লিভার ক্যানসার প্রতিরোধ করতে চান? ৬ বিষয় মেনে চলুন

liver cancer

লিভার আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা বিষাক্ত পদার্থ থেকে মুক্তি, বিপাকক্রিয়া ও সামগ্রিক সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, স্থূলতা, মদ্যপান, হেপাটাইটিস বি ও সি, এবং অন্যান্য কারণে এই অঙ্গটি প্রভাবিত হয়, যা মারাত্মক ক্ষতি এবং শেষমেশ ক্যানসারের পথেও নিয়ে যেতে পারে।

এ নীরব কিন্তু বিপজ্জনক রোগ নিয়ে কথা বলেছেন ভারতের লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন ও হেপাটো-বিলিয়ারি বিশেষজ্ঞ ডা. বসন্ত মহাদেবাপ্পা। তিনি বলেন, জীবনযাপনে কিছু সহজ পরিবর্তন এনে লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, লিভার ক্যানসার ধীরে ধীরে বাড়ে এবং যখন উপসর্গ প্রকাশ পায়, তখন রোগ প্রায়ই শেষ ধাপে পৌঁছে যায়। তাই সচেতনতা, প্রতিরোধ এবং নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

লিভার ক্যানসার প্রতিরোধে ৬টি গুরুত্বপূর্ণ জীবনধারা

১) হেপাটাইটিস প্রতিরোধ ও টিকা গ্রহণ:

হেপাটাইটিস বি-এর টিকা বাংলাদেশসহ ভারতে বিনামূল্যে পাওয়া যায় এবং এটি লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া, হেপাটাইটিস বি ও সি স্ক্রিনিং, নিরাপদ ইনজেকশন, জীবাণুমুক্ত সূচ এবং সুরক্ষিত যৌন আচরণও গুরুত্বপূর্ণ।

২) অ্যালকোহল সীমিত করা বা এড়িয়ে চলা:

অ্যালকোহল লিভারের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং এর নিয়মিত সেবন লিভারের ক্ষতি করে, যা ক্যানসারে পরিণত হতে পারে। ডা. বসন্ত পরামর্শ দেন, অ্যালকোহল এড়িয়ে লেবু পানি বা নারকেল পানি পান করা যেতে পারে।

৩) স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা:

অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতা লিভারে ফ্যাটি লিভার তৈরি করে, যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার যেমন ওটস, মিলেট, শাকসবজি, ফল এবং নিয়মিত ব্যায়াম (যেমন হাঁটা, যোগব্যায়াম) এই ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

৪) আফ্লাটক্সিন থেকে বিরত থাকা:

ভুট্টা, বাদাম, ডাল ইত্যাদিতে ক্ষতিকর আফ্লাটক্সিন ছত্রাক জন্মাতে পারে, যা লিভারের জন্য বিপজ্জনক। এসব খাবার শুকনো ও সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা উচিত এবং বাজে গন্ধ পেলে ফেলে দেয়া উচিত।

৫) ধূমপান ও রাসায়নিকের ব্যবহার কমানো:

ধূমপান লিভারের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়, তাই এটি ত্যাগ করা উচিত। পাশাপাশি, কীটনাশক বা কঠোর ক্লিনার ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে।

৬) নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও স্ক্রিনিং:

প্রতি বছর অন্তত একবার লিভার ফাংশন টেস্ট ও আলট্রাসোনোগ্রাফি করা উচিত, বিশেষ করে যারা হেপাটাইটিস বা মদ্যপানের ইতিহাসে আক্রান্ত তাদের জন্য এটি অপরিহার্য।

লিভারের সুস্থতায় সহায়ক কিছু অভ্যাস:

> পর্যাপ্ত পানি পান করা

> তুলসি চা বা হার্বাল ড্রিংক পান করা

> প্রতিদিন ৭ ঘণ্টা ঘুমানো

> মেডিটেশন বা গভীর শ্বাসের মাধ্যমে স্ট্রেস কমানো

> অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করা

এই অভ্যাসগুলো লিভারের সুস্থতায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মনে রাখা উচিত, লিভার ক্যানসার একদিনে হয় না, বরং দীর্ঘদিন ধরে শরীরের ওপর চাপের ফলে এটি গড়ে ওঠে। তবে এটি প্রতিরোধযোগ্য, যদি আমরা টিকা, সুষম খাদ্য, ব্যায়াম, স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ, অ্যালকোহল পরিহার এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা মেনে চলি।