করোনায় আক্রান্তদের অর্ধেকই উপসর্গহীন

করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের অর্ধেকেরই শরীরে এখনো কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ নেই। যাদের উপসর্গ বা লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে তাদের কেবল অবসন্নতা, মাথা ব্যথা ও কফ হয়েছে। ব্রিটেনে ১০ হাজার করোনা আক্রান্তের মধ্যে করা সমীক্ষায় এ ধরনের একটি চিত্র ফুটে উঠেছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, বাংলাদেশে উপসর্গহীন সংক্রমণ এখন প্রায়ই দেখা যাচ্ছে। কোনো উপসর্গ নেই কিন্তু অবসন্নতা, মাথাব্যথার কারণে মানুষ নিজে থেকেই পরীক্ষা করাতে এলে নিজেদের করোনায় আক্রান্ত হতে দেখছেন। এ অবস্থায় চিকিৎসকরা বলছেন, সবচেয়ে ভালো হয় ভাইরাসটি থেকে বেঁচে থাকা এবং বাইরে বের হলে অবশ্যই মানসম্পন্ন মাস্ক ব্যবহার করা। এ ছাড়া যথাসম্ভব ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে এবং ঘন ঘন হাত ধুয়ে নিতে হবে। হাত ধুতে না পারলে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত মুছে নিতে হবে এবং ঘন ঘন। একটু পর পর মুখে, নাকে ও চোখে হাত দিয়ে স্পর্শ করা বন্ধ করতে হবে। থুতু দিয়ে টাকা বা কাগজ গোনা বন্ধ করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গরমে ভাইরাসটির সংক্রমণ ক্ষমতা হ্রাস পায় না। এর প্রমাণ বাংলাদেশ ও ভারতের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া। গরম পানি পান করলেও ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না। কারণ এটি কোষে গিয়ে শরীরের ক্ষতি করে। এ কারণে গরম ভাপ নেয়ার দরকার নেই।

তারা বলছেন, ২০০৩ সালে জাপানে সার্স ভাইরাসের মহামারীর সময় তারা মুখে হাত দেয়া বন্ধ করে এবং হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলেছে। ফলে জাপানে সার্স ভাইরাসে সংক্রমণ কমে যায়। চিকিৎসকরা বলছেন, আমাদের উচিত র্হ্ডা ইমিউনিটি গড়ে তোলা। সে জন্য জনসংখ্যা ৭০ শতাংশ টিকার আওতায় আনতে হবে। ভারতের সিরাম থেকে টিকার প্রথম চালানের পর দ্বিতীয় চালানে অর্ধেকেরও কম টিকা এসেছে। এরপর মার্চ মাসে আরেকটি চালান আসার কথা থাকলেও তারা মার্চে আর কোনো টিকা পাঠায়নি। আমাদের উচিত টিকা সংগ্রহে অন্য কোম্পানিগুলোর সাথে যোগাযোগ করা এবং সিরামকে টিকা দিতে বাধ্য করা।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ৩০ বছরের নিচের কাউকে দেয়া যাবে না বলে ব্রিটেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধান সুপারিশ করেছেন। ৩০ বছরের নিচের বয়সীদের দেয়া হলে ভয়াবহ জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকাটি নিরাপদ, বয়স্কদের জন্য এটা বিশেষ উপকারী। তবে এই টিকাটি নিলে প্রতি ১০ লাখে একজনের রক্ত জমাট বাঁধার (ব্লাড ক্লট) আশঙ্কা রয়েছে। ব্রিটেনের ভ্যাক্সিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেন বিষয়ক যৌথ কমিটি বলছে, অতএব যারা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাদের উচিত দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে নেয়া তারা যে বয়সেরই হোক। কারণ করোনার বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য টিকাটি গুরুত্বপূর্ণ।

রক্তে স্বল্প পরিমাণ সাদা কণিকা থাকায় ব্রিটেনের যে গুটি কয়েকজনের রক্ত জমা বেঁধেছে কেবল তাদেরই উচিত দ্বিতীয় ডোজের টিকা না নেয়া। এর বাইরে অন্য সবারই উচিত দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেয়া। এ ছাড়া অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিলেই যে ব্লাড ক্লট হচ্ছে এর কোনো তথ্যভিত্তিক প্রমাণ নেই। যাদের এ ধরনের সমস্যা রয়েছে দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার আগে তাদের উচিত চিকিৎসকদের তা জানানো উচিত। ব্রিটেনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেয়ার পর যাদের চার দিনের বেশি মাথাব্যথা ও চোখে ঝাপসা দেখার সমস্যা থাকবে তাদের ধরে নিতে হবে যে তাদের ব্রেইনে ব্লাড ক্লটের একটি সংযোগ থাকতে পারে। কিন্তু এটা রক্তের অন্য শিরার বন্ধ (ব্লক) হওয়ার সাথে সম্পর্কিতও হতে পারে যার কারণে পা ফুলে যেতে পারে, টিকা নেয়ার স্থানটিতে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে। এ কারণে পেটে অথবা বুকে ব্যথা হতে পারে এবং একই সাথে শ্বাসকষ্টও হতে পারে। ব্রিটেনে প্রথম ডোজ টিকা নেয়ার পর যে ৭৯ জনের ব্লাড ক্লটের ঘটনা ঘটেছে সে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার পর কারো ব্লাড ক্লটের কোনো ঘটনা দেখতে পায়নি। জেসিভিআইয়ের প্রফেসর এডাম ফিন বলেন, প্রকৃত অবস্থার হয়তো পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার পর কোনো সমস্যা হয়েছে এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

প্রথম ডোজ নেয়ার পর যাদের ফ্লুয়ের মতো উপসর্গ দেখা দিয়েছে ব্রিটেনের বিশেষজ্ঞরা তাদের উদ্বিগ্ন হতে নিষেধ করেছেন। তারা বলছেন, টিকা নিলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে এটাই স্বাভাবিক। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ৪৮ ঘণ্টা পর এগুলো থাকে না। ব্লাড ক্লটের সমস্যার কারণে অনেকেই মনে করছেন তারা তাদের দ্বিতীয় ডোজে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেবেন না। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা এই কাজটি না করার পরামর্শ দিয়েছেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকা (ভারতের সিরামের তৈরি) টিকা দেয়া হচ্ছে। অন্য কোনো টিকা এখানে দেয়া হচ্ছে না। ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সি ৩ কোটি ৪০ লাখ টিকাগ্রহীতার মধ্যে ১৬৯ জনকে পেয়েছে যাদের সেরিব্রাল ব্রেইন থ্রম্বোসিস (সিভিএসটি) ৫৩ জনের স্প­্যানচনিক ভেইন থ্রম্বোসিস (এসভিটি) হয়েছে। ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সি এবং ব্রিটেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় উভয়েই বলেছে, রক্তে স্বল্প পরিমাণ সাদা কণিকার কারণে ব্লাড ক্লট হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *