কিডনি রোগীরা রোজা রাখতে পারবেন?

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রমজান একটি। এরইমধ্যে পবিত্র এই মাসের অর্ধেক পার হয়েছে। ইসলাম ধর্মমতে রোজা রাখা সব প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমের ওপর ফরজ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভৌগলিক কারণে রোজার সময়ে কম বেশি হয়।

সেই হিসেবে সব মুসলিমরা অল্লাহ ও রসুলের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে রোজা রাখে। পবিত্র কোরআন অনুসারে, যেসব রোগীর জন্য রোজা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে তাদের রোজা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এরপরেও দেখা যায় অনেক অসুস্থ রোগী নিয়ম করে প্রতিবছর রোজা রাখেন।

কিডনি টক্সিন নির্গত করার পাশাপাশি তরল এবং ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়াও কিডনি রোগে আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগীই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং ফ্লুইড ও ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে একাধিক ওষুধ খেয়ে থাকেন।

ডায়াবেটিস দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের অন্যতম প্রধান কারণ এবং এই রোগীরা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ খেয়ে থাকেন। তাই কিডনি রোগে আক্রান্ত সকল রোগীই রমজানের সময় রোজা রাখলে পানিশূন্যতা এবং উচ্চ রক্তচাপ এবং ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতার ঝুঁকি থাকে। এ ছাড়াও ডায়াবেটিস রোগীদের হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এগুলো কিডনির কার্যকারিতার পাশাপাশি সাধারণ স্বাস্থ্যের জন্য প্রাণঘাতী পরিণতি হতে পারে।

কিডনি প্রতিস্থাপন একটি অনন্য চিকিৎসা যা রোগীদের বাঁচিয়ে রাখে। তবে তাদের ওষুধের পাশপাশি কিছু নিয়ম আজীবন মেনে চলতে হয়। কিডনি প্রতিস্থাপন রোগীদের রোজা রাখা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। এদের মধ্যে প্রধান উদ্বেগের বিষয় হল ডিহাইড্রেশন এবং রোজার সময় পরবর্তী রেনাল হাইপোপারফিউশনের ফলে রেনাল ফাংশনের অবনতি হতে পারে। যেহেতু ট্যাক্রোলিমাস এবং এমএমএফ ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে নেওয়া হয়, তাই এই রোগীদের রমজান সময়ের প্রত্যাশায় প্রতিদিন একবার ট্যাক্রোলিমাস ফর্মুলেশন এবং অ্যাজাথিপোরিনে পরিবর্তন করার পরামর্শ দেওয়া হয়, বিশেষ করে যদি ১২ ঘণ্টার বেশি রোজা থাকে। এজন্য চিকিৎসকের থেকে পরামর্শ নিয়েই তারপর রোজা রাখতে হবে।

বেশিরভাগ গবেষণায় কিডনি প্রতিস্থাপনের রোগীদের মধ্যে রমজান মাসে তীব্র জটিলতার ফ্রিকোয়েন্সিতে কোন উল্লেখযোগ্য পার্থক্য পাওয়া দেখা যায়নি। যাদের কিডনি ফাংশন স্বাভাবিক তারা রোজা রাখতে পারবে। রমজানের সময় বা পরে রেনাল ফাংশন বা প্রত্যাখ্যান পর্বের কোন অবনতি দেখা যায়নি। তবে নেফ্রোলজিস্টদের মধ্যে মাঝারি থেকে গুরুতর কিডনির কার্যকারিতাসহ রোগীদের ওপর রোজার সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগ রয়েছে। এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তবে মাঝারি থেকে গুরুতর রেনাল ফাংশনসহ কিডনি প্রতিস্থাপন রোগীদের জন্য রোজার পরামর্শ দেওয়া হয় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *