জেনসেন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এ ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করেছে এবং বিধি অনুযায়ী তারা তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ টিকার জন্য এটি বড় পরিসরে তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের চতুর্থ ঘটনা। বাকি তিনটি পরীক্ষার টিকাগুলো হলো- অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও তাদের কোম্পানি ভ্যাসিটেক উদ্ভাবিত এজেডডি১২২২, ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকসাচ ডিজিজ (এনআইএআইডি) ও মার্কিন বায়োটেকনোলজি কোম্পানি মডার্না আবিষ্কৃত এমআরএনএ-১২৭৩ এবং মার্কিন বায়োফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ফাইজার ও জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেক উদ্ভাবিত বিএনটি১৬২বি২। কোভিড-১৯ রোধে অন্য টিকাগুলোর দুই ডোজ দেয়ার দরকার হলেও জেনসেনের টিকাটি এক ডোজ প্রয়োগে কাজ সারার মতো করে তৈরি করা হচ্ছে। সূত্রঃ প্রথমআলো।

দেহঘড়ি-সুপারম্যানীয় মস্তিষ্কের কথা

আচ্ছা আমাদের মস্তিষ্কে নিউরনের সংখ্যা কত? গুগল মামাকে জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয় ১০০ বিলিয়ন! এই ১০০ বিলিয়ন নিউরনের প্রতিটি নিউরন আবার গড়ে ৭ হাজারটি সিন্যাপটিক সংযোগের মাধ্যমে অন্য নিউরনের সঙ্গে সংযুক্ত। তাহলে মানব মস্তিষ্কের মোট সিন্যাপসের সংখ্যা কত দাঁড়ায়? হিসাবটা আপনাদের ওপরই ছেড়ে দিলাম। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সিন্যাপসের সংখ্যাও নাকি কমতে থাকে! তারপরও একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের মোট সিন্যাপসের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০০-৫০০ ট্রিলিয়নের মতো! দুঃখের ব্যাপারটা হলো, এত শত নিউরন আর এত সিন্যাপস থাকা সত্ত্বেও আমরা নাকি মস্তিষ্কের কেবল ১০ শতাংশ ব্যবহার করি! এটা একটা কথা হলো? যেখানে ডলফিনের মতো প্রাণীরা নাকি মস্তিষ্কের ২০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যবহার করে থাকে! মস্তিষ্কের এত বেশি ব্যবহার করতে পারার কারণেই হয়তো তাদের নিজেদের মাঝে উচ্চ তরঙ্গ ব্যবহার করে যোগাযোগ করতে পারার ক্ষমতা রয়েছে। আচ্ছা এমন যদি হতো, মানুষ তার মস্তিষ্কের ১০০ শতাংশ ব্যবহার করতে পারত? তাহলে কী হতো?

ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতালের ১২ বছর পূর্তি উপলক্ষে আগামী ২৫ শে সেপ্টেম্বর ফ্রি হেলথ ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছে।

বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস ও ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতালের ১২ বছর পূর্তি উপলক্ষে আগামী ২৫ শে সেপ্টেম্বর ২০২০ রোজ – শুক্রবার, নাদির হোসেন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি ফ্রি হেলথ ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত হেলথ ক্যাম্প উদ্বোধন করবেন কশবা মাজাইল ইউনিয়ন পরিষদের সন্মানিত চেয়ারম্যান, জনাব মোঃ কামরুজ্জামান এবং বিনামুল্যে চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ দিবেন বিশিষ্ট বাত,ব্যথা ও প্যারালাইসিস রোগে ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ ডাঃ এম ইয়াছিন আলী কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান-ফিজিওথেরাপি বিভাগ, প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, চেয়ারম্যান – ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা। যেসব রোগের চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ দেওয়া হবে- * ঘাড় ব্যাথা। * কোমর ব্যাথা। * হাঁটু ব্যাথা। * হাত ও পা ঝিনঝিন বা অবশ অবশ মনে হওয়া। * যে কোন প্রকারের বাত ব্যাথা ও জয়েন্টের রোগ সমূহ। * স্ট্রোক বা অন্য কারনে মুখ বেকে যাওয়া * স্ট্রোক পরবর্তী প্যারালাইসিস। * সকল ধরণের প্যারালাইসিস রোগের চিকিৎসা। * সাইটিকা ও মেরুদণ্ডের বিভিন্ন রকম সমস্যা * শিশুদের হাত পায়ের সমস্যা ও জন্মগত বিকলাঙ্গতা । *খেলাধুলায় আঘাত জনিত ব্যাথা ইত্যাদি রোগের চিকিৎসা সেবা পরামর্শ । স্থানঃ নাদির হোসেন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ রোগী দেখার সময়ঃ সকাল ৯.০০ টা থেকে বিকেল ৩.০০ পর্যন্ত। ফ্রি রেজিস্ট্রেশন জন্য যোগাযোগ করুন – ০১৭৬১১৮৫৯৬৭

মাথার ত্বকের নানা সমস্যা!

মাথার ত্বক বিশেষ ধরনের। কারণ, এতে হেয়ার ফলিকল, স্বেদগ্রন্থিসহ নানা বাড়তি উপাদান থাকে। এই ত্বকে কিছু বিশেষ ধরনের সমস্যাও হতে পারে। খুশকি: খুশকি বা ড্যানড্রাফ হলো মাথার ত্বকের একটি বিশেষ সমস্যা। এ সমস্যায় ত্বকের মৃত কোষগুলো সাদা সাদা গুঁড়া অথবা অনেক সময় টুকরার মতো উঠে আসে। ছত্রাকের সংক্রমণ থাকতে পারে এর সঙ্গে। চুলকানি হতে পারে অথবা ত্বক লাল হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শে কিটোকোনাজল শ্যাম্পু ও অন্যান্য চিকিৎসা নিলে ভালো থাকা যায়। সেবোরিক ডার্মাটাইটিস: খুশকি আরও তীব্র আকার ধারণ করলে, মাথার ত্বক লাল ও ক্ষতের মতো হয়ে গেলে, ত্বক টুকরার মতো উঠে এলে, তাকে সেবোরিক ডার্মাটাইটিস বলে। ভ্রু ও মুখের ত্বকেও এ সমস্যা হতে পারে। এ সমস্যায় তৈলাক্ত ত্বক বা ব্রন বেশি দেখা যায়। রিং ওয়ার্ম: শিশুদের মাথার ত্বকে ছত্রাকের সংক্রমণ হয়ে ছোট জায়গায় গোল বা ছোপ আকারে চুল উঠে আসতে পারে। লাল রাশের মতো হয়। এটি সংক্রামক। আক্রান্ত ব্যক্তির তোয়ালে, টুপি, হ্যাট ইত্যাদি ব্যবহার করলে অন্যরাও আক্রান্ত হতে পারে। অনেক শিশু পোষা প্রাণী থেকে সংক্রমিত হয়। এ সমস্যা কাটাতে ছত্রাকরোধী মলম ও মুখে খাবার ওষুধ লাগে। ফলিকুলাইটিস: চুলের গোড়ায় বা হেয়ার ফলিকলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে তাকে ফলিকুলাইটিস বলে। এতে মাথার ত্বকের বিভিন্ন জায়গায় পুঁজভর্তি ছোট দানা হয়। শেভ বা ওয়াক্স করা থেকে এমনটা হতে পারে। এর চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের দরকার হয়। সোরিয়াসিস: সোরিয়াসিস শরীরের অন্যান্য স্থানের মতো মাথার ত্বককেও আক্রান্ত করতে পারে। এটি একটি জটিল ও মাল্টিসিস্টেম রোগ। এ সমস্যায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। উকুন: মাথার ত্বকে উকুন বা লাইস একটি পরিচিত সমস্যা। বিশেষ করে শিশুরা এতে ভোগে বেশি। বড় ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা না হলেও এটি বিরক্তিকর ও বিব্রতকর। পারমিথ্রিন ক্রিম বা শ্যাম্পু, আইভারমেকটিন ইত্যাদি ব্যবহার করে উকুন নিধন করা যায়। লেখকঃ অধ্যাপক মো. আসিফুজ্জামান, চর্মরোগ বিভাগ,গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ সূত্রঃ প্রথম আলো

হাত নিয়ে হেলাফেলা নয়!

হাত আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। নিত্যনৈমিত্তিক কাজগুলো আমরা হাত ছাড়া করতেই পারি না। এই হাতে হতে পারে নানা রকমের ব্যথা। হাতে ব্যথা হলে কী করা উচিত বা কোন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত, এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হলো এসকেএফ নিবেদিত স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ অনুষ্ঠান ‘করোনাকালে অসুখ-বিসুখ’–এর সপ্তম পর্বে। এবারের বিষয় ‘হাতে ব্যথা ও হাতে সমস্যার সার্জারি’। অতিথি হিসেবে ছিলেন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটো) সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মহিউদ্দিন। সঞ্চালনায় ছিলেন ডা. শ্রাবণ্য তৌহিদা। অনুষ্ঠানটি ১৮ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল এবং এসকেএফের ফেসবুক পেজ থেকে একযোগে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে হাতের বিভিন্ন রকম সমস্যা নিয়ে প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হয়। হাতের সমস্যা দুই রকম—একটি কনজেনিটাল বা জন্মগতভাবে হাতে কোনো ত্রুটি এবং অন্যটি অ্যাকোয়ারড, অর্থাৎ নিজে যে সমস্যা অর্জন করে। হাতের বেশির ভাগ সমস্যাই অ্যাকোয়ারড। হাতের ভেতরে রয়েছে হাড়, টেন্ডন, নার্ভ বা স্নায়ু, লিগামেন্ট আর আরটারি। হাতের ব্যথা বা সমস্যা হয়ে থাকে এসব অংশের কোনো না কোনো সমস্যার জন্য। যেমন: আঘাতের কারণে হাতের হাড় ভেঙে যাওয়া, টেন্ডন বা লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়া। টেন্ডনে ইনজুরি হলে কেউ সহজে হাত ভাঁজ করতে পারে না। আবার হাতের নার্ভ বা স্নায়ুতে কোনো সমস্যা হলে এর অনুভূতি বা সক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। সে সময় হাত দিয়ে কিছুই করা যায় না। আবার রক্তনালিতে সমস্যা হয়ে হাতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে সম্পূর্ণ হাত অকেজো হয়ে যেতে পারে। হাতের যেকোনো চিকিৎসার জন্য হাতের ভালো সার্জন অথবা কোনো ভালো অর্থোপেডিক চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। হাতের যেকোনো সমস্যাকেই খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। আমাদের দেশে হাতের রগ কাটা খুব সাধারণ একটি সমস্যা। টেন্ডনটাকেই আমরা রগ বলে থাকি। এটি কেটে গেলে হাত নাড়াচাড়া বা ভাঁজ করা যায় না। কোনো আঘাতের পর যদি দেখা যায় কেউ ঠিকমতো হাত ভাঁজ করতে পারছে না বা কোনো আঙুল ভাঁজ করতে পারছে না, সোজা হয়ে আছে, তাহলে বুঝতে হবে ওই আঙুল বা হাতের রগ কেটে গিয়েছে। কারও রগ কেটে গেলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে, কারণ এর ওপর নির্ভর করে হাত ঠিক হবে কি না। ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে টেন্ডন জোড়া দিতে সার্জারির প্রয়োজন হয়। খুব কম ক্ষেত্রেই ওষুধের মাধ্যমে এটি সেরে যায়। অপারেশনের পর পুরোপুরি বা কত দিনে ঠিক হবে, তা নির্ভর করে রোগীর বয়স এবং আঘাতের কত সময় পর চিকিৎসকের কাছে আনা হলো, তার ওপর। সাধারণত, হাতের অন্য কোনো ফ্র্যাকচারের পর চিকিৎসকেরা হাতটিকে বিশ্রাম দিতে বলেন। কিন্তু রগ বা টেন্ডনের সার্জারি যেদিন হবে, তার পরের দিন থেকেই আস্তে আস্তে নাড়াচাড়া করার পরামর্শ দেওয়া হয়। একেক টেন্ডন ইনজুরির জন্য রয়েছে একেক রকমের নাড়াচাড়ার নিয়ম। যেমন হাতের সামনের অংশে টেন্ডন কেটে গেলে অন্য হাত দিয়ে সে হাত ভাঁজ করতে হবে এবং পরে একা একা সেই ভাঁজ খোলার চেষ্টা করতে হবে। এসব প্রটোকল না মানলে রগ জোড়া লাগলেও হাত ‘স্টিফ’ হয়ে যেতে পারে। এ কারণে রোগী সারা জীবনের জন্য হাত নাড়াচাড়া করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে। এ জন্য সার্জারির পর রোগীর উচিত হবে চিকিৎসকের পরামর্শ পুরোপুরি মেনে চলা। এ ধরনের চিকিৎসায় রোগী ও চিকিৎসকের মধ্যে যোগাযোগ ভালো হতে হবে। সার্জারির পরের প্রটোকলগুলো রোগী ঠিকমতো বুঝতে পেরেছে কি না এবং সেই অনুযায়ী চলছেন কি না, এ ব্যাপারগুলো চিকিৎসকেও নিশ্চিত হতে হবে। রোগী যদি বুঝতে না পারে বা ঠিকমতো কথা না শোনে, তাহলে সেটি ধৈর্যসহকারে বারবার বোঝানো চিকিৎসকের দায়িত্ব। হাতের যেকোনো আঘাতজনিত ব্যথার সঙ্গে প্লাস্টারের চিকিৎসা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কোনো রোগীকে প্লাস্টার দিতে গেলে চিকিৎসককে সতর্কতা অবলম্বন করতেই হবে। নিজের ইচ্ছেমতো প্লাস্টার বাঁধা যায় না। হাত বা পায়ের কোনো আঘাতে প্লাস্টারের দরকার হলে অবশ্যই সঠিক মাপজোখ করে তা লাগাতে হবে। একটু ঢিলা বা খুব বেশি টাইট হলে চলবে না। ঢিলা হলে সেই প্লাস্টারটি কোনো কাজেই আসে না। আর খুব বেশি টাইট হলে হাতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। পরে দেখা গেল হাতটি পুরোপুরি অকেজো হয়ে গেছে। এ ধরনের সমস্যা হলে শেষ পর্যন্ত হাত কেটে ফেলা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। তাই প্লাস্টার করার সময় চিকিৎসকের সর্বোচ্চ সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই। অনেকে হাতে কোনো ব্যথা পেলে কবিরাজের কাছে চলে যায়। পরে হাত ঠিক না হলে একদম শেষে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। ব্যথা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে এলে যে ফলটা পাওয়া যেত, তা অনেক দেরি করে গেলে পাওয়া মোটেও সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে সবাইকে বিশেষভাবে সচেতন হতে হবে। আমাদের দেশেই সরকারি হাসপাতালগুলোয় এখন স্বল্প খরচে নানা রকমের অর্থোপেডিক চিকিৎসা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। অনুষ্ঠানের শেষ দিকে ডা. মো. মহিউদ্দিন দর্শকদের হাতে ব্যথা–সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

সূত্রঃ প্রথম আলো

করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় ছুটি বা লকডাউন নয়

মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, ‘যদি করোনার দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয় তাহলে কিভাবে কাজ করতে হবে তার একটি প্রাথমিক পরিকল্পনা আমরা করেছি। শীতের সময় অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা বেশি থাকে। এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা এবং তাদের দ্রুত চিকিৎসার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয়বারের করোনা ধাক্কা সামলানোর জন্য ক্লিনিক্যাল দিকগুলো বিশেষজ্ঞরা দেখবেন। যদি রোগের বেশি বিস্তার ঘটে তাহলে আরো কী উদ্যোগ নিতে হবে তা আমাদের বিদ্যমান অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলিয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ দ্বিতীয় পর্যায়ের করোনার ধাক্কা সামলাতে সচেতনতাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। সবাই যাতে মাস্ক পরে, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখে—এ বিষয়গুলোর দিকে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, ‘দেশের বাইরে থেকে অনেক লোক দেশে আসছে, এ ব্যাপারে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা আছে, তা আরো জোরদার করা হবে। এ ছাড়া পিআইডি, তথ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ মসজিদগুলোর মাধ্যমে মানুষকে আরো সচেতন করা হবে। অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হবে। স্বাস্থ্য বিভাগের ইউনিয়ন পর্যন্ত কর্মচারী আছেন, তাঁরা এ বিষয়ে কাজ করবেন। গণমাধ্যমেরও একটা বড় ভূমিকা আছে। আমরা আশা করি বিগত দিনগুলোর মতো করোনা মোকাবেলায় সাংবাদিকরাও তাঁদের ইতিবাচক পদক্ষেপগুলো অব্যাহত রাখবেন।’ খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যমান করোনা ধাক্কা যখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিল তখন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের ধারণক্ষমতা ছিল সাড়ে তিন হাজারের মতো। সেখানে দেড় হাজারের বেশি রোগী আসেনি। এ জন্য আমরা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকার সুবিধা দুই হাজারের মতো রেখেছি। তবে যদি পরিস্থিতি খারাপের দিকে যায় তাহলে আমরা কোয়ারেন্টিন সুবিধা আরো বাড়াব।’ সূত্রঃ কালের কন্ঠ

কলোরেক্টাল ক্যানসারের উপসর্গ ও চিকিৎসা

অধ্যাপক ডা. মো. ইয়াকুব আলী খাদ্যনালির নিচের অংশগুলোর, বিশেষ করে সিকাম, কোলন, রেক্টাম ও পায়ুপথের ক্যানসারের নামই হলো কলোরেক্টাল ক্যানসার বা বৃহদন্ত্রের ক্যানসার। এই রোগের কারণ হিসেবে মন্দ খাদ্যাভাস, জেনেটিক বা পারিবারিক কারণ, সংক্রমণ, এডনোমা বা পলিপ, ইনফ্লেমেটরি বাওয়াল ডিজিজ, বাইল অ্যাসিড রস ইত্যাদিকে দায়ী করা হয়। গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে, শাকসবজি ও আঁশযুক্ত খাবার যেমন, লাল আটা, ফলমূল খেলে ক্যানসার কম হয়। আবার মাংস, চর্বিজাতীয় খাবার, ফাস্ট ফুড, কম পানি পান ইত্যাদির সঙ্গে ক্যানসারের একটি যোগসূত্র রয়েছে। পরিবারে কেউ এ রোগে আক্রান্ত হলে পরবর্তী বংশধরদেরও তা হতে পারে। তাই পরিবারে এই ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে আরও সচেতন হতে হবে। উপসর্গ মলদ্বারে রক্তক্ষরণ, অর্থাৎ মলের সঙ্গে রক্ত গেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পাইলস বলে সন্দেহ করা হয়। কিন্তু এটা ক্যানসারেরও লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে যদি কালচে পায়খানা হয়। মলত্যাগের অভ্যাসেও পরিবর্তন ঘটতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা মল পরিষ্কার না হওয়া, অল্প মল বের হওয়াও কলোরেক্টাল ক্যানসারের উপসর্গ। আবার কখনো কখনো, বিশেষ করে সকাল বেলা মিউকাস ডায়রিয়া হতে পারে। পেটব্যথা, বমি ইত্যাদি উপসর্গও থাকতে পারে। পেটে চাকা ও টিউমারের মতো অনুভূত হতে পারে। দুর্বলতা, রক্তশূন্যতা ও খাবারের অরুচি এ রোগের গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ। শনাক্ত হতে দেরি হলে অন্ত্র বা খাদ্যনালির বাইরে যেমন, যকৃৎ, ফুসফুস ও মস্তিষ্কে এ রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। তখন চিকিৎসায় আর সুফল না–ও পাওয়া যেতে পারে। রোগনির্ণয় কলোনোস্কপি ও বেরিয়াম এনেমা পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। কলোনোস্কপিতে কোনো টিউমার বা ক্ষত পাওয়া গেলে বায়োপসি করতে হবে। রোগ কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা বুঝতে সিটি স্ক্যানসহ আরও পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। চিকিৎসা কলোরেক্টাল ক্যানসারের নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা হলো অস্ত্রোপচার। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত হলে চিকিৎসায় বেশি সফলতা পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করা। তাই যেকোনো সন্দেহজনক উপসর্গ দেখা দিলেই সতর্ক হতে হবে। -প্রথমআলো

নভেম্বর-জানুয়ারি নিয়েই দুশ্চিন্তা!

শীতকালে বাড়তে পারে করোনা । সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে চলছে আলোচনা । নতুন রোডম্যাপ তৈরি করেছে সরকার । মাস্ক না পরায় ঝুঁকি বাড়ছে নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত শীত মৌসুমে করোনা সংক্রমণের হার বাড়ার আশঙ্কায় দুশ্চিন্তা বাড়ছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতপ্রধান দেশে করোনা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। শীতে সাধারণত যে কোনো ভাইরাসের স্থায়িত্ব বেশি থাকে। বাংলাদেশেও শীত মৌসুমে করোনা সংক্রমণ কিছুটা বাড়তে পারে। এজন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। এ নিয়ে কোনো শৈথিল্য প্রদর্শন করা যাবে না। করোনা কমে গেছে- এমন ভাবনায় মাস্ক না পরা কিংবা স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে করোনা ব্যাপকভাবে বাড়তে পারে। শীতকালে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থারও। সংস্থাটি এরই মধ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, আসছে শীতে করোনাভাইরাস মহামারী আরও মারাত্মক রূপ নিতে পারে। শীতের আগে থেকেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় করোনা সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করেছে। করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাভাইরাস শীতকালে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। কারণ এটি শীতকালে বেশি সক্রিয় হয়। করোনা ভ্যাকসিন এলেও মাস্ক পরতে হবে। প্রতিটি নাগরিকের ভ্যাকসিন পাওয়া নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ঝুঁকি আছে। দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করে না। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করা জরুরি।’ গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে শীতের সময় সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘শীতকাল আসন্ন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে। আমাদের এ মুহূর্ত থেকেই তা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।’ এর পরই ভাইরাসটি মোকাবিলায় শীতকালে কী করা যেতে পারে তা নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে জোর তৎপরতা শুরু হয়। সিনিয়র চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত সরকারের পরামর্শক কমিটি প্রকোপ বাড়ার শঙ্কা তুলে ধরে রোডম্যাপ তৈরির পরামর্শ দেয়। এর পরই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি পরিকল্পনা তৈরি করে। মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘শীতজনিত রোগের চিকিৎসার ওষুধ এবং ভ্যাকসিনের মজুদ ও সরবরাহ ঠিক রাখার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ সূত্র জানান, বাংলাদেশে শীতের সময় করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রকোপ আরও বাড়তে পারে বা দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে- এমন আশঙ্কা থেকেই সরকার ভাইরাসটি প্রতিরোধ ও চিকিৎসার ব্যাপারে একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। ঠান্ডাজনিত ফ্লুসহ নানা রোগ ও কভিড-১৯ এ দুই ভাগে ভাগ করে চিকিৎসার ব্যবস্থাপনা সাজানো হয়েছে। প্রথমত ঠান্ডাজনিত নানা রোগের চিকিৎসার ওষুধ বা ভ্যাকসিনের যাতে সংকট না হয় সেজন্য সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর কভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত যেসব হাসপাতাল রোগী না থাকায় অন্যান্য রোগের চিকিৎসার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, শীতের সময় সংক্রমণ বেড়ে গেলে সেগুলোকে আবার করোনা চিকিৎসায় ব্যবহারের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মুখে মাস্ক না পরলে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগের কথাও বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত বছর ডিসেম্বরে চীনে যখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয় তখন সেখানে প্রচন্ড শীত ছিল। শীতপ্রধান দেশগুলোতেও করোনার ভয়াবহতা লক্ষ্য করা যায়। এ কারণেই অনেকে বলছেন শীতে করোনা বাড়তে পারে। তবে গরমপ্রধান দেশগুলোতেও যে করোনা হচ্ছে না, তাও নয়। মধ্যপ্রাচ্যে গরম বেশি। সেখানেও করোনা সংক্রমণ আছে। বাংলাদেশেও যখন করোনা শুরু হয় তখন বেশ গরম ছিল। কিন্তু করোনার প্রভাব ততটা কমেনি। আবহাওয়ার সঙ্গে করোনার সম্পর্কের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি। তবে এটা গবেষণার পর্যায়ে আছে। এও ঠিক, করোনাভাইরাসের গতিবিধি পরিবর্তন হচ্ছে। আমাদের এখন সতর্ক থাকতে হবে বেশি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। বাইরে বেরোলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে এবং সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস ধরে রাখতে হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ বা ঢেউ বলতে বোঝায়, সংক্রমণ কমে যাওয়ার পর আবার বেড়ে যাওয়া। এটা ইউরোপের অনেক দেশেই হচ্ছে। আমাদের দেশে এটা নাও হতে পারে। কারণ কোরবানির সময় আমরা যে হারে আশঙ্কা করেছিলাম, তা কিন্তু হয়নি। বিজ্ঞানভিত্তিক কোনো তথ্য না থাকলেও আমাদের দেশের করোনা পরিস্থিতির সার্বিক অবস্থায় মনে হচ্ছে, করোনা বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম। এটা পর্যায়ক্রমে আরও কমে আসতে পারে। কিন্তু করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মানতে কোনো প্রকার শৈথিল্য প্রদর্শন করা যাবে না।’ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ঋতু পরিবর্তনের সময় করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। করোনা সংক্রমণের হার তুলনামূলকভাবে কমে যাওয়ায় মানুষ এখন আর স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। এখন এতটাই শৈথিল্য এসেছে যে, করোনাভাইরাস পরীক্ষা করানোর ব্যাপারেও তাদের আগ্রহ কমে গেছে। সবকিছুই স্বাভাবিকতায় ফিরে যাচ্ছে। ফলে সংক্রমণের সঠিক চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে সামনে সংক্রমণের হার আরও বাড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, সাধারণত শীত মৌসুমে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে। ফলে হাঁচি-কাশি দেওয়া হলে বাতাসে জীবাণুর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণাগুলো অনেকক্ষণ ধরে ভেসে থাকে। কিন্তু গরমের সময় সেটা দ্রুত ধ্বংস হয়ে যায়। শীতের সময় দীর্ঘ সময় বাতাসে থাকে। ফলে মানুষের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই করোনার জন্য শীত মৌসুম ঝুঁকিপূর্ণ। সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, পরীক্ষা বাড়ানোর জন্য সব সরকারি হাসপাতালে অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-এর সাবেক উপপরিচালক ডা. মুখলেসুজ্জামান হিরো বলেন, ‘চিকিৎসাবিজ্ঞানে করোনা সংক্রমণের প্রথম বা দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে স্বীকৃত কোনো কথা নেই। করোনা এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন অবস্থানের কারণে এটা দুর্বল হচ্ছে। পরিবেশগত কারণে কিংবা মানুষের চলাচল বেড়ে যাওয়া, স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে। এখন মানুষজন বলছে, করোনা নেই। করোনা চলে গেছে। এটা বলে মাস্ক না পরা, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে সভা-সমাবেশ, নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলে করোনা আবারও বাড়তে পারে। তবে সামনে শীতকাল। করোনা ঠান্ডায় বেশিদিন বেঁচে থাকে। করোনা শীতপ্রধান দেশেই বেশি। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এতটা সংকটজনক পরিস্থিতি নাও হতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে ভয় হলো, করোনা নেই বলে সবাই স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। এটাই নতুন করে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রধান কারণ হতে পারে।’ এদিকে আশাবাদের কথা জানিয়েছেন বিশিষ্ট ভাইরাস বিশেষজ্ঞ অণুজীববিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল। তিনি সম্প্রতি সিঙ্গাপুর যাওয়ার আগে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাংলাদেশে শীতের আগেই করোনা সংক্রমণের হার আরও কমে যাবে। আসন্ন শীতের মধ্যেই বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে অ্যান্টিবডি চলে আসবে। এতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হারও কমে যাবে। আমাদের দেশে লকডাউন কার্যকর না হওয়ায় করোনা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ভাইরাসও দুর্বল হয়ে পড়ে। এ কারণে অক্টোবর-নভেম্বরের মধ্যে আমাদের দেশের সিংহভাগ মানুষের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যাবে বলে আশি আশা করছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইউরোপ-আমেরিকায় ভিন্ন সমস্যা। কারণ তারা একটি গন্ডির মধ্যে সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। এতে ৮০ ভাগ মানুষ যে কোনো সময় আক্রান্ত হতে পারে। এত দিনে নিউইয়র্কে মাত্র ২০ ভাগ মানুষের মধ্যে ইমিউনিটি এসেছে।’

সূত্রঃ প্রথম আলো

মৃত্যু ছাড়াল ৫ হাজার

২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ১৫৫৭, মৃত্যু ২৮ দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ৬ মাস ১৪ দিনের মাথায় সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল ৫ হাজার। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ভাইরাসটির সংক্রমণে আরও ২৮ জনের মৃত্যু হওয়ায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৭ জন। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ হাজার ১৬৪টি নমুনা পরীক্ষায় আরও ১ হাজার ৫৫৭ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ১০ দশমিক ৯৯ শতাংশ। গত ৪ মের পর এটাই সর্বনিম্ন শনাক্তের হার। ওই দিনও শনাক্তের হার ছিল ১০ দশমিক ৯৯ শতাংশ। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩ লাখ ৫২ হাজার ১৭৮ জন। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২ হাজার ৭৩ জন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ২ লাখ ৬০ হাজার ৭৯০ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার এখন ৭৪ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪২ শতাংশ। মৃত ও সুস্থ হওয়া রোগী বাদ দিয়ে দেশে এখন শনাক্ত মোট করোনা রোগী আছেন ৮৬ হাজার ৩৮১ জন। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৩ হাজার ১১৭ জন। অন্যরা চিকিৎসা নিচ্ছেন বাড়িতে থেকে। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২৮ জনের মধ্যে ১৭ জন পুরুষ ও ১১ জন নারী। প্রত্যেকেরই মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে। এর মধ্যে ষাটোর্ধ্ব ছিলেন ১৩ জন। ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১ জন ও ১ জনের বয়স ছিল ১০ বছরের নিচে। মৃত ২৮ জনের মধ্যে ১৮ জন ঢাকা, ৪ জন চট্টগ্রাম, ৩ জন খুলনা এবং ১ জন করে রাজশাহী, সিলেট ও রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। প্রায় এক মাস পর ২০ এপ্রিল মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়ায়। মৃতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়ায় ২৫ মে, হাজার ছাড়ায় ১০ জুন, দেড় হাজার ছাড়ায় ২২ জুন, ২ হাজার ছাড়ায় ৫ জুলাই, আড়াই হাজার ছাড়ায় ১৭ জুলাই, ৩ হাজার ছাড়ায় ২৮ জুলাই, সাড়ে ৩ হাজার ছাড়ায় ১২ আগস্ট, ৪ হাজার ছাড়ায় ২৫ আগস্ট, সাড়ে ৪ হাজার ছাড়ায় ৭ সেপ্টেম্বর আর গতকাল ২২ সেপ্টেম্বর ছাড়িয়ে যায় ৫ হাজারের ঘর। এর মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়, যা এখন পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন।