আমরা প্রতিদিন যা খাই, সেই খাবারের পুষ্টিগুণ রক্তে মিশে যাওয়ার পর অবশিষ্টাংশ জমা হয় কোলনে। আর সেখানেই যদি কোষ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে, তাহলে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
সারা বিশ্বে যেসব ক্যান্সারের দাপট সবচেয়ে বেশি, সেগুলোর মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে কোলন ক্যান্সার। আমাদের দেশেও খুব একটা পিছিয়ে নেই এই রোগ।
ক্রমাগত বেড়েই চলছে এই রোগের প্রকোপ। অনেক সময়েই দেরিতে উপসর্গ দেখা দেয় বলে চিকিৎসার সময় পাওয়া যায় না। কিন্তু এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় দেখাচ্ছেন ক্যান্সার চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকদের মতে, উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগে কোলন ক্যান্সার শনাক্ত করা সম্ভব।
তার জন্য নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের প্রয়োজন। একাধিক ক্যান্সারের মতো কোলন ক্যান্সারের জন্যও স্ক্রিনিং হয়। আর যাদের উপসর্গ নেই, তাদের পরীক্ষা করে দেখা হয়, শরীরে কোলন ক্যান্সারের প্রকোপ শুরু হয়েছে কি না।
যাদের কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ নেই, তাদের শরীরেই স্ক্রিনিংয়ের পরীক্ষাগুলো করা হয়।
কোলন ক্যান্সারের জন্যও তাই স্ক্রিনিং করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। এগুলো রোগের সম্ভাব্য লক্ষণগুলো শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
যদি স্ক্রিনিংয়ে উদ্বেগজনক কিছু চোখে পড়ে, তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ সুপারিশ করবেন চিকিৎসক। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্য হাল আরো বিস্তারিত জানতে আরো কয়েকটি পরীক্ষার প্রয়োজন পড়তে পারে।
মলের দুইটি পরীক্ষা করে স্ক্রিনিং হয় বলে জানালেন চিকিৎসকরা।
স্টুল ফর অকাল্ট ব্লাড টেস্ট : মল দিয়ে রক্তপাত হচ্ছে কি না, সেটি পরীক্ষা করা হয়। খালিচোখে নজরে না না আসার ঝুঁকি থাকে বলে মাইক্রোস্কোপিক পরীক্ষা হয়। বছরে একবার পরীক্ষা করালেই হয়।
স্টুল ফর ফিকাল ডিএনএ টেস্ট : শরীরের ভেতরে ক্যান্সার থাকলে অস্বাভাবিক ডিএনএ তৈরি হয়। সেগুলো মলের সঙ্গে বের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মল পরীক্ষা করে দেখা হয়, অস্বাভাবিক ডিএনএ আছে কি না। তিন বছর অন্তর অন্তর এই পরীক্ষা করানো হয়।
এই দুইটি পরীক্ষা ছাড়াও কোলোনোস্কোপি করানোর পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক। দশ বছরে একবার এই পরীক্ষা করালেই হয়।
ক্যান্সার চিকিৎসক কখন শুরু করা উচিত
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, সাধারণত ৪৫ বছর বয়স থেকে কোলন ক্যান্সারের স্ক্রিনিং শুরু করা উচিত। তবে যাদের বংশে ক্যান্সারের ইতিহাস রয়েছে, বা জেনেটিক পরীক্ষার মাধ্যমে যাদের অস্বাভাবিক জিন শনাক্ত হয়েছে, তাদের আরো কম বয়স থেকেই শুরু করা উচিত।
প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের নিরাময় সম্ভব। কিন্তু একবার ক্যান্সার কোলনের বাইরে ছড়িয়ে পড়লে, তার চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এই কারণে ৪৫ বছর বয়স থেকেই নিয়মিত কোলোরেক্টাল ক্যান্সার স্ক্রিনিং করা প্রয়োজন।

Leave a Reply