হার্ট সার্জারির আগে যে বিষয়গুলো অবশ্যই জানা উচিত

হার্টের সার্জারি সাধারণ কোনো চিকিৎসা না। ভালভ রিপ্লেসমেন্ট, বাইপাস সার্জারি বা অন্য যেকোনো কার্ডিয়াক অপারেশনই হোক না কেন, একজন রোগীর জীবনে হার্ট সার্জারি একটি বড় সিদ্ধান্ত ও বড় পরিবর্তনের সূচনা করে। এসময় রোগীর নিজস্ব ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কী ধরনের সার্জারি হতে চলেছে, আর তাতে ঝুঁকি কী, অপারেশনের আগে ও পরে কী করণীয়—এসব সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকলে সার্জারির সাফল্য যেমন বাড়ে, তেমনই জটিলতার ঝুঁকিও কমে।

হার্ট সার্জারির আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হলো আপনার নেওয়া সমস্ত ওষুধ সম্পর্কে চিকিৎসককে জানানো। প্রেসক্রিপশন ওষুধের পাশাপাশি অনেক সময় আমরা ব্যথানাশক, ভিটামিন, হারবাল সাপ্লিমেন্ট বা ঘরোয়া ওষুধ গ্রহণ করে থাকি। এগুলোর কিছু রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে বা অ্যানেস্থেশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে।

তাই সার্জারির আগে কোন ওষুধ চালু থাকবে, কোনটি বন্ধ বা কমানো দরকার—এই সিদ্ধান্ত চিকিৎসকই নেবেন। নিজের সিদ্ধান্তে কোনো ওষুধ বন্ধ করা বিপজ্জনক হতে পারে।

হার্ট সার্জারির জন্য মানসিক ও পারিবারিক প্রস্তুতিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। অপারেশনের পর কিছুদিন হাসপাতালে থাকতে হতে পারে এবং বাড়ি ফেরার পরও বিশ্রাম এবং সহায়তার প্রয়োজন হয়। তাই আগে থেকেই পরিবারের একজন সদস্য বা কেয়ারগিভারের ব্যবস্থা রাখা দরকার, যিনি দৈনন্দিন কাজে সাহায্য করতে পারবেন।

বাড়িতে আরামদায়ক পোশাক, সহজে ব্যবহারযোগ্য জিনিসপত্র এবং নিরাপদ চলাচলের ব্যবস্থা থাকলে রিকভারি অনেক সহজ হয়। পাশাপাশি নিয়মিত ফলো-আপ ভিজিট ও চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।

অনেক রোগী মনে করেন, সার্জারির পর সব সমস্যা শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে হার্ট সার্জারি হলো নতুন জীবনযাপনের শুরু। দীর্ঘমেয়াদে হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে হলে খাদ্যাভ্যাস, ওষুধ গ্রহণ, ব্যায়াম এবং মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ নজর দিতে হয়। কম লবণ ও কম চর্বিযুক্ত হৃদয়বান্ধব খাবার, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম, ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা এবং স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ—এসব অভ্যাস হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।

সার্জারির পর সুস্থ হয়ে ওঠা ধাপে ধাপে হয়। অপারেশনের জায়গা বা বুকের হাড় সেরে উঠতে সময় লাগে। প্রথম দিকে হালকা হাঁটা বা ছোটখাটো কাজ করা যেতে পারে। তবে ভারী জিনিস তোলা, ঝুঁকে কাজ করা বা হঠাৎ জোরালো ব্যায়াম কয়েক সপ্তাহ এড়িয়ে চলা জরুরি। কার্ডিয়াক রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম অনেক ক্ষেত্রেই রোগীদের ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সাহায্য করে।

হার্ট সার্জারির আগে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আপনি ঠিক কী ধরনের সার্জারির মধ্যে দিয়ে যাবেন, সেটি পরিষ্কারভাবে বোঝা। এটি কি ওপেন হার্ট সার্জারি, নাকি মিনিমালি ইনভেসিভ পদ্ধতি?

সম্ভাব্য ঝুঁকি কী হতে পারে—রক্তপাত, সংক্রমণ, হার্টবিটের সমস্যা বা স্ট্রোকের মতো জটিলতা হলে কী করবেন? এগুলো জানা থাকলে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা সহজ হয় এবং সচেতনভাবে সিদ্ধান্তও নেওয়া যায়।

প্রশ্ন করুন

সবশেষে, প্রশ্ন করতে কখনো দ্বিধা করবেন না। আপনার শরীর ও আপনার স্বাস্থ্য নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আপনারই। চিকিৎসকের দেওয়া নথি ভালো করে পড়ুন। যা বুঝতে অসুবিধা হয়, তা জিজ্ঞেস করুন এবং অপারেশনের আগে, সময়ে ও পরে কী হবে—সবকিছু পরিষ্কার করে নিন। সচেতন ও সক্রিয় রোগী হিসেবে আপনার অংশগ্রহণই হার্ট সার্জারির সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *