শীতকালে শিশুর ডায়রিয়া কেন হয় জানেন কি?

শীতকালে ডায়রিয়ার লক্ষণ বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে শিশুদের। আর আমাদের দেশে বছরের দুই সময়ে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিক মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে বর্ষার আগে আগে, যখন তাপমাত্রা অনেক উত্তপ্ত থাকে। আর দ্বিতীয়ত শীতের আগে আগে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়া শুরু হয় এবং পুরো জানুয়ারি পর্যন্ত তা চলমান থাকে।

শীতে ডায়রিয়া হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে— রোটাভাইরাস ও নোরোভাইরাসের মতো ভাইরাসের সংক্রমণ, যা ঠান্ডায় বেশি ছড়ায় এবং মানুষ ঘরের ভেতরে বেশি থাকায় ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া তাপমাত্রা পরিবর্তন, দূষিত খাবার ও পানি এবং পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্রমে পরিবর্তনও শীতকালীন ডায়রিয়ার প্রধান কারণ।

শীতকালে ডায়রিয়ার কারণসমূহ

রোটাভাইরাস, নোরোভাইরাস এবং অ্যাডিনোভাইরাস শীতকালে বেশি সক্রিয় থাকে এবং পেটের সংক্রমণ ঘটায়। সে কারণে শীতে শিশুদের বেশি ডায়রিয়া দেখা দেয়। আর ঠান্ডায় খাবার সহজে নষ্ট না হলেও দূষিত পানি কিংবা খাবার থেকে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

এ ছাড়া শীতকালে মানুষ ঘরে বেশি থাকে। ফলে ভাইরাস সহজেই একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে পড়ে। আর হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তন হলে পরিপাকতন্ত্রে চাপ পড়ে। সে কারণে ডায়রিয়া হতে পারে। যদিও শীতকালে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনে হজম প্রক্রিয়া প্রভাবিত হয়।

এ বিষয়ে ডা. লুবাবা শাহরিন বলেছেন, শীতকালে যে আউটব্রেক দেখি, তা ভাইরাসের জন্য। এর মাঝে রোটাভাইরাস অন্যতম। এ ছাড়া আরও অনেক ভাইরাস আছে। যেগুলোর লক্ষণ রোটাভাইরাসের মতোই।

তিনি বলেন, শীতকালীন ডায়রিয়ার পেছনে যে কেবল রোটাভাইরাসই দায়ী, এ কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। আমরা কখনোই এটা খুঁজে বের করিনি যে, এই ডায়রিয়াটা রোটা দিয়ে হচ্ছে, নাকি অন্যকিছু দিয়ে হচ্ছে। কারণ এর একটা কমন প্যাটার্ন আছে। তা হলো— যে কোনো ভাইরাস দিয়েই আক্রান্ত হোক না কেন, এটি সেলফ-লিমিটিং; অর্থাৎ নিজে নিজে ভালো হয়ে যাওয়া। এই ডায়রিয়ার পেছনের কারণগুলোর মাঝে রোটাভাইরাস অন্যতম প্রধান ভাইরাস। তবে ডায়রিয়াটা এডিনো বা অ্যাস্ট্রো ভাইরাসের কারণেও হতে পারে। কিন্তু কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষণ আছে, যা দেখলে বোঝা যাবে ভাইরাল ইনফেকশন হয়েছে। যেমন— হালকা কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া, সামান্য জ্বর (১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো), থেমে থেমে বমি এবং মলে জলীয় অংশের আধিক্য। সবশেষ লক্ষণ দুটো যখন দেখা যাবে, তখন বুঝতে হবে যে, সে ভাইরাল ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সাধারণত হাতে ময়লা থাকলে বা হাত না ধুয়ে শিশুকে খাবার খাওয়ালে ভাইরাল ডায়রিয়া হয়। তবে রোগীকে যদি পরিপূর্ণ যত্ন ও চিকিৎসা প্রদান করা হয়, তাহলে এই ভাইরাল ডায়রিয়া সাত দিনের মাথায় ভালো হয়ে যায়।

সাধারণত শীতকালে শিশু মৃদু অসুস্থতা নিয়ে আসে। এ সময় শিশুর পানিশূন্যতা কম থাকে। এর অর্থ— আপনার শিশুকে বাসায় রেখে যদি স্যালাইন ঠিকমতো খাওয়ান, তখন হাসপাতালে আনার মতো অবস্থা হয় না।

কিন্তু গরমকালে ডায়রিয়া হলে অনেক শিশুর মারাত্মক পানিশূন্যতা দেখা দেয়। কারণ এ সময় আপনার শিশু অনেক বেশি ঘেমে যায়। তাই গরমকালে ডায়রিয়া হলে সেটি অনেক বেশি দুশ্চিন্তার।

ডা. লুবাবা শাহরিন বলেন, ভাইরাল ইনফেকশন শিশুদের মাঝে খুব সাধারণ একটা রোগ। দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা দুই-চারবার এ রকম ভাইরাল ইনফেকশনে ভোগে। এতে করে তার শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তাই এটা নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই।

তিনি বলেন, আর ডায়রিয়া চলাকালীন পরিমাণমতো ওরস্যালাইন খাওয়াতে হবে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভাইরাল ইনফেকশনের সময় আপনার শিশুর ডায়রিয়া হলে তাকে সঠিক পরিমাণে সালাইন দিতে হবে। শিশুর ওজন যত, প্রতিবার ডায়রিয়ার পর ঠিক তত চা চামচ পরিমাণ স্যালাইন খাওয়াতে হবে। আপনার শিশুর ওজন যদি আট কেজি হয়, তাহলে সে প্রত্যেকবার পায়খানার পর আট চা চামচ স্যালাইন খাবে।

তিনি আরও বলেন, ওরস্যালাইন একটা ওষুধ। এটা পরিমাণমতো খাওয়াতে হবে। এটা বানাতেও হবে একেবারে চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী। এ ক্ষেত্রে ওরস্যালাইন পানির বোতলে গুলিয়ে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত রেখে দিতে পারেন। এর মাঝে শিশুকে যতটুকু খাওয়ানোর কথা, তা খাইয়ে সময় পার হলে বাকিটা ফেলে দেব।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *